ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ক্রিকেট খেলার অপরিহার্য অঙ্গ হল বল। একটি বল খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে অনায়াসে। তারই কিছুটা বাস্তব প্রমাণ দেখা গেল বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্ট সিরিজে। এমনটাই বলছিলেন বাংলাদেশি ওপেনার তামিম ইকবাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে দুটি টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের হতাশাজনক পারফর্মেন্সের পিছেনের কারণ খুঁজতে গিয়ে তিনি প্রথমেই বলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
বল সাধারণত দুই ধরণের হয়। একটি ডিউক বল অপরটি কোকাবুরা বল। ডিউক বল দিয়ে খেলার কারণেই বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলতে পারেনি। কেননা ডিউক বল দিয়ে বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০১৪ সালে ওয়েস্টি ইন্ডিজ সফরের সময় খেলেছিল। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা দেশে ও দেশের বাইরে সাধারণত কোকাবুরা বল দিয়ে খেলে থাকে। ডিউক বলগুলোর সিম কোকাবুরা বলের চেয়ে ভিন্ন ধরণের। এর ফলে পেস বোলাররা দীর্ঘ মেয়াদে এই বল থেকে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে।
তামিম বলেন, দুই দলের মধ্যে একমাত্র ব্যবধান ছিল ডিউক বল, যা দিয়ে আমরা ৪ বছর পর খেলেছি। ডিউক ও কোকাবুরা বলের মধ্যে পার্থক্য হল ডিউক বলের সুইং ও সিম কোকাবুরা বলের চেয়ে বেশি। কিন্তু আমাদের দলের খারাপ খেলার পিছনে শুধুমাত্র ডিউক বল দায়ী নয়। আমার মনে হয় সমস্যাটা টেকনিক্যালের চেয়েও বেশি ছিল মানসিকতায়। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান একইভাবে আউট হয়েছে। আমরা সুইং আর বাউন্সের ব্যাপারে তৈরিও ছিলাম। কিন্তু যথাযথ কাজটি করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমরা নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত ভিন্ন কন্ডিশনে খেলেছি। এই উইকেটে আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে হবে। আপনি প্রথমেই বড় শর্ট খেলতে পারেন না। কিন্তু আমাদের ব্যর্থতা হচ্ছে আমরা তাদেরকে ৬০-৭০ ওভার মাঠে ফিল্ডিং করাতে পারিনি। পেস বোলাররা পরপর ৫টি টেস্ট ম্যাট খেলেছে তারা মোটামোটি ক্লান্ত ছিল। যদি আমরা খেলাটকে দীর্ঘ করতে পারতাম তাহলে নিজেদের মত করে খেলতে পারতাম। এটা সবাই জানে যে টেস্ট খেলায় কিছু কঠিন মুহুর্ত আছে আবার কিছু সহজ সময়ও আসে। কঠিন সময়ের সুযোগগুলো প্রতিপক্ষকে দিতে নেই।
তবে বাংলাদেশি ব্যাটসমানদের খারাপ পারফর্মেন্সের কারণেই দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ লজ্জাজনকভাবে হেরে গেছে বলে মনে করেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি।
বাংলাদেশের সব ফরমেটের সেরা ব্যাটসম্যাট তামিম ইকবাল বলেন, এখানে যা ঘটেছে তার ব্যাখ্যা করার কিছুই নেই। আমরা আমাদের ব্যাটিং লাইনকেই দোষারোপ করব। যদিও আমরা কঠিন উইকেটি খেলছি কিন্তু না খেলার মতো কিছু ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাদের অসাধারণ কিছু ডেলিভারি ছিল কিন্তু সেগুলো সামলিয়ে ২০০ রানের বেশি ইনিংস খেলা খুব কঠিন কিছু ছিল না।
তামিম নিজের পারফর্মেন্স নিয়ে বলেন, আমি একজন সিনিয়র খেলোয়াড় যার কাছ থেকে সবাই বেশি রান আশা করে। খুব দ্রুতই নিজের খেলার মানকে আরো উন্নত করা উচিত।
আরো দেখুন : ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় টেস্ট সিরিজ হারলো বাংলাদেশ
এন্টিগার পর জ্যামাইকাতেও ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টর তৃতীয় দিনেই ১৬৬ রানের বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা পেলো টাইগাররা। এই হারে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এন্টিগায় সিরিজের প্রথম টেস্ট ইনিংস ও ২১৯ রানের ব্যবধানে জিতেছিলো ক্যারিবীয়রা।
প্রথম ইনিংসে ৩৫৪ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ১৪৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ২০৫ রানের লিড পায় ক্যারিবীয়রা। দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় ইনিংস শুরেু করে ১ উইকেটে ১৯ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে দ্বিতীয় দিন শেষে ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ২২৪ রানে এগিয়ে থাকে ক্যারিবীয়রা।
তৃতীয় দিন ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশ বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ১২৯ রানেই দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের আসল সর্বনাশ করেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক ও বাঁ-হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান। বল হাতে ১৭ ওভারে ৩৩ রানে ৬ উইকেট নেন তিনি। প্রথম ইনিংসে উইকেটশুন্য ছিলেন তিনি। ৫৩ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৮তম বারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় ও বিদেশের মাটিতে পঞ্চমবার পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকারের কীর্তি গড়লেন সাকিব।
দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ৮, ডেভন স্মিথ ১৬, কেমো পল ১৩, কাইরেন পাওয়েল ১৮, মিগুইয়েল কামিন্স ১ ও শানন গ্যাব্রিয়েল ০ রান করে সাকিববের শিকার হন। এই ইনিংসে ক্যারিবীয়দের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩২ রান করেন রোস্টন চেজ। এছাড়া পাওয়েল ও হেটমায়ার ১৮ রান করে করেন। সাকিবের পর বাংলাদেশের হয়ে মেহেদি মিরাজ ২টি ও তাইজুল ইসলাম-আবু জায়েদ ১টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ৩৩৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই শুন্য হাতে ফিরেন বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। আরেক ওপেনার লিটন দাস ও তিন নম্বরে নামা মোমিনুল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। লিটন ৩৩, মোমিনুল ১৫ রানে বিদায়ের পর নামের পাশে ৪ রান রেখে ফিরেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। ফলে ৬৭ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
পঞ্চম উইকেটে জুটি বেধে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন অধিনায়ক সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। দু’জনই শিকার হন হোল্ডারের। সাকিবকে ৫৪ ও মুশফিকুরকে ৩১ রানে শিকারের পর বাংলাদেশের লেজও কেটে দেন হোল্ডার। তবে শেষেরদিকে তাইজুল ইসলাম ১৩ ও মিরাজ ১০ রান করে দলের হারের ব্যবধান কমান। শেষ পর্যন্ত ১৬৮ রান পর্যন্ত করতে পারে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হোল্ডার ৫৯ রানে ৬ উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসেও ৪৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ফলে ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরার পুরস্কার পান হোল্ডার।
আগামী ২২ জুলাই থেকে শুরু হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩৫৪ ও ১২৯ (চেজ ৩২, পাওয়েল ১৮, হেটমায়ার ১৮, সাকিব ৬/৩৩)।
বাংলাদেশ : ১৪৯ ও ১৬৮ (সাকিব ৫৪, লিটন ৩৩, মুশফিকুর ৩১, হোল্ডার ৬/৫৯)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৬ রানে জয়ী।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ম্যাচ সেরা : জেসন হোল্ডার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
সিরিজ সেরা : জেসন হোল্ডার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।