ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল নতুন সংস্করণের তিনটি আইফোন ও একটি অ্যাপল ওয়াচ (ঘড়ি) উন্মুক্ত করেছে। আইফোন তিনটি হলো- ‘আইফোন টেনএস’, ‘আইফোন টেনএস ম্যাক্স’ এবং ‘আইফোন টেনআর’। এর মধ্যে আইফোন টেনএস ম্যাক্সের ডিসপ্লে ৬.৫ ইঞ্চি, যা আইফোনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ডিসপ্লে। এছাড়া নতুন উন্মুক্ত অ্যাপল ওয়াচটি ব্যবহারকারীর হৃদপিণ্ড ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তার তথ্য জানাবে।
নতুন সংস্করণের আইফোন কেনার জন্য শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে বিশ্বের ৩০টি দেশে প্রি-অর্ডার করা যাবে। তবে সে সব দেশের অ্যাপল স্টোরে এ ফোনগুলো পাওয়া যাবে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে।
শুরুতে আইফোন টেনএস এর দাম ধরা হয়েছে ৯৯৯ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় (৮৩.৪১ প্রতি ডলার) প্রায় ৮৪ হাজার টাকা। আইফোন টেনএস ম্যাক্স এর দাম ১০৯৯ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯২ হাজার এবং ২৫৬ জিবির আইফোন টেনআর এর দাম ধরা হয়েছে ৮৯৯ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৫ হাজার।
অ্যাপল নতুন সংস্করণের এ তিনটি আইফোন ও ওয়াচ নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে ‘আইফোন টেনএস’ এবং ‘আইফোন টেনএস ম্যাক্স’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। তিনিটি নতুন সংস্করণের মধ্যে ‘আইফোন টেনআর’-এর দাম কম। অ্যাপল বলছে, স্মার্ট ফোনের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় ধরনের অগ্রগতি।
নতুন সংস্করণের তিনটি আইফোনে যা রয়েছে
১. নতুন সংস্করণের ‘আইফোন টেনএস’ এবং ‘আইফোন টেনএস ম্যাক্স’-এর ডিসপ্লে হবে আগের তুলনায় অনেক ঝকঝকে। এখানে সুপার রেটিনা ডিসপ্লে সংযোজন করা হয়েছে। এ ফোন সেট পানি ঢুকবে না। দুই মিটার পানির নিচে ৩০ মিনিট পর্যন্ত থাকতে পারবে। এছাড়া প্রতিদিনের ব্যবহার সময় চা, কফি কিংবা অন্যকোনো ধরনের তরল জিনিস ফোন সেটের উপর পড়লেও কোনো সমস্যা হবে না।
২. নতুন এ দুটো আইফোন সেটে ছবি, ভিডিও, ভিডিও এডিটিং এবং গ্রাফিক্সের জন্য ভালো ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এর ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৫১২ জিবি।
৩. ৫১২ জিবিতে সর্বোচ্চ দুই লাখ ছবি রাখা যাবে। ফোন সেটে ব্যবহার করা হয়েছে এ ১২ বায়োনিক চিপ। স্মার্ট ফোনের জগতে এটি সবচেয়ে উন্নত বলে বলছে অ্যাপল।
৪. নতুন সংস্করণের আইফোনে ছবি তোলার পর সেটির ব্যাকগ্রাউন্ডের গভীরতা পরিবর্তন করা যাবে। আইফোন টেনএস ম্যাক্স এর ডিসপ্লে ৬.৫ ইঞ্চি, যা এ যাবতকালে আইফোনের সবচেয়ে বড় ডিসপ্লে।
৫. ব্যাটারির ক্ষমতা পুরনো সংস্করণের চেয়ে কিছুটা উন্নত। আইফোন টেন-এর চেয়ে টেনএস-এর ব্যাটারিতে চার্জ থাকবে ৩০ মিনিট বেশি। অন্যদিকে টেনএস ম্যাক্স-এ ব্যাটারির চার্জ থাকবে দেড় ঘণ্টা বেশি।
৬. আইফোন টেনএস এবং টেনএস ম্যাক্স পাওয়া যাবে ৬৪ জিবি, ২৫৬ জিবি এবং ৫১২ জিবি। শুরুতে এর মূল্য হবে যথাক্রমে ৯৯৯ মার্কিন ডলার এবং ১০৯৯ মার্কিন ডলার।
৭. নতুন সংস্করণের আইফোনের একটিতে পেছনে তিনটি ক্যামেরা থাকবে বলে বাজারে জোর গুজব উঠেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ‘আইফোন এক্সএস’ এবং ‘আইফোন এক্সএস ম্যাক্স’-এ ১২ মেগাপিক্সেল-এর দুটো ক্যামেরা রয়েছে। এখানে রয়েছে টুএক্স অপটিক্যাল জুম এবং ডুয়াল অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন। ফটোগ্রাফির জগতে এটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে অ্যাপল জানিয়েছে।
শুধু ছবি নয়, উন্নত মানের ভিডিও ধারণ করা যাবে এ ফোন সেটের মাধ্যমে। ভিডিও ধারণের সময় নড়াচড়া হলেও ভিডিওতে সেটির প্রভাব পড়বে না এবং কম আলোতেও ভালো মানের ভিডিও ধারণ সম্ভব হবে। কারণ এখানে রয়েছে উন্নত মানের ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার। ভিডিও’র শব্দ হবে উন্নত মানের। এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে আইফোন এক্স বাজারে এনেছিল অ্যাপল।
এছাড়া অ্যাপলের নতুন সংস্করণের হাতঘড়ি ব্যবহারকারীর হৃদপিণ্ডের অবস্থা পরিমাপ করতে পারবে। হৃদযন্ত্রের কম্পন অনিয়মিত হচ্ছে কিনা সেটি চিহ্নিত করতে পারবে এ অ্যাপল ঘড়ি। এটা অনেকটা ইসিজি যন্ত্রের মতো কাজ করবে।
নতুন অ্যাপল ওয়াচে এমন একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার মাধ্যমে ঘড়ির ব্যবহারকারী কোথাও পড়ে গেলে এবং এক মিনিট নড়াচড়া না করলে অ্যাপল ওয়াচ থেকে জরুরি সেবায় বার্তায় পাঠাবে। সে বার্তায় ব্যবহারকারী অবস্থান সম্পর্কেও তথ্য থাকবে। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ, বিবিসি