ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ২৪তম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছিলেন মার্কিন কৃষ্ণকলি সেরেনা উইলিয়ামস। সামনে বাধা শুধুমাত্র একজন। জাপানের নাওমি ওসাকা। তাকে হারাতে পারলে ‘মা’ হওয়ার পর প্রথম গ্র্যান্ড স্লামও জয় করে ফেলবেন সেরেনা। তারওপর, নিজের মাঠ। সব কিছুই পরিচিত পরিবেশ। সেরেনার না জেতার কোনো কারণই নেই।
অথচ, আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের ফ্ল্যাশিং মিডোয় মেয়েদের সিঙ্গেলস ফাইনালটি হয়ে রইলো টেনিস ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত একটি ম্যাচ হিসেবে। এই ম্যাচেই মাঠের চেয়ার আম্পায়ারকে চোর, প্রকারক বলে গালি দিলেন মার্কিন টেনিস তারকা। বার বার বিতর্কের জন্ম দেন সেরেনা। খেলার মধ্যেই কোচিং নেওয়া, চেয়ার আম্পায়ারকে গালি দেওয়া এবং র্যাকেট ছোড়ার (র্যাকেট অ্যাবিউস) মতো একাধিক অপরাধ করেছেন সেরেনা।
কোর্টে নিজের সেরাটা দিতে না পারার কারণে সেরেনার অভিব্যক্তি ভাল চোখে নেননি ম্যাচ আম্পায়ার কার্লোস রামোস। কোর্টে মার্কিনী খেলোয়াড়ের কিছু তির্যক মন্তব্যও এড়িয়ে যেতে পারেননি তিনি। ফলে দ্বিতীয় সেটে একটি গেম পেনাল্টিসহ তিনবার কোড ভায়োলেন্স সেরেনার বিপক্ষে যায়। আর তাতেই সহজ হয়ে যায় ওসাকা’র প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রাস্তা।
জাপানের হয়ে নাওমি ওসাকা জিতলেন প্রথম কোনো গ্র্যান্ডস্লাম। ম্যাচের ফল ৬-২, ৬-৪। তার এই জয়ের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থারঅ্যাশ স্টেডিয়াম সাক্ষী থাকল এক বিতর্কিত গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনালের। কোর্টে সেরেনার আগ্রাসন থেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া, ২০১৮ যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের মহিলা সিঙ্গেলস ফাইনাল দেখল সবকিছুই। বিতর্কে জড়িয়ে পয়েন্ট খোয়ানো এবং শেষ পর্যন্ত স্ট্রেট সেটে নবাগতা ওসাকার কাছে হার। সব মিলিয়ে বিতর্কের মধ্যেই শেষ হল মেয়েদের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, নাওমি ওসাকার গ্র্যান্ডস্লাম জয় ছাপিয়েও ফাইনালের সবচেয়ে বড় আলোচিত নাম হয়ে রইলো সেরেনা।
কারণ একাধিক বিতর্ক। প্রথম অভিযোগ, ম্যাচ চলাকালীন কোচিং নেওয়া। প্রথম সেট ৬-২ ব্যবধানে হেরে যান সেরেনা। দ্বিতীয় সেটের দ্বিতীয় গেমে সেরেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তার কোচ প্যাট্রিক মৌরাতগ্লু তাকে ইশারায় পরামর্শ দিয়েছেন। চেয়ার আম্পায়ার কার্লোস র্যামোস তাকে ডেকে সতর্ক করেন; কিন্তু সেরেনা তার তীব্র প্রতিবাদ করেন। চেয়ার আম্পায়ারের কাছে গিয়ে বলেন, ‘জেতার জন্য আমি কখনও প্রতারণার আশ্রয় নিই না। তার চেয়ে হেরে যাওয়াই আমার কাছে শ্রেয়।’
কিছুক্ষণ পর ফের খেলা শুরু হয়। সেরেনা তখন ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে। ওই সময়ে ফের চেয়ার আম্পায়ারের কাছে গিয়ে মসৃণভাবে খেলা পরিচালনার কথা বলেন সেরেনা। এবার আরও এগিয়ে যান সেরেনা। গেম ৩-১; কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সেরেনার পর পর দু’টি ডাবল ফল্ট এবং ব্যাক হ্যান্ডের একটি শট নেটে আটকে যাওয়ায় ম্যাচে ফেরেন ওসাকা। এ সময় মেজাজ হারান সেরেনা। নিজের র্যাকেট মাঠে ছুড়ে ভেঙে ফেলেন। এর জেরে পয়েন্ট পেনাল্টি হয় তার। ফলে পরের গেমে চাপে পড়ে যান ২৩ গ্র্যান্ডস্ল্যামজয়ী সেরেনা।
ওসাকা ৪-৩ লিড নেয়ার পর ফের চেয়ার আম্পায়ার র্যামোসের সঙ্গে সেরেনা বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। র্যামোসকে উদ্দেশ্য করে বারবার বলতে থাকেন, ‘আমি প্রতারক নই। আপনি মিথ্যা কথা বলেছেন। আপনি চোর, প্রতারক। আপনাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে আমি যে ম্যাচে খেলব, আপনি আর আম্পায়ার থাকবেন না।’
ওই সময় সেরেনাকে কোর্টের মধ্যে কাঁদতেও দেখা যায়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, দুই ম্যাচ রেফারিকেও কোর্টে নেমে আসতে হয়। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনেন দুই রেফারি; কিন্তু এই তর্কাতর্কির জন্য আবারও ‘ভার্বাল অ্যাবিউজ’-এ পয়েন্ট কাটা হয় সেরেনার।
ফলে নাওমি ওসাকার পক্ষে ফল দাঁড়ালো ৫-৩। শেষ পর্যন্ত ৬-৪ পয়েন্টে দ্বিতীয় সেট জিতে নেন ওসাকা। সরাসরি সেটে ম্যাচ জিতে প্রথমবারেমত কোনো গ্র্যান্ডস্লাম তুলে ধরার সুযোগ পেলেন ২০ বছরের জাপানি তারকা। সেরেনার কোচ প্যাট্রিক মৌরাতগ্লু পরে ইএসপিএন-এ একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, তিনি ম্যাচ চলাকালীনই সেরেনাকে হাতের ইশারায় পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, সেরেনা সেটা খেয়াল করেননি।