ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতের জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ মহাত্মা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছিলেন মুহাম্মদ আলি জিন্নাহকে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে আপত্তি তোলেন জওহরলাল নেহরু। তার এই আত্মকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত ফুটে উঠেছিল- দেশভাগ ও এই উপমহাদেশের রাজনীতিকদের শাসন ক্ষমতায় বসা নিয়ে।
বৃহস্পতিবার এ দাবি করেছেন ভারতে আশ্রিত ৮৩ বছর বয়সী তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা। তার এই বক্তব্যকে ঘিরে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
গোয়া ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের এক অনুষ্ঠানে দালাই লামা দাবি করেন, ‘জওহরলাল নেহরু সেদিন যদি গান্ধীর প্রস্তাব মেনে নিতেন, তা হলে হয়তো দেশভাগ হতো না।’
সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া প্রসঙ্গে এক ছাত্রের প্রশ্নের জবাবে তিব্বতি এই ধর্মগুরু বলেন, ‘সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার তুলনায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনেক বেশি কার্যকরী। কারণ, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা মুষ্টিমেয় কয়েক জনের হাতে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়। যা খুবই বিপজ্জনক।’
এ প্রসঙ্গেই তিনি টেনে আনেন জিন্নাহকে প্রধানমন্ত্রী করতে গান্ধীর ইচ্ছা আর সেই প্রস্তাবে নেহরুর আপত্তির কথা। দলাই লামার মন্তব্য, ‘আমার মনে হয়, নেহরু নিজেই প্রধানমন্ত্রী হতে চাইছেন, এটা তার তরফে কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক ভাবনা। গান্ধীর ভাবনা যদি বাস্তবায়িত এতা, তাহলে ভারত-পাকিস্তান এক হয়ে থাকতে পারত।’
তবে দলাই লামার মতে, নেহরু ‘অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, তীক্ষ্ণ বুদ্ধির রাজনীতিক’ ছিলেন। ‘কখনও কখনও অবশ্য ভুল হয়েই যায়’- বলেন তিনি। তবে নেহরু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে যেভাবে চীনের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এই ধর্মগুরুকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন- সেই প্রসঙ্গও তুলেছেন অনেকে। কারও কারও মতে, নেহরু সে দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী না থাকলে হয়তো চীনের জেলে ঠাঁই হত দালাই লামার।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে বলছে, পানাজির অনুষ্ঠানে তিব্বত ছেড়ে তার পালিয়ে আসার অভিজ্ঞতার কথাও শুনিয়েছেন দালাই লামা। জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিনগুলোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৫৬ সালেই সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। তিব্বতের মানুষের উপর ভয়াবহ অত্যাচার শুরু করেছিল চীনা শাসকেরা। তার পরে ১৯৫৯ সালের ১৭ মার্চের রাতে দেশ থেকে পালিয়ে আসি।’
তার কথায়, ‘পরের দিনটা দেখতে পাব কি-না, সব সময়ে সেই ভাবনা গ্রাস করেছিল। আর যে পথে পালিয়েছি, সেখানেও পদে পদে ছিল চীনা সেনার হাতে বন্দি হওয়ার শঙ্কা।’
তিব্বতি ধর্মগুরু বলেন, ‘চীনের শক্তি শুধু তাদের অস্ত্রে। কিন্তু আমাদের শক্তি লুকিয়ে রয়েছে সত্যে। অস্ত্র দিয়ে হয়তো তাৎক্ষণিক লাভ হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, সত্যের জোর বন্দুকের থেকে অনেক বেশি।’