ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ফ্লোরিডার লডারহিলের সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড রিজিওনাল স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্যেরই। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এই প্রথম খেলতে গিয়ে সাফল্যের মালা গলা ঝুলিয়েই দেশে ফিরছে টাইগাররা। ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটি ক্যারিবীয়দের মাটিতে হেরে ফ্লোরিডায় আসার পর সিরিজই জয় করে নিলো বাংলাদেশ। লডারহিলের প্রথম ম্যাচে ১২ রানে জয়ের পর দ্বিতীয় (সিরিজের তৃতীয়) ম্যাচে বৃষ্টি আইন ডার্কওয়ার্থ-লুইস মেথডে ১৯ রানে জয় পেলো বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের সিরিজও জিতে নিলো টাইগাররা।
বারবার বৃষ্টি হানা দিচ্ছিল বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিতে। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় একবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়। তখন ১৭তম ওভারের খেলা চলছিল। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৮তম ওভারের শুরুতে খেলা বন্ধ হলো বৃষ্টির কারণে।
যখন বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়, তখন জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ১৭ বলে ৫০ রান। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে খেলা আর মাঠে গড়াতে পারেনি। তবে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশই এগিয়ে ছিল। যে কারণে ডার্কওয়ার্থ-লুইস মেথডে বাংলাদেশকে ১৯ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
ফলে ২-১ ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয় করে নিলো বাংলাদেশ। ১ বার ততোধিক ম্যাচের সিরিজ এর আগে একবার মাত্র জিততে পেরেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সেটা ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিক আইরিশদের ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে।
এছাড়া আরও তিনটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় রয়েছে বাংলাদেশের। প্রতিটিই ১ ম্যাচের সিরিজ এবং ওই তিন সিরিজই নিজেদের মাটিতে। এর মধ্যে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রয়েছে একটি সিরিজ জয়। এবার ক্যারিবীয়দেরকে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হারিয়ে দ্বিতীয়বারেরমত সিরিজ জিতলো টাইগাররা। ১ বা ততোধিক ম্যাচের সিরিজও দ্বিতীয়বারেরমত জিতলো বাংলাদেশ।
১৮৫ রানের লক্ষ্য। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে জয়ের জন্য যথেষ্ট একটি লক্ষ্য দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। লক্ষ্যটা ধরে রাখতে মূল দায়িত্ব এবার বোলারদেরই। এবং সেই দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করে যাচ্ছেন বোলাররা। শুরুতেই দারুণ চেপে ধরেছে তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের।
৩২ রান তুলতেই ক্যারিবীয়দের ৩ উইকেটের পতন ঘটিয়ে দেয় বোলাররা। যার মধ্যে তিন ব্যাটসম্যানের উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার এবং সাকিব আল হাসান। সেই যে ক্যারিবীয়দের কোমর ভাঙলো, তা থেকে বার বার চেষ্টা করেও আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি তারা। এমনকি আন্দ্রে রাসেল ২১ বলে ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেও পারেনি।
মূলতঃ ক্যারিবীয়দের ইনিংসে ধ্বস নামানোর কাজটা শুরু করে দেন মোস্তাফিজুর রহমানই। তিনিই এনে দেন প্রথম ব্রেক থ্রু। ইনিংসে চতুর্থ ওভারে বল করতে এসেই তিনি ফিরিয়ে দেন আন্দ্রে ফ্লেচারকে। ৭ বলে ৬ রান করে ধুঁকতে থাকা ফ্লেচারকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার। একেবারে বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে সেই ক্যাচ তালুবন্দী করেন নাজমুল ইসলাম অপু।
ব্যাট হাতে ধুঁকতে থাকা সৌম্য সরকারকে এবার বোলিংয়ে নিয়ে আসেন সাকিব আল হাসান। বল হাতে শুরুতেই চাডউইক ওয়ালটনকে ফিরিয়ে দিয়ে আস্থার প্রমাণ রাখেন সৌম্য। তার ক্যাচ ধরেন বদলি ফিল্ডার সাব্বির রহমান।
এরপর ব্যাটিংয়ে আসা মারলন স্যামুয়েলসকে পুরোপুরি বোকা বানিয়ে বোল্ড আউট করেন সাকিব আল হাসান। তার স্লো এবং লো বলটি বুঝতেই পারেননি স্যামুয়েলস। দলীয় ৩২ রানের মাথায় আউট হয়ে যান স্যামুয়েলস।
তবে রোভম্যান পাওয়েল আর দিনেশ রামনিদের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যদিও দুই পেসার মোস্তাফিজ আর রুবেলের আগুনে বোলিংয়ের সামনে দিশেহারা হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৩ রানে মোস্তাফিজের বলে আবু হায়দার রনির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান পাওয়েল।
২১ রান করে রুবেল হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে যান দিনেশ রামদিন। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন আন্দ্রে রাসেল। ২১ বলে ৪৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। ১টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৬টি ছক্কার মার মারেন তিনি। শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজের বলে আরিফুল হকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের উইকেট তুলে নেন আবু হায়দার রনি। উইকেটে ছিলেন অ্যাশলে নার্স। মোস্তাফিজুর রহমান ৩.১ ওভারে ৩১ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন আবু হায়দার রনি, রুবেল হোসেন, সাকিব আল হাসান এবং সৌম্য সরকার।