ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ যারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা লেখেন না, তাদের উদ্বেগের কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। যেসব সাংবাদিক মিথ্যে কথা লেখেন না, তাদের উদ্বেগের কিছু নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা লেখে, আমাদের ঘায়েল করার জন্য যারা বসে আছে তাদেরই এ বিষয়ে চিন্তা হবে।
বুধবার সরকারি বাসভবন গণভবনে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগদান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিষোদ্গার ও ‘নোংরামি’র বিরুদ্ধে লড়তেও কাজে লাগবে।
সাইবার সিকিউরিটি প্রত্যেক দেশে বিরাট সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটির না থাকার ফলে দেশে সামাজিক, পারিবারিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, পর্ন ইত্যাদি ছড়াচ্ছে। আমরা সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক সমাজের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উদ্বেগ নিয়ে হাসিনা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। যেসব সাংবাদিক মিথ্যে কথা লেখেন না, তাদের উদ্বেগের কিছু নেই।
তিনি বলেন, যারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে কথা লেখে, আমাদের ঘায়েল করার জন্য যারা বসে আছে তাদেরই এ বিষয়ে চিন্তা হবে।
এ সময় তিনি সম্প্রতি পাশ হওয়া এই আইনে শাস্তির ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নিউইয়র্কে তার সফরের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সফরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরাই তার লক্ষ্য ছিল।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে লেখা হয়, মানহানি করা হয় তাদের বিষয়টি ভাবা হয় না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এমন মিথ্যে সংবাদ যার বিরুদ্ধে করা হয় তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখার পক্ষে মত দেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে মিথ্যে কথা লেখে তারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়। তার কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু যার ক্ষতি হলো তার কী হবে। আমাদের উদ্বেগ কে দেখবে?’
তিনি বলেন, কারও যদি অপরাধী মন না থাকে তবে তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ক্রিকেটার লিটন দাস দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে দেবীর ছবিসহ একটি পোস্ট দেওয়া পর ফেসবুকে ‘বাজে ও বিকৃত’ মন্তব্যের শিকার হন। পরে তিনি ওই পোস্ট সরিয়ে নেন। এ ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে সরকার কী উদ্যোগ নেবে।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এ ধরনের কাজ করে তারা বিকৃতমনা। সরকার এ ধরনের উগ্রবাদের বিরুদ্ধেই কাজ করছে।এগুলো মোকাবেলার জন্য আমরা সাইবার সিকিউরিটি আইন করেছি। এ ধরনের নোংরামি যেন না হয়।
লিটন দাসের প্রশংসা করে িনি আরও বলেন, কী সুন্দর খেলে এসেছে ছেলেটা। আমাদের পুরো দল ভালো খেলেছে। কিন্তু যারা এ ধরনের (সাম্প্রদায়িক আক্রমণ) কাজ করে তারা কিভাবে এটা করে বুঝে আসে না। এরা বিকৃতমনা। এই উগ্রবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধেই আমাদের সরকার কাজ করছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান হাসিনা।
এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সমাজকে সচেতন করে তোলার এবং সাংবাদিকদের তাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখার ওপর জোর দেন এই অবৈধ সরকারপ্রধান।
সংবাদ সম্মেলনের উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মন্ত্রিপরিষদবর্গ, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগদান শেষে সোমবার সকালে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর গণভবনে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
শেখ হাসিনা ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সফরে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা, এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালজুলেইদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইওর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন।
এ সফরে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান রোহিঙ্গা সংকট, সাইবার নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষা এবং বৈশ্বিক মাদকদ্রব্য সমস্যা নিয়ে কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) প্রদত্ত সম্মানজনক ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেন।
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয়দানের মাধ্যমে মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করায় তাকে এ পদকে ভূষিত করা হয়।
পাশাপাশি দূরদৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার জন্য গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের পরিচালনা পর্ষদ তাকে ‘২০১৮ স্পেশাল রিকগনিশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে।