DMCA.com Protection Status
title="৭

বরিশালে কালো টাকা ছড়ানো ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ   নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, বরিশালসহ তিন সিটির নির্বাচন বিশ্ববাসীসহ সারাদেশের মানুষ পর্যবেক্ষণ করছে। এখানে যেকোনো অরাজকতা প্রতিহত করার জন্য পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রে অবাঞ্চিত প্রবেশ, ব্যালট ছিনতাই, ব্যালটে জোর করে সিল দেয়া বরিশালে দেখতে চাই না। আমরা চাই ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন।

অবশ্য তিনি এ জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। কেউ তা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থ নেয়া হবে।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) নির্বাচন উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কালো টাকা ছড়ানো, প্রচারে বাধা দেয়া, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং নানা গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে তোলা এসব অভিযোগের প্রতিকার না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। প্রার্থীদের এসব আশঙ্কার বিপরীতে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এসব কথা বলেন।

সভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার অভিযোগ করেন, আসন্ন ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৫ জানুয়ারির (২০১৪) নির্বাচনের পর থেকে মানুষ হতাশায় ভুগছে তারা ভোট দিতে পারবে কি না। বরিশালে যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা না হয় তহলে এ নির্বাচনও খুলনা, গাজীপুরের মতো প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বরিশালে কোথায় বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে তা নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসন সবই জানে। অথচ আমাদের বলা হয় একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে। গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর বরিশালে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে ভালো হতো।

বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বিসিসি নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেন, বস্তিতে গিয়ে ভোটারদের হুমকি দেয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট একটি প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য। অন্যথায় তাদের উচ্ছেদের ভয় দেখানো হচ্ছে।

ডা. মনীষা ব্যাপকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বরিশালে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান।

জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোটাররা মারামারি করেনি। কেন্দ্র দখলও করেনি। যা করেছে প্রশাসন। তাই তিনি বরিশালের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান এখানে সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।

জাতীয় পার্টির (এরশাদ) বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) মেয়র প্রার্থী বশির আহম্মেদ ঝুনু বিসিসি নির্বাচনকে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্তর রাখার দাবি জানান।

কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ ভোট দিতে পারবে কি পারবে না তা নিয়ে জনমনে আশঙ্কার কথা তুলে ধরে বলেন, ভোটের মাঠে কালো টাকার ছড়াছড়ি চলছে। খুলনা ও গাজীপুরে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। বরিশালে এমনটা চাই না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান মাহবুব বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সে জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

তবে মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন যে, তিনি নির্বাচিত হলে ইজিবাইক বন্ধ হয়ে যাবে, বিভিন্ন বস্তি থেকে বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা হবে।

তিনি এসব অপপ্রচারের প্রতিকার চেয়ে বলেন, আমি বরিশাল নগরের বাসিন্দা এবং ভোটার। ভোটে অংশ নেয়া আমার সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু বিশেষ একজন প্রার্থী আমি প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় বলে ভোট নিয়ে অহেতুক শঙ্কা প্রকাশ করছেন। বরিশালে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা যায়।

৩০ জুলাইয়ের নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করে আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আমি প্রচার-প্রচারণায় গিয়ে ভোটারদের বলি আপনারা সবাই ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং প্রছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, বিসিসি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতা কোনো রকম বরদাস্ত করা হবে না। বরিশালসহ তিন সিটির নির্বাচন কোনোরকম প্রশ্নবিদ্ধ হলে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে কোনোভাবে মাথা উচু করে কথা বলতে পারবো না।

মাহবুব তালুকদার বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন তাই বরিশালে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। এ জন্য তিনি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জনগণের প্রতি আস্থা রেখে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

বিসিসির নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহফুজুর রহমান, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!