ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ঢাক ঢোল পিটিয়ে আবেদন নেয়া হলেও সহসাই এমপিওভুক্ত হচ্ছে না নতুন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওর জন্য আবেদন করেছে। তবে এই খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকার কারণে একসঙ্গে সব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বরাদ্দ অর্থ অনুযায়ী অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হলে বাকিদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের আগে সেই ঝুঁকি নিতে চায় না সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল। যদিও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কয়েকদিন আগে বলেছেন, এবার নতুন প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। পরবর্তীতে আবেদন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের বাস্তবচিত্র মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে যাচাই-বাছাই চলবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হতে অন্তত ছয় মাস লেগে যেতে পারে। এর মধ্যে নির্বাচন শেষ হয়ে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পর এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসতে পারে। ফলে সহসা এমপিওভুক্ত হচ্ছে না নতুন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক বিদ্যালয়) জাবেদ আহমেদ বলেন, নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যা শিক্ষকদের মধ্য থেকে নিয়োগ করা হয়। সমাজে শিক্ষকদের বড় একটি অংশ প্রভাবশালী। অপরদিকে, যে সাড়ে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওর জন্য আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে বড়জোর ২ হাজার প্রতিষ্ঠান শর্তপূরণ করেছে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ প্রায় ১২শ’, মাদরাসা ৫শ’ এবং সাড়ে ৩শ’ কারিগরি প্রতিষ্ঠান শর্তপূরণ করেছে। বাকিগুলো এমপিও পাওয়ার উপযোগী নয়।
জানা গেছে, নতুন এমপিওর জন্য ৯ হাজার ৪৯৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। এর মধ্যে ৬ হাজার স্কুল ও কলেজ এবং বাকি সাড়ে ৩ হাজার মাদরাসা এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠান। শর্তপূরণ করা স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার তালিকা ধরে সরেজমিন যাচাই শুরু হবে। স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটিকে ওই কাজ দেয়া হবে। কমিটি এমপিওর জন্য আবেদনে দেয়া তথ্য সঠিক কিনা এবং তা নতুন এমপিও নীতিমালার শর্তপূরণ করে কি-না, তা নিরীক্ষা করবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন এমপিওভুক্তির খাতে প্রায় ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। তবে বাজেটে আরও কিছু অর্থ বাড়তি দিয়ে রাখা আছে। যদিও সেটা এমপিও খাতের কি-না বলা হয়নি। তবে আমরা ধরে নিচ্ছি তা এমপিওখাতে ব্যয় করা যাবে। ওই অর্থ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা হবে। কিন্তু একবার কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলে আজীবন তার ব্যয় বহন করতে হয়। হাতে থাকা ৪০০ কোটি টাকায় হয়তো ৪০০ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যাবে। কিন্তু আগামী অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এমপিও দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না।
উল্লেখ্য, যে সাড়ে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে, সেগুলোকে এমপিও দিলে বছরে সরকারের খরচ হবে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা। এমপিও বিতরণকারী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন তিন অধিদফতরের হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে প্রায় ২৮ হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত আছে। এ খাতে সরকারের ব্যয় বরাদ্দ আছে বছরে ১৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। এমপিও খাতের এই ব্যয় বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটের ৬৩ শতাংশের বেশি।