DMCA.com Protection Status
title="৭

বিএসএফ-বিজিবি বৈঠকে সিমান্ত হত্যাকান্ড নেইঃরয়েছে ভারতে বিজিবির সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা, স্ত্রীদের দিল্লি সফর!!!!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে আজ সোমবার থেকে শীর্ষ পর্যায়ের যে সম্মেলন শুরু হয়েছে তাতে উভয়পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

দু'দেশের এই দুটো বাহিনীর মধ্যে আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্যে উভয়পক্ষের তরফে ভিন্ন ভিন্ন কিছু কর্মসূচিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

পাঁচদিনের এই বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে যেসব বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে সীমান্ত এলাকায় অপরাধ দমনের জন্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যেমন বলা হয়েছে তেমনি রয়েছে ভারতে বাংলাদেশী সীমান্ত রক্ষীদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা এবং তাদের স্ত্রীদের ভারত সফরের মতো বিষয়ও।

দিল্লিতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফের দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব আলোচ্য বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই এজেন্ডায় সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের কোন কথা উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসেবে এবছর এখনও পর্যন্ত বিএসএফের হাতে তিনজন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১১ জন, আর ন'জন অপহৃত হয়েছেন।

অবশ্য বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, তিন জন নয়, এ বছর বিএসএফের হাতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিহত হয়েছেন একজন।

অধিকার আরো বলছে, ২০০০ সালের পর থেকে গত ১৮ বছরে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের হাতে ১,১৩৬ জন বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছেন।

ভারত ও বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionভারত ও বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ।

আরো পড়তে পারেন:

বিএসএফের এজেন্ডায় সীমান্তের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত কিছু বিষয়ের উল্লেখ থাকলেও বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিবির এজেন্ডায় দেখা যাচ্ছে সেখানে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ, বন্ধুত্বপূর্ণ খেলাধুলা এবং নানা ধরনের বিনোদনধর্মী কর্মসূচির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বাহিনীর মহাসচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে আলোচনার জন্যে যেসব বিষয় প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে উভয়পক্ষের পছন্দের একটি জায়গায় যৌথভাবে 'মিলন মেলা' আয়োজন করা, বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রীড়া অনুষ্ঠান, সাইক্লিং, হাইকিং, রোয়িং-রাফটিং বা নৌকা বাইচের আয়োজন, পর্বতারোহণ, দুই বাহিনীর যে বাজনার দল বা মিউজিক ব্যান্ড আছে সীমান্ত এলাকায় তাদের যৌথ অনুষ্ঠান, দুই বাহিনীর মধ্যে শুটিং প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।

আলোচনার জন্যে বিজিবির পক্ষ থেকে তাদের পরিবার পরিজনদের জন্যেও কিছু কর্মসূচির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

যেমন বিজিবি ও বিএসফ এই দুই বাহিনীর কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের ভারত ও বাংলাদেশ সফর। এবং ভারতে বিজিবির কর্মকর্তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা।

বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবির পক্ষ থেকে ভারতে বাংলাদেশী স্কুল-শিশু, ডাক্তার ও সাংবাদিকদের ভারত সফরেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিএসএফ ও বিজিবি-র সদস্যদের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে ভলিবল, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন বা হকি-র প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হচ্ছে – বিজিবির এজেন্ডাতেও এই সব 'বন্ধুত্বপূর্ণ খেলাধুলো'র কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজিবি'র বক্তব্য

বিজিবির এসব এজেন্ডা নিয়ে জানতে এই বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটা সম্ভব হয়নি।

তবে বিবিসি'র রিপোর্টটি প্রকাশের পর সোমবার রাতে বিজিবি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, এবারের সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত এলাকায় নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি, হত্যা বা আহতের ঘটনা, এবং আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক বা বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য চোরাচালানের মতো বিষয়গুলো।

নয়াদিল্লি থেকে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহসিন রেজা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আলোচ্যসূচির মধ্যে আরো ছিল নিরীহ বাংলাদেশী নাগরিকদের গ্রেফতার বা আটকের ঘটনা, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম বা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা, জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনি এর ভেন্যুসমূহে দর্শকদের জন্য সীমান্তের দু'পাশে একই ধরনের গ্যালারি নির্মাণ, সীমান্তে 'ক্রাইম ফ্রি জোন' এর আওতা বৃদ্ধি, উভয় দেশের সীমান্ত নদীসমূহের তীর সংরক্ষণ এবং পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির বিভিন্ন পদক্ষেপসমূহ।

এ ছাড়া ভারত সফরকালে বিজিবি মহাপরিচালকের ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সচিবের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথাও উল্লেখ করা হয়।

সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ কর্মসূচি।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionসীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ কর্মসূচি।

এতে বলা হয়, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরিত হবে।

বছরে দু'বার মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক

বছরে দুবার এই মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এবার হচ্ছে দিল্লিতে। শেষ বৈঠকটি হয়েছিল ঢাকায় গত এপ্রিল মাসে।

এবারের এই ৪৭তম বৈঠকে বিএসএফের প্রধান কে কে শর্মা এবং বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাফিনুল ইসলাম নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এজেন্ডায় ভারতের পক্ষ থেকে যেসব বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিএসফের সদস্যদের উপর বাংলাদেশী দুষ্কৃতিদের হামলা ঠেকানো, সীমান্ত এলাকায় অপরাধ বন্ধে যৌথ উদ্যোগ, ভারতীয় বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, সীমান্ত অবকাঠামো, যৌথ টহল, নাজুক এলাকা চিহ্নিত করা এবং তথ্য বিনিময়।

বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর মধ্যে আরো রয়েছে সীমান্ত এলাকায় অপরাধ দমন, ভারত থেকে বাংলাদেশে মাদক পাচার, বিএসফের হাতে বাংলাদেশী নাগরিকদের গ্রেফতার বা আটক হওয়া ইত্যাদি।

দিল্লিতে মহাসচিব পর্যায়ের এই বৈঠক চলবে আগামী ৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত

 

সূত্র ঃবিবিসি বাংলা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!