ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়ন করায় এবার এইচএসসি ও সমমানে পাসের হার কমেছে। খাতা ভালো করে দেখার কারণেই পরীক্ষায় ফল নিম্নমুখী। সব মিলিয়ে গুণগতমান ঠিক রাখতেই এ অবস্থা হয়েছে।’
অবৈধ হাসিনা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। তিনি বলেন, `আমরা মানসম্মত শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তাই পাসের হার কমলেও সকল খাতা যাতে সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন হবে- এটাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য।’
নাহিদ বলেন, `অন্যান্য দেশের তুলনায় সংখ্যায় আমরা বেশি এগিয়ে আছি। এখন আমরা গুণগত মানের দিকটায় গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা ক্লাস নেওয়া ও ভালোভাবে পরীক্ষা নেওয়ার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। ঠিকভাবে যেন খাতা দেখা হয়, সেদিকে নজর দিচ্ছি। যা বাস্তব, যা সত্য সেই ফল বেরিয়ে এসেছে। আমরা কাউকে নম্বর বাড়িয়ে দিতে বলি না, কমাতেও বলি না। আমরা শিক্ষকদের বাধ্য করছি সঠিক মূল্যায়নের। যারা পরীক্ষা দিতে আসে তাদের সবাইকেই পাস করাতে চাই। আমাদের দেশে এখন সে অবস্থা নেই। যখন বেশি পাস করেছে তখন সবাই বিস্মিত হয়েছে। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি। আগে বেশি পাস করতো, বলা হতো ভালোভাবে খাতা দেখা হয়নি। আবার এখন কম পাস করেছে, এখন বলা হচ্ছে- পাসের হার কমে গেলো কেন। বেশি পাস করলেও অপরাধ, কম পাস করলেও অপরাধ। আসলে আমরা এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে খাতা দেখার মান ঠিক রাখতে গিয়ে, পাসের সংখ্যা কিছুটা কম হবে এটা স্বাভাবিক।’
বিজ্ঞানে ফল বিপর্যয় কেন জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, আমরা ভালো করে দেখে কারণ খুঁজে বের করবো। আগে গণিতে, ইংরেজিতে একজনও পাস করতো না। আমরা সেখানে আলাদা শিক্ষক দিয়ে আলাদা ক্লাস করিয়েছি। আস্তে আস্তে সবাই তারা পাস করছে। একটা দিকে বাড়াতে গেলে আরেকটা দিকে চাপ পড়ে। তারপরও কেন ফলাফল এমন হচ্ছে তা আমরা দেখবো। সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোও দেখবে, মূল্যায়ন করবে। কেন খারাপ হলো, আমাদের বোর্ডগুলো দেখবে। প্রয়োজন হলে মন্ত্রণালয়গুলো দেখবে। আমরা সমস্যা চিহ্নিত করবো।’
মানবিকের ফল বিপর্যয় প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ‘এটা বলা কঠিন। পরে মূল্যায়ন করে দেখবো। তুলনামূলকভাবে মেধাবীরা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করছে। বিজ্ঞানে জোর দেওয়া যুক্তিযুক্ত। পাশাপাশি অন্যদিকেও জোর দিতে হবে।’ সামগ্রিক ফলাফল খারাপের বিষয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আগেই বলেছি, শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, পাসের সংখ্যা বেড়েছে। পাসের হার কিছুটা কমেছে।’ তিনি বলেন, ‘সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছে গেছি, যেখানে আমাদের মানের বিষয়টি দেখতে হবে। দেখছিও তাই। এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের দুজন গোল্ড মেডেল পেয়েছে। এটি অবিশ্বাস্য সাফল্য আমাদের। দেখা যাচ্ছে অনেক উন্নত দেশ, যেমন ভারত- তাদেরকেও পেছনে ফেলে গোল্ড মেডেল নিয়ে আসছে।’
অবৈধ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে আমাদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল অথচ বিজ্ঞানে এবার গত বারের তুলনায় ২৪ হাজার ৫৫১ জন পরীক্ষার্থী বেশি অংশগ্রহণ করে এবং গতবারের চেয়ে ১০ হাজার ৮৫৮ জন বেশি পাস করেছে। বরাবরের মতো এবারও মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা এবার ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি পাস করেছে। পাসের হার কমলেও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এবারের পরীক্ষা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। বলা যায় এবারের পরীক্ষা প্রশ্নমুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ করার কারো সুযোগ ছিল না। এমনকি কোন গুজবও কেউ রটাতে পারেনি। পরীক্ষার্থী বাড়ছে। ঝরে পড়া কমেছে। সংখ্যাগত এবং গুণগত দিক থেকে বিজ্ঞান পরীক্ষায় উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। কারিগরি শিক্ষাতেও পরিবর্তন এসেছে, এই পরীক্ষার ফলাফলে তা প্রমাণিত হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।