DMCA.com Protection Status
title="৭

২৫ বছর ধরে মসজিদটিকে আগলে রেখেছেন এক হিন্দু

সময়টা ২০১৩ সালের। এ সময় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় ভারতের মুজাফফর নগরের নানহেদা গ্রামের মুসলিম অধিবাসীরা পালিয়ে যান। বর্তমানে এই গ্রামটিতে একজন মুসলমান ব্যক্তিরও বসবাস নেই। দলিত ও পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর বসবাস এই গ্রামে। তবে গ্রামটিতে কোনো মুসলমানের বসবাস না থাকলেও ১২০ বছর ধরে টিকে আছে একটি মসজিদ। আর এ মসজিদটিকে আগলে রেখেছেন রম্ভীর কাশ্যপ নামের এক হিন্দু।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে দাঙ্গার সময় মসজিদটিকে ধ্বংস করে ফেলতে চেয়েছিল একদল দাঙ্গাকারী। সেসময় রম্ভীরসহ গ্রামের কিছু বাসিন্দা এতে বাধা দেন। ফলে সে যাত্রায় রক্ষা পায় মসজিদটি। গত ২৫ বছর ধরে তিনি মসজিদটিকে আগলে রেখেছেন। সকালে উঠে মসজিদ ঝাড়ু দেয়া ও সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালানোর কাজটি তিনি নিজেই করেন। এমনকি রমজান মাস আসার আগে মসজিদের চুনকামের কাজটিও করেন এই বৃদ্ধ।

‘এটা আমার ধর্মীয় দায়িত্ব। আমার ধর্মীয় বিশ্বাস সব উপাসনালয়কে শ্রদ্ধা করতে শেখায়’-জানান টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান রম্ভীর। মসজিদ থেকে ১০০ মিটার দূরেই তার বসবাস।

রম্ভীর বলেন, ‘স্বাধীনতার পূর্বে গ্রামটিতে অনেক মুসলমানের বসবাস ছিল। দাঙ্গার সময় তারা চলে গেছে। মাঝে মধ্যে কয়েকজন নামাজ পরতে এই মসজিদে আসেন। তবে তারা সংখ্যায় তারা খুবই কম।’

‘আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমি মসজিদটির চারপাশে খেলা করেছি। আমার কাছে এটা প্রার্থনার জায়গা। আর প্রার্থনার জায়গা মানেই সেটি শ্রদ্ধার জিনিস। যেহেতু মসজিদটি দেখার কেউ নেই তাই আমি এর দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছি। গত ২৫ বছর ধরে আমি মসজিদে নিয়মতি ঝাড়ু দিয়ে আসছি। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণও আমিই করে থাকি’-যোগ করেন রম্ভীর। 

পার্শ্ববর্তী গামের বাসিন্দা খুশনসিব আহমদ। পেশায় তিনি একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে আমি মসজিদটি দেখতে গিয়েছিলাম। তখন আমি অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে, একজন হিন্দু মসজিদটির দেখাশোনা করছে। আমি মসজিদে নামাজও পরেছিলাম।

তার মতে, অমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে দেখা যাবে ঘৃণার পরিবর্তে মানুষের ভালোবাসা কত বিচিত্র হতে পারে। 

তার এ কাজে মুগ্ধ গ্রাম প্রধান দারা সিংহও। তিনি জানান, প্রতি রমজানে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে সে মসজিদের চুনকাম করে। মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে মাঝেমধ্যে তার পরিবারের সদস্যরাও তাকে সহযোগিতা করে।

ভারতের দারুল উলুম (দেওবন্দ) মাদরাসার সংগঠন ও উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বে আছেন আশরাফ উসমানি। তিনি বলেন, ‘ভারতে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। তবে নানহিদা গ্রামের ঘটনা আসলেই প্রশংসার দাবিদার।’

তিনি জানান, উপমহাদেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার পর মুসলমানরা পাকিস্তানে চলে যান। এ ঘটনার পর কিছু শিখ ও হিন্দু ব্যক্তিদের উদ্যোগে অনেক মসজিদ রক্ষা পেয়েছে, যেগুলো আজও টিকে আছে। একইভাবে, এমন অনেক উদাহরণও আছে, যেখানে দেখা যাবে মুসলমানরা মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!