DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

নৌপথে ঢাকা ছেড়েছে ৯ লাখ মানুষ!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ঈদুল আজহা উপলক্ষে নৌপথে প্রতিদিন বাড়ি যাচ্ছেন লাখো মানুষ। উপচে পড়া যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাট ছেড়ে যাচ্ছে একেকটি নৌযান। ১০ আগস্ট থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ মানুষ বাড়ি চলে গেছে। ২০, ২১ ও এমনকি ঈদের পরেরদিন ২৩ আগস্টও নৌপথে যাত্রীদের ঢাকা ছাড়ার ঢল থাকবে বলে মনে করছে নৌ-কর্তৃপক্ষ। এবার সরকারি ছয়টি স্টিমার আর দেড়শর বেশি বেসরকারি লঞ্চ ঈদের যাত্রী বহন করছে।

রোববার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঘরমুখো যাত্রীরা সকাল থেকেই পরিবার নিয়ে লঞ্চ টার্মিনালে আসতে শুরু করেন। বিকেল থেকে লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও অনেকেই আগে এসে সিট দখল করে বসেন। অনেকে আবার লঞ্চে বসেই দুপুরের খাবার সেরে নেন।

সরকারি চাকরি করেন পিরোজপুর জেলার কামাল হোসেন। পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। রাজদূত-৭ লঞ্চটি বিকেল ৫টায় ছাড়লেও তিনি সকাল ১০টায় এসে নিচতলায় বিছানার চাদর বিছিয়ে জায়গা দখলে নেন।

seaways

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি, সিট পাবো না বলে আমি একা সকালে আসি। দুপুরে আমার পরিবারের সদস্যরা আসে। আগামী ২৫ তারিখ ছুটি শেষে আবার ফিরে আসবো ঢাকায়।

রাজদূত-৭ লঞ্চের এক কর্মচারী জাগো নিউজকে বলেন, এই লঞ্চে ৭৩৭ জনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। তবে এক হাজারের বেশি যাত্রী নেয়া হবে।

বরগুনাগামী যাত্রী মো. হাসান বলেন, ‘লঞ্চে ওঠার পর তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না যাত্রীর ভিড় ছাড়া। যেন ঠেলাঠেলি করতে না হয়, সে জন্য পরিবার নিয়ে আগেই এসেছি। আগেই কেবিন বুক করি। তাই তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

seaways

সুন্দরবন লঞ্চের কেবিনযাত্রী শারমিন আক্তার বলেন, বহু কষ্টে কেবিনে উঠলেও ডেকের যাত্রীরা যেভাবে কেবিন বাইরে বসে আছে, তাতে কেবিন থেকে বের হওয়া, বাথরুমে যাওয়ারও উপায় থাকছে না।

টিপু-৭ লঞ্চের ডেকের যাত্রী হাসান মিয়া বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রী যদি লঞ্চে উঠানো হতো তাহলে আরামেই যাতায়াত করা যেত। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছে। এ সুবিধা পেতে তারা আগাম টিকিটে সায় দিচ্ছে না।’

seaways

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক (কন্ট্রোল রুম) আলমগীর কবির  বলেন, ‘নৌপথে ঈদযাত্রা নিয়ে আমরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এবার সরকারি ছয়টি স্টিমার আর দেড়শোর বেশি বেসরকারি লঞ্চ ঈদের যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। প্রতিদিন সরকারি-বেসরকরি প্রায় ৮০টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছাড়া হচ্ছে। গত ১৪ আগস্ট থেকে ঈদের বিশেষ লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে। ১০ আগস্ট থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ মানুষ বাড়ি চলে গেছে। আগামী তিন দিনে আরও প্রায় তিন থেকে চার লাখ মানুষ লঞ্চযোগে বাড়ি ফিরবে। অর্থাৎ প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ নৌপথে ঢাকা ছেড়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ আগামী তিন দিনে ঢাকা ছাড়বে।

তিনি আরও বলেন, কাল থেকে গার্মেন্ট ছুটি হওয়ায় শেষ দুই দিনে লঞ্চে যাত্রীর ঢল নামবে। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। এবার পাঁচদিন আগে থেকেই বিশেষ সার্ভিস চালু হয়, যাতে মানুষ আগে থেকেই ধীরে-সুস্থে ঘরে ফিরতে পারে। ঈদে মানুষের ঢল নামায় ধারণক্ষমতার চাইতে লঞ্চে ২০ শতাংশ যাত্রী বেশি উঠছে। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। লঞ্চ ছাড়ার আগে তা পরীক্ষা করার অনুমতি দেয়া হয়।

seaways

ওই কর্মকর্তা জানান, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঘাট থেকে যাতে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যেতে না পারে সেদিকে কঠোর নজর রাখা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যাত্রীদেরও অসচেতনতা, বিশেষ করে ডেকের যাত্রীরা কোনো কিছুই না মেনে যার যার পছন্দের লঞ্চে দল বেঁধে উঠতে থাকে। বাধা দিতে গেলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এবার বরিশালসহ বেশ কয়েকটি রুটে উন্নত সেবাযুক্ত অত্যাধুনিক কয়েকটি লঞ্চ চালু করা হয়েছে। সেসব লঞ্চের কেবিনের টিকিট অনলাইনে ছাড়া হয়। ইতোমধ্যে সব কেবিন ভাড়া হয়ে গেছে।

তিনি জানান, এবার ঈদযাত্রায় নৌপথ নির্বিঘ্ন রাখতে এরই মধ্যে পণ্যবাহী ও বালুবাহী নৌযানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নদীতে মাছ ধরার জালও নিষিদ্ধ করা হয়েছে ঈদের কয়েক দিনের জন্য। অন্যদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় নৌবন্দরে র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও আরও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে রয়েছে মোবাইল কোর্ট।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!