ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্ত করার সম্ভাবনা দেখছেন না দলের নেতারা। তাই তার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য বড় ধরনের আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি। তবে কবে শুরু করবে সেই আন্দোলন তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না নেতারা।
গত শুক্রবার দলের চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসে স্থায়ী কমিটির দুই ঘণ্টার বৈঠকে এই প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতারা। কারাগারে যাওয়ার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি জামিন পাবেন বলে আশা করলেও চার মাসেও জামিন না পাওয়ায় হতাশ দলের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের আগেই খালেদা জিয়া জামিন পাবেন বলে আইনজীবীদের আশ্বাসে আশান্বিত ছিলেন দলের সিনিয়র নেতারাও। তবে বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত ২৪ জুন পর্যন্ত জামিন আবেদন স্থগিত করে দেওয়ায় দলের চেয়ারপারসনকে নিয়ে দুর্ভাবনা বেড়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আদালতকে প্রভাবিত করে সরকার খালেদা জিয়াকে জামিন দিচ্ছে না। তাকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছে। নানা প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন আটকে দিচ্ছে আদালত। এই অবস্থায় বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে কঠোর আন্দোলন ছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আন্দোলন করেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোনো আন্দোলন সফল হয় না। তাই জনগণকে সম্পৃক্ত করেই আন্দোলন করা হবে। তিনি বলেন, সরকার বেগম জিয়াকে নির্বাচন করতে দিতে চায় না। রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। এই অবস্থায় রাস্তায় তীব্র প্রতিবাদ করা ছাড়া উপায় নাই। এখন রমজান মাস, তাই আমরা রাস্তায়ও নামতে পারছি না। আমরা সিদ্ধান্ত নেব খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচি কী হবে, তা নিয়ে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কেবল আইনি লড়াইয়ে তাকে মুক্ত করা যাবে না। এজন্য রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এভাবে আন্দোলন করে তাকে মুক্ত করা যাবে না। তাকে মুক্ত করতে হলে কঠোর আন্দোলনের প্রয়োজন। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখন যা পরিস্থিতি তাতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। তাই আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। বিচার বিভাগকে সরকার প্রভাবিত করছে। তাই দেশের মানুষ মনে করে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। আমরাও মনে করি আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন না। এর জন্য কঠোর আন্দোলন প্রয়োজন। বিএনপি তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, একটি বৃহত্তর আন্দোলনের লক্ষ্যেই এগোচ্ছে বিএনপি। বিশ্বকাপ ফুটবল ও কোরবানির ঈদের পর বৃহত্তর সে আন্দোলনের সূত্রপাত হবে। তার আগে সাংগঠনিক সফর, দ্রুত সাংগঠনিক পুনর্গঠন, কূটনীতিক লবিং, বৃহত্তর রাজনৈতিক মোর্চা গঠনসহ নানা তত্পরতা জোরদার করে চাপ সৃষ্টি করা হবে সরকারের ওপর।
দলের নেতাদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাকে রাজনৈতিক মামলা দাবি করলেও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য প্রথম থেকে আইনি লড়াইকেই প্রাধান্য দিয়েছে বিএনপি। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অব্যাহত চাপ সত্ত্বেও রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে মানববন্ধন, অবস্থান, বিক্ষোভ-লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচিতেই সীমাবদ্ধ তারা।
দলের সিনিয়র নেতা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা প্রথমদিকে জামিনের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করলেও এখন তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে যান ৮ ফেব্রুয়ারি। ওই মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন এবং আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু আরো চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর মধ্যে কুমিল্লার দু’টি মামলায় তিনি জামিন পেলেও, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তা স্থগিত করে ঈদের পর ২৪ জুন শুনানির তারিখ দিয়েছে। অর্থাত্ বিএনপি নেতারা ঈদের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির যে আশা করেছিলেন, তা আর হচ্ছে না। অন্যদিকে ঢাকার দু’টি মামলায়ও উচ্চ আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়নি। আদালত এই দু’টি মামলায় খালেদা জিয়ার আবেদন বিচারিক আদালতকে নিষ্পত্তি করতে বলেছে।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, চেয়ারপারসনের মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে রাজপথের আন্দোলনেই সমাধান এখন শেষ ভরসা আমাদের। এ জন্য অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার আগেই সেই আন্দোলন শুরু হবে।