ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আজ ৩০ মে আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই শোকাবহ একটি দিন। ১৯৮১ সালের এই কালো রাতে চট্টগ্রামের অভিশপ্ত পুরোনো সার্কিট হাউসে ঘুমন্ত অবস্থায় দেশি-বিদেশি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ-এর কালজয়ী দর্শন ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্থপতি এবং ইতিহাসের রাখাল রাজা খ্যাত দেশের প্রথম নির্বাচিত সফল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম।
মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সততার প্রতীক। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে এদেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন না। জাতি যখন নেতৃত্বশূন্য দিশেহারা তখনই জিয়াউর রহমান উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আবির্ভূত হলেন। তার নাম সরকার পাঠ্যপুস্তকসহ সকল স্থাপনা থেকে মুছে ফেলেছে।
কিন্তু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার নাম মুছে ফেলা যাবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
গতকাল মঙ্গলবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৩৭তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার জীবনাদর্শ ব্যাখ্যা করে বলেন, আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা থেকেই জিয়াউর রহমানের জন্ম হয়েছে। যখন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে, তখন জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্মষতায় এসেছেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সততার প্রতীক। দেশে এমন কোনো ক্ষেত্রে নেই, জিয়াউর রহমান সাহেবের অবদান নেই। যারা সেদিন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছিল, তারাই আজকে দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকিয়ে রেখে এদেশের মানুষের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৭তম শাহাদতবার্ষিকীর শোকাবহ দিনটি স্মরণে বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দল বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করছে। আজ প্রাণপ্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করবে দেশের কোটি কোটি মানুষ। এ উপলক্ষে শেরে বাংলানগরের জিয়া উদ্যানে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত, কোনআন খানি, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, কালো পতাকা ও দরিদ্রদের মাঝে ইফতার বিতরণসহ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি ও এর অংগ সহযোগী সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক সংগে গাঁথা । ‘আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃ মহা বিপ্লব হেতু…।’ আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্রন্তিকালে বিদ্রোহী কবির ধুমকেতুর মতোই ত্রাতার ভূমিকায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি একজন সৈনিক থেকে ক্রন্তিকালে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ, যুদ্ধ শেষে সেনাবাহিনীতে ফিরে যাওয়া, ক্রান্তিকালে দেশের দায়িত্বগ্রহণ, প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হওয়া এবং সর্বোপরি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশের সমৃদ্ধির প্রতিটি েেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশপ্রেম ছিল সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ও ঈর্ষণীয়। তার দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট উদাহরণই হলো ‘বাংলাদেশ’। তার সততা নিয়ে তার চরম শত্র“ও কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। একজন সাধারণ মেজর হয়েও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সময়ে প্রাণ বাঁচাতে অনেকে যখন পালিয়ে গিয়েছিল এর বিপরীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে আজো দেশবাসীর হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন।
মহান এই দেশদরদী নেতা ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার নিভৃত পল্লী বাগবাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোরে তিনি কমল নামে পরিচিত ছিলেন। তার পিতা মনসুর রহমান সরকারি চাকরির জন্য প্রথমে কলকাতায় ও ’৪৭ সালে দেশ ভাগের পর করাচি শহরে অবস্থান করায় সেখানেই তার লেখাপড়া। শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। পাক-ভারত যুদ্ধে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসাবে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনি এই যুদ্ধে কোম্পানির সর্বোচ্চ খেতাব ও ১টি বিশেষ উপহার লাভ করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদার পাকবাহিনী মুজিব-ভুট্টো আলোচনারত অবস্থায় মারণাস্ত্র নিয়ে হঠাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে নিহত হয় হাজার হাজার মানুষ। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতারের পর পাকিস্তানে পাঠানো হয়। হানাদারদের অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। চট্টগ্রামে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান এ রাতেই ষোলশহরে সেনাবাহিনীর ৮ম ব্যাটালিয়নের সব বাংলাভাষী অফিসার ও জওয়ানকে ডেকে একত্র করে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ডাক দেন। মেজর জিয়ার এই আহবানে গোটা অষ্টম ব্যাটালিয়ন ব্যাপক সাড়া দিয়ে সৈনিক ও অফিসাররা উল্লসিত হয়ে ওঠে। পাকবাহিনীর আক্রমণে নিরস্ত্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়ে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মেজর জিয়া চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দিশেহারা গোটা জাতি। ‘আমি মেজর জিয়া বলছি…বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’ তার এই অবিস্মরণীয় অবিনাশী ঘোষণায় পথহারা মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে।
জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মেজর জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কর্নেল এমএজি ওসমানীকে এ দায়িত্ব অর্পণ করার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বৃহত্তর এলাকায় বীরত্বের সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তিনি চৌকস জেড ফোর্স গঠন ও পরিচালনা করেন। বীরত্বের সঙ্গে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর আবার ফিরে যান ক্যান্টনমেন্টে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক ক্ষমতা দখল করে প্রেসিডেন্ট হলে সেনাবাহিনীসহ গোটা জাতির ভাগ্যোন্নয়নে তখন বিরাজ করছিল চরম অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে খোন্দকার মুশতাককে পাল্টা আরেক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করে আধিপত্যবাদের ক্রীড়নকরা ক্ষমতা দখল করে। সে সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় নেতৃত্বশূন্য জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় সৈনিক-জনতা। দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান অল্প সময়ের মধ্যেই তলাবিহীন ঝুড়ির বদনামমুক্ত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি একদলীয় শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশে বাক-ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়া জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তার অন্যতম উপহার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তার সুশাসনে উদীয়মান এক অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আসন লাভ করে। জিয়াউর রহমান ছিলেন সমৃদ্ধ এবং উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও পথ-প্রদর্শক। তিনি বাংলাদেশকে অধিকতর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে দেশের সম্ভাবনার প্রতিটি দিককে উন্মোচনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা, নির্লোভ, নির্মোহ ও গভীর দেশপ্রেমসহ বহু সৎগুণ দিয়ে তিনি জাতির সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেন। স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি দেশগড়া কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার বলিষ্ঠ, গতিশীল ও পরিকল্পিত নেতৃত্বে দেশ সত্যিকার উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই দেশবাসীর প্রাণপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নেন। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপে বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অগ্রভাগে এনে দিয়েছিলেন। জিয়ার ঈর্ষণীয় এই জনপ্রিয়তা ও দেশপ্রেমই তার জন্য কাল হয়েছিল। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা চট্টগ্রামে তাকে হত্যা করলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদতে গোটা পৃথিবী শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এ শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শেরেবাংলানগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাজায়। লাখো লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাণী : “মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তনকারী, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ কালজয়ী দর্শনের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৭তম শাহাদতবার্ষিকীতে আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শহীদ জিয়ার অমøান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং দেশীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির রক্ষাকবচ।
তার জীবিতকালে জাতির চরম দুঃসময়গুলোতে জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার বীরোচিত ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা এবং রাষ্ট্র গঠনে তার অনন্য কৃতিত্বের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ’৭১ সালে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, অথচ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশেহারা, ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ মেজর জিয়ার কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে, ফলশ্রুতিতে দেশের তরুণ, ছাত্র, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাধীনতা-উত্তর শাসকগোষ্ঠীর দমনমূলক শাসন-শোষণের যাঁতাকলে মানুষের প্রাণ হয় ওষ্ঠাগত, দেশের মানুষের একের পর এক গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা হরণ করা হয়, দেশ একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক শাসনের নিষ্ঠুর কবলে পড়ে পিষ্ট হতে থাকে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়। সেই সময় দেশের সর্বত্র ভয়াবহ নৈরাজ্য নেমে আসে। গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে দেশের সিপাহী-জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করে ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন। উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে খাদ্য রফতানিকারক দেশে পরিণত করেন। ব্যক্তিজীবনেও দুর্নীতি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও সুবিধাবাদের কাছে আত্মসমর্পণকে তিনি ঘৃণা করতেন। তার অন্তর্গত স্বচ্ছতা তাকে দিয়েছে এক অনন্য ঈর্ষণীয় উচ্চতা। তার অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপিত হয়।
এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী শক্তি কখনোই মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অশুভ চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোনো ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে অবস্থান করেন। নিখাদ দেশপ্রেমিক এই মানুষটিকে কেউ কখনো তার বিশ্বাস থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। তিনি সারাজীবন আদর্শকে বুকে ধারণ করে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে গেছেন। : বর্তমান অনৈতিক সরকার একদলীয় সরকারের আদলে দেশ পরিচালনা করছে। কেন্দ্রীভূত স্বৈরতন্ত্রের প্রতিভূ বর্তমান সরকার। এরা নতুন কায়দায় পুরানো বাকশালকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভূলুন্ঠিত করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেজন্য দেশনেত্রীকে মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সাজানো মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। এ যেন গণতন্ত্রকেই কারাগারে আটকিয়ে রাখা। জনমনে ভয় আর আতঙ্ক সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালানো হচ্ছে। এমতাবস্থায় হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সকল গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আপোসহীন নেত্রী কারাবন্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আবারও তার নেতৃত্বে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভীক নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পটভূমিতে তার আদর্শ, দেশপ্রেম, সততা ও কর্মনিষ্ঠাকে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদতবার্ষিকী সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি আমি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।”
কর্মসূচি : মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৩৭তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজধানীর রমনাস্থ ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৩৭তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ মে ২০১৭ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। এছাড়াও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলাদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনও মরহুম নেতার শাহাদতবার্ষিকীতে পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। শাহাদতবার্ষিকীর অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে থাকছে- রক্তদান কর্মসূচি, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা। সারাদেশের মহনগর, জেলা ও উপজেলায়ও অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে।
দিনকালে মিলাদ : প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৭তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বাদ আসর দৈনিক দিনকালে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত মিলাদ মাহফিলে দৈনিক দিনকাল সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সততার প্রতীক : বিএনপি : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার জীবনাদর্শ ব্যাখ্যা করে বলেন, আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা থেকে জিয়াউর রহমানের জন্ম হয়েছে। যখন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে, তখন জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র মতায় এসেছেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সততার প্রতীক। দেশে এমন কোনো ক্ষেত্রে নেই, জিয়াউর রহমানের অবদান নেই। তাকে সবসময় আমাদের শুধু স্মরণ নয়, অনুকরণ করতে হবে। তার কাজগুলো যদি আমরা এগিয়ে নিয়ে আসি, সেভাবে চলতে চাই, চলতে পারি, তবেই আমরা সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবো। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাব না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করে নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় দেশে নির্বাচন হবে না। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দিত্বের জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা সেদিন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছিল, তারাই আজকে দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকিয়ে রেখে এদেশের মানুষের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে। মাদকের নামে পাখির মতো মানুষ মারা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় ১৫ দিনে সন্দেহভাজন ১০৬ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। আজ দেশের মানুষকে মাদকের নামে পাখির মতো গুলি করে মারছে। কারণ তারা পারছে না মাদকের ভয়াবহতা থেকে সমাজ-দেশকে মুক্ত করতে। কারণ আজ দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে। কোনো রাজনৈতিক দল বা গণতান্ত্রিক সরকারের শাসন চলছে না। আজ যে আওয়ামী লীগ কথা বলছে, তাদের নিজেদেরও কথা বলার অধিকার ছিল না। কারণ বাকশাল কায়েমের পর তাদেরও রাজনীতি করার অধিকার ছিল না। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে তাদের কথা বলার, রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। তারা দেশের মানুষের সব গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। আজ আমাদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। বিএনপি নেতা বলেন, আজ আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে নিরপে সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। এ দেশের সংবিধানের প্রথম কাটাছেঁড়া করেছে আওয়ামী লীগ। নিজেদের একদলীয় শাসন কায়েম করতে একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে সংবিধান পরিবর্তন করেছ। : সভায় প্রধান অথিতির বক্তব্য বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা মনে করি, এই আইন-আদালতের মাধ্যমে দেশনেত্রীর মুক্তি সম্ভব নয়। এই সরকারের পতনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আগামীতে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান খন্দকার মোশাররফ।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে এমন কোনো হীন উদ্দেশ্য নাই, যেটা আওয়ামী লীগ বাস্তবায়ন করছে না। এমনকি কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যবই থেকেও জিয়াউর রহমানের অবদান মুছে দিতে চাইছে। কিন্তু এসব করে জিয়াউর রহমানকে মুছে দেয়া যাবে না। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ সবকিছুতে ব্যর্থ হয়েছে। আর তারা যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে জিয়াউর রহমান সফল হয়েছেন। তিনি তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপ দিয়েছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তার অংশ হিসেবে এখন বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করে রেখেছে। তাই এর বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস আছে, এ জাতি গণআন্দোলন করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে বারবার। এবার তারা রাজপথে গণআন্দোলন করবে, জনগণের দল হিসেবে বিএনপি তাদের সঙ্গে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, মনে রাখতে হবে আগামী নির্বাচন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়া আনা ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি একই সূত্রে গাঁথা। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে জনগণের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। তাই সবার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচন নিরপে সরকারের অধীনে দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। ২০১৮-১৯ হবে গণতন্ত্রের বছর, বেগম খালেদা জিয়ার বছর, শহীদ জিয়ার আশা আকাক্সা বাস্তবায়নের বছর।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। তার মুক্তি ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। মতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে মওদুদ আহমদ বলেন, দেশের বর্তমান সংকট হাসিনা সরকারের তৈরি করা। এটি তৈরি হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে। এর থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করতে সবার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তার নেতৃত্বে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। : তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বৈশিষ্ট্যে কিছু সমস্যা আছে। তারা ধৈর্য ধরতে পারে না, অস্থির হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালেও তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এবারও মতায় এসে একই অবস্থায় ফিরে এসেছে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এখন আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা। এজন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে এখন থেকে সকলে প্রস্তুতি নিন। শুধু ‘জেলের তালা ভাঙবো’ ইত্যাদি স্লোগান শুনতে আর চাই না। রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিন। তিনি বলেন, আজ অনেক সাংবাদিক জিয়াউর রহমানের নামে কটু কথা বলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এনে না দিলে আপনাদের মতো সাংবাদিক খেয়ে বাঁচতে পারত না। আপনাদের আজ এখানে দেখা যেত না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করা আর আত্মহত্যা করা একই কথা। যেদিন আমরা নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারব, সেদিনই নির্বাচন হবে। তার আগে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে বিরোধী মতকে হত্যার পরও একদলীয় শাসনের শেষ রা হয়নি। ঠিক তখনই জনগণের সামনে আবার আসেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে। বিএনপি নেতা বলেন, আজ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র তো দূরের কথা, একদলীয় গণতন্ত্রও নেই। আছে শুধু এক ব্যক্তির গণতন্ত্র। কারণ র্যাবের ডিজি বলেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, ওবায়দুল কাদের বলেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, কী নির্দেশ? সেটি হলো মানুষ মারার নির্দেশ। মাদকের ভয়াবহতা অনেক বেশি, আমরা চাই সেটি নির্মূল হোক। কিন্তু এর মূল কারবারি হচ্ছে পুলিশ, এমপিরা; আগে তাদের বিচারের আওতায় আনুন। কিন্তু আপনার পুলিশকে ক্রসফায়ারে দেয়ার সেই সাহস কি আপনার আছে? আমরা সেটি চাই না। কারণ, হত্যা কখনো কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ধারণা ছিল জিয়া না থাকলে বিএনপি থাকবে না। সে চিন্তা থেকে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন চিন্তা বেগম খালেদা জিয়া না থাকলে বিএনপি থাকবে না, তাই তাকে আজ কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাই তাকে মুক্ত করতে হবে। তাকে মুক্ত করার আগে কে নির্বাচনে গেল, কে গেল না এসব নিয়ে চিন্তার কিছু নাই। যত সময় গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে না, ততণ বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, সে বিষয়ে আলোচনার কোনো অবকাশ আছে বলে মনে করি না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজপথে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আইনজীবীরা কী বলল না বলল, সেটা নিয়ে বসে থাকলে হবে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি নেতা বলেন, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কর্মী হবে আপসহীন। কারণ বেগম খালেদা জিয়া কারো কাছে মাথা নত করেননি। তার কর্মীরাও করতে পারে না। আমরা হাসিনার চোখ রাঙানি দেখে আত্মহত্যা করতে পারি না। তাই এখন আমাদের কাছে কোনো সময় নাই। সময় একটাই সেটি হলো কঠোর আন্দোলনের।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরে আরা সাফা, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বক্তব্য রাখেন। : অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, নাজমুল হক নান্নু, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল ইসলাম, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, আব্দুল আউয়াল খান, সহ-দফতর সম্পাদক তাইপুল ইসলাম টিপু, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদির হোসেন জসিম, শাহ মোহাম্মাদ নেছারুল হক, আবু নাসের মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, শামসুজ্জামান সুরুজ, ঢাকা মহানগর দণি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরাজ্জামান, যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল রিয়াদ, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহবুব মাছুম শান্ত, দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম, সহ- সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাছরিন উপস্থিত ছিলেন।