ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ রাজধানীর যানজট আর গণপরিবহনের অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে শোরগোল হলেও বাদ পড়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সমস্যাগুলো। যদিও বন্দরনগরীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা একেবারে নেই বললেই চলে। বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) সেই অনিয়মের শহরের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
রাজধানীর মতো চট্টগ্রামেও সকাল থেকেই রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে। যেসব চালকের লাইসেন্স পাওয়া গেছে, তাদের ছেড়ে দিয়ে যাদের নেই তাদের জরিমানার ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীরা।
এ সময় পুলিশ, নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার গাড়িও তল্লাশির কবলে পড়ে। লাইসেন্স না থাকায় প্রাইভেট কারের চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে মাফ চাইতে বাধ্য করার দৃশ্যও দেখা গেছে। লাইসেন্স না পাওয়ায় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তার গাড়িও আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি যেসব গাড়ির লাইসেন্স পাওয়া যায়নি সেগুলোর আয়নায় লেখা হয় ‘লাইসেন্স নেই’। এলোপাতাড়ি গাড়িগুলোকে বাধ্য করে সারিবদ্ধভাবে চলতে। সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের এমন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দেখে উল্লাসিত হয়েছে নগরবাসী।
বেলা ১২টায় নগরের ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকার আরাকান সড়কে দেখা যায়, বাস, ট্রাক, পিকআপসহ বড় গাড়িগুলো এক লেনে এবং রিকশা আলাদা লেনে সারিবদ্ধভাবে চলতে বাধ্য করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় লেন মেনে চলার কারণে কিছুটা ধীর গাতি হলেও যাত্রীদের তা নিয়ে বিরক্তি নেই।
শিক্ষার্থীদের এমন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দিনভর তটস্থ ছিল কাগজপত্র ন থাকা গাড়ির চালকরা।
চট্টগ্রাম কলেজ এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যুৎ বিভাগের একটি গাড়ির (গাড়ি নম্বর-কক্সবাজার-ট-১৭) কাগজপত্র দেখতে চাইলে প্রথমে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে চায়নি চালক। পরে বাধ্য হয়ে যে লাইন্সেসটি তিনি দেখান সেটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ছয় বছর আগেই।
অভিভাবকরাও রাজপথে
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে চট্টগ্রামের রাস্তায় দেখা গেছে অভিভাবকদেরও। দুপুরে নগরের বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাবার, পানি, স্যালাইন এবং বিস্কুট বিতরণ করতে দেখা গেছে তাদের।
দুপরে নগরের ওয়াসার মোড়ে বিস্কুট আর খাবার পানি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যায় গৃহিণী সুপ্রিয়া চাকমাকে। তিনি স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়েই এসেছিলেন আন্দোলনে।
সুপ্রিয়া চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা রাস্তায় অবস্থান করছে। চেষ্টা করছি যতটুকু পারি তাদের পাশে দাঁড়াতে।’
সুপ্রিয়া চাকমার মতই বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের ছোট ভাইবোনদের জন্য এনেছিলেন খাবারের প্যাকেট। অল্প কিছু খাবারকে সবাই মিলেমিশে ভাগ করে খেতে দেখা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজে পানি না খেয়ে পাশের জনকে খেতে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।