DMCA.com Protection Status
title="৭

যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ গোপনে কারামুক্ত!!!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  রাজধানী ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন হিসেবে পরিচিত দেশের এককালের শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ অত্যন্ত গোপনে কারামুক্ত হয়েছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তির আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্তাব্যক্তিদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। কিন্তু জোসেফের বেলায় তা অনুসরণ করা হয়নি বলে সূত্রের খবর।

তবে বরাবরের মতো এই মুক্তিতেও জোসেফ এর বড়ভাই সাবেক বিজিবি মহাপরিচালক এবং অবৈধ প্রধান মন্ত্রী হাসিনার অন্যতম আস্থাভাজন মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের যোগসাজস আছে বলে সংশ্লিষ্টগন ধারনা করছেন।


 উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেল থেকে গোপনে ছাড়া পান রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক ডন বিকাশ কুমার বিশ্বাস। অত্যন্ত গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের বেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত এ আসামির সাজা মওকুফ হওয়ার পর গত রবিবার রাতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জোসেফ। সেখান থেকেই মুক্তি পান ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই অন্যতম নিয়ন্ত্রক। যেদিন মুক্ত হন, সেদিন রাতেই তিনি দেশত্যাগ করেন বলে জানা গেছে। ঘনিষ্ঠ সূত্রমতে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাবেন এবং সেখানেই স্থায়ী হবেন। এ লক্ষ্যে তার প্রাথমিক গন্তব্য ভারত।

এ বিষয়ে জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমার দেখে (নথিপত্রাদি) বলতে হবে। না দেখে বলতে পারব না।’ তা হলে কি আপনার কাছে কোনো তথ্য নেই? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জি।’এরপর ডিআইজি প্রিজন (ঢাকা বিভাগ) তৌহিদুল ইসলামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’
১৯৯৯ সালের একটি হত্যাকান্ডের দায়ে জোসেফের মৃত্যুদন্ড হয়। হাইকোর্টও এ রায় বহাল রাখেন। পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। এখনো সেই সাজা ভোগ করা বাকি আছে প্রায় ২০ বছর। তার সম্ভাব্য মুক্তির তারিখ ছিল ২০৩৯ সালের ২৪ জানুয়ারি।


কারা সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে জোসেফের মা রেনুজা বেগম তার সন্তানের সাজা মওকুফে আবেদন করেন। ধারণা করা হচ্ছে, সাজা মওকুফের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর আনুষঙ্গিক কাজ অত্যন্ত গোপনে সেরে মুক্তি পান তিনি। এরও আগে অন্যান্য মামলায় আদালত তাকে জামিন দেন।জোসেফের মুক্তির বিষয়টি খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনেকেই বিষয়টি জানেন না। তবে অপরাধ জগতে তথ্যটি ছড়িয়ে গেছে।

 

২০ বছর আগে জোসেফকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তার নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, অবৈধ অস্ত্র বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১১টি মামলা হয়। কেবল একটি মামলা ছাড়া সবগুলোরই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে অনেক আগে।

১৯৯৬ সালে লালমাটিয়ায় মোস্তফা নামে ফ্রিডম পার্টির এক নেতাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ওই মামলা হয়েছিল। এ মামলা থেকে খালাস পেলেই কেবল জোসেফের কারামুক্ত হওয়ার কথা ছিল।
তোফায়েল আহমেদ জোসেফের বড় ভাই হারিস আহমেদের নামও রয়েছে পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়। হারিস এখন ইউরোপে বসবাস করেন। মাঝে মধ্যে ভারতে এলেও দেশে প্রবেশ করেন না। নব্বইয়ের দশকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তাদের আরেক ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু। সেই

হত্যাকান্ডের জন্য আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে দায়ী করা হয়।
এরশাদের শাসনামলে জোসেফের বড় ভাই হারিস আহমেদ নিজেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর তিনি নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের নেতা হিসেবে। ঢাকার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনার পদে নির্বাচনও করেছিলেন তিনি।জোসেফও এক সময় নিজেকে ছাত্রলীগের মোহাম্মদপুর থানার নেতা হিসেবে দাবি করতেন। তবে সংগঠনের কোনো পদে তিনি ছিলেন না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

কিডনিসহ বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত জোসেফ দীর্ঘদিন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে। গণমাধ্যমে এ নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হলে সেখান থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। পরে অসুস্থতা দেখিয়ে তাকে আবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!