DMCA.com Protection Status
title=""

টকশোতে অসত্য তথ্য দিলে কঠোর ব্যবস্থা সহ সম্প্রচার আইন-২০১৮ পাশ।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব রেখে ‘সম্প্রচার আইন-২০১৮’র খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে হাসিনা মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি সব ধরনের গণমাধ্যমকর্মীর জন্য চাকরির শর্ত ঠিক করে ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০১৮’র খসড়ায়ও নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

 

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে মোট ৬টি আইন ও নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনটি সংসদে পাস হওয়ার পর এখন আর কিছু করার নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন।

বৈঠকের নিয়মিত এজেন্ডা সম্প্রচার আইন-২০১৮ এর বিষয়ে আলোচনার সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতাদের আপত্তি রয়েছে বলে জানান। দুই মন্ত্রী বলেন, ‘এ আইনের কিছু ধারায় পরিবর্তন চেয়ে সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এরই অংশ হিসেবে আজকে (সোমবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সম্পাদক পরিষদ। সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতারা এসেছিলেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা আলোচনার কথা বলেছিলাম।’

তাদের বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদে পাস হয়ে যাওয়ার পর এখন আর কী কথা বলবেন, কী আলোচনা করবেন?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইংল্যান্ডে এই আইন বাংলাদেশের চেয়ে আরও বেশি কঠিন। আইনটি কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য করা হয়নি। যারা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কড়া অবস্থানে থাকবে। যারা সত্য অনুসন্ধানী তাদের তো কোনো সমস্যা নয়। যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকার, দেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাদের জন্য এই আইন।’

তথ্যমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এডিটর কাউন্সিলের মানববন্ধনের বিষয়টি তুলে ধরলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন সম্পাদক তো সব সময় আমার বিরুদ্ধে লেখার জন্য প্রস্তুত থাকে। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন যাতে না হয় সে জন্য ড. ইউনূসের সঙ্গেও তিনি বিশ্বব্যাংকে গিয়ে কথা বলেছিলেন। এসব সম্পাদক তো বিভিন্ন সময় ভুল নিউজ ছেপে সেটি তাদের নয়, একটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নিউজ বলে দুঃখ প্রকাশও করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এত উদ্বেগ কেন? ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ চিন্তা থেকে বিবেচনা করলে হবে না। সমগ্র রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনো বাধা হবে না।’

গঠন হচ্ছে সম্প্রচার কমিশন : ‘সম্প্রচার আইন-২০১৮’র খসড়া নীতিগত অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘এই আইনটি নতুন। যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সঙ্গে অনেক কনসাল্ট করে আইনটি তৈরি করা হয়েছে। খসড়া আইনে অনলাইন গণমাধ্যমসহ অনেক সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একটি কমিশন করার প্রস্তাব আছে। কমিশনের সংজ্ঞা দেয়া আছে। ক্যাবল অপারেটর, ক্যাবল টেলিভিশন চ্যানেল, ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সংজ্ঞা দেয়া আছে।’

খসড়া আইনে ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিশন গঠনের প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘এটার জন্য একটা সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটির বিধানও রয়েছে। সার্চ কমিটি হবে ৫ সদস্যবিশিষ্ট। তাদের যোগ্যতা বলে দেয়া আছে। সার্চ কমিটি যে সুপারিশ করবে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে। রাষ্ট্রপতি তাদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যানসহ কমিশন করে দেবেন। এর মধ্যে একজন নারী কমিশনারও থাকবেন।’

তিনি বলেন, ‘কমিশনারদের যোগ্যতাও উল্লেখ করা হয়েছে আইনে। যদি কেউ বাংলাদেশে নাগরিক না হন, জাতীয় সংসদ সদস্য বা স্থানীয় সরকারের যে কোনো স্তরের জনপ্রতিনিধির জন্য নির্ধারিত কোনো পদে নির্বাচিত হন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ঘোষিত হন, দেউলিয়া বা অপ্রকৃতস্থ হন, নৈতিক স্খলনের দায়ে যদি দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে কর্মরত থাকেন, কোনো সম্প্রচার বা গণমাধ্যম শিল্প সংক্রান্ত ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, কোনো সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত থাকেন, তবে তারা কেউ কমিশনার হতে পারবেন না। কমিশনার হতে হলে সম্প্রচার, গণমাধ্যম শিল্প, গণমাধ্যম শিক্ষা, আইন, জনপ্রশাসন ব্যবস্থাপনা, ভোক্তা বিষয়াদি বা ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর বিশেষ জ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। চেয়ারম্যান-কমিশনারের একই যোগ্যতা।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের মেয়াদ হবে নিয়োগের তারিখ থেকে ৫ বছর বা ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত তারা কাজ করতে পারবেন। তাদের অপসারণের প্রভিশনও রাখা আছে খসড়া আইনে। শারীরিক বা মানসিকভাবে যদি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন, কমিশন ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কাজে লিপ্তসহ ৬টি কাজের জন্য অযোগ্যতা প্রমাণ করে অপসারণের সুযোগ আছে।’

তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিশনের কোরাম হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘কমিশনের কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে- সম্প্রচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও গতিশীল করা, সম্প্রচার মাধ্যমের মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা। সম্প্রচার মাধ্যমে মতপ্রকাশ ও সম্প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি ও মানদণ্ড অনুসরণ করা। সম্প্রচার ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির পথ সুগম করা।’ এছাড়া নতুন লাইসেন্স ও নিবন্ধন দিতে নির্দেশনা প্রদান; টেলিভিশন, বেতার, ইন্টারনেট ইত্যাদি সম্প্রচার মাধ্যম ও সম্প্রচার যন্ত্রপাতির জন্য সম্প্রচারকারীর অনুকূলে লাইসেন্স ইস্যুর জন্য সুপারিশ করা, সরকারের অনুমতি পেলে কমিশন লাইসেন্স ইস্যু করবে।’

সম্প্রচার লাইসেন্স ও অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধন দেয়ার বিষয়ে কমিশনের একক কর্তৃত্ব থাকবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘অনলাইনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে হোস্টিং করা বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি ও লেখা বা মাল্টিমিডিয়ার অন্য কোনো রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশি নাগরিক বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে।

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স অনুযায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে যন্ত্রপাতি আমদানি, বিক্রি, বিক্রির প্রস্তাব, বিক্রির উদ্দেশ্যে নিজের অধিকার রাখা- এ কাজগুলো করতে পারবেন না। লাইসেন্স লাগবে। নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স ও নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে।’ গণমাধ্যমের বিষয়ে ভোক্তা কমিশনের কাছে নালিশ করতে পারবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কমিশন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবে। দুই বা ততোধিক সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো ঝামেলা বা বিরোধ হলে কমিশন তা নিষ্পত্তি করতে পারবে। এর বিরুদ্ধে সরকারের কাছে আপিল করা যাবে।’

খসড়া আইনে কন্টেন্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে- সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত যে কোনো অডিও, টেক্সট, উপাত্ত, চিত্র বা নকশা (স্থির বা চলমান), ভিজুয়াল উপস্থাপনা, সংকেত বা যে কোনো ধরনের বার্তা বা এগুলোর যে কোনো রূপ সংমিশ্রণ যা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সৃষ্ট প্রক্রিয়াজাত সংরক্ষিত, উদ্ধারকৃত বা কমিউনিকেটেড হতে সক্ষম।

কোনো কিছু সম্প্রচার করতে অনুমতি বা লাইসেন্স লাগবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোনো সম্প্রচারকারী বা অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন ও প্রচার, বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান তথা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ভাষণ, জরুরি আবহাওয়া বার্তা- এ জাতীয় নির্দেশ অমান্য করা। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও রাষ্ট্রীয় আদর্শ-নীতিমালা পরিপন্থী অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন প্রচার করলে অপরাধী হবেন। এমন ২৪টি কাজ করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অপরাধ সংগঠন চলমান রাখলে প্রতিদিনের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা হবে। এ শাস্তি সম্প্রচারকারীর জন্য প্রযোজ্য হবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আদালত যদি বলে তিনি বিকৃত মস্তিষ্ক, আদালত যদি ২ বছর বা এর বেশি শাস্তি দেন, দণ্ডিত হওয়ার পর যদি ৫ বছর পার না হয়, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হয়, ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়, ৫ বছরের মধ্যে যদি কমিশন লাইসেন্স বা নিবন্ধন বাতিল করে থাকে তবে লাইসেন্স পাবেন না।’ এ ব্যক্তিরা যদি লাইসেন্স নিয়ে সম্প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যান তবে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড। এ অপরাধ চলমান রাখলে দৈনিক ১ লাখ টাকা জরিমানা হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, ‘খসড়া আইনানুযায়ী বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না, এগুলো জামিনযোগ্য অপরাধ।’

গণমাধ্যমকর্মী হচ্ছেন সাংবাদিকরা : ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন-২০১৮’-এর খসড়ায় সাংবাদিকদের আগের মতো ‘শ্রমিক’ হিসেবে বর্ণনা না করে ‘গণমাধ্যমকর্মী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, আগে গণমাধ্যমকর্মীরা চলতেন ‘দ্য নিউজ পেপার এমপ্লয়িজ (চাকরির শর্তাবলী) আইন-১৯৭৪’-এর আওতায়। এর সঙ্গে শ্রম আইনের কিছু বিষয় সাংঘর্ষিক হচ্ছিল। পরে সাংবাদিকদের শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং ডেফিনেশনের মধ্যে তাদের শ্রমিক হিসেবে ডিফাইন করা হয়। নতুন আইনের খসড়ায় ওখান থেকে বেরিয়ে এসেছে।’

শফিউল আলম বলেন, “শ্রম আইনের অধীনে গণমাধ্যমকর্মীদেরও ‘শ্রমিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। নতুন আইন পাস হলে গণমাধ্যমকর্মীরা আর শ্রমিক থাকবেন না, তাদের গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে অভিহিত করা হবে।” দ্য নিউজ পেপার এমপ্লয়িজ (চাকরির শর্তাবলী) আইনে সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রেস কর্মচারীদের চাকরির শর্ত, আর্থিক বিষয় ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা ছিল। সরকার ওই আইনকে রহিত করে সব শ্রমিকের জন্য ২০০৬ সালে ‘শ্রম আইন’ প্রণয়ন করে, যাতে সংবাদপত্রের সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রেস কর্মচারীদের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন আইনের খসড়ায় গণমাধ্যমকর্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- গণমাধ্যমে কর্মরত পূর্ণকালীন সাংবাদিক, কলাকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী বা নিবন্ধিত সংবাদপত্রের মালিকানাধীন ছাপাখানা এবং বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিত কর্মীরা হলেন গণমাধ্যমকর্মী। সম্প্রচার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত গণমাধ্যমকর্মীরা সম্প্রচার কর্মী এবং প্রযোজক, পাণ্ডুলিপি লেখক, শিল্পী, ডিজাইনার, কার্টুনিস্ট, ক্যামেরাম্যান, অডিও ও ভিডিও এডিটর, চিত্র সম্পাদক, শব্দ ধারণকারী, ক্যামেরা সহকারী, গ্রাফিক্স ডিজাইনারসহ যে পেশাজীবীরা এ কাজের সঙ্গে জড়িত, প্রস্তাবিত আইনে তাদের ‘কলাকুশলী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

গণমাধ্যমকর্মীদের সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৬ ঘণ্টা করার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘এর চেয়ে বেশি কাজ করালে ওভারটাইম দিতে হবে। আগের ১০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি (সিএল) ১৫ দিন করা হয়েছে। অর্জিত ছুটি ৬০ দিনের বদলে ১০০ দিন করা হচ্ছে, ১১ দিনে ১ দিন করে ছুটি জমা হবে।’ প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী চাকরির ১৮ ভাগের ১ ভাগ সময় পূর্ণ বেতনে অসুস্থতাজনিত ছুটি পাবেন; সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে। এককালীন বা একাধিকবার সর্বোচ্চ ১০ দিন উৎসব ছুটি পাবেন। নারীকর্মীরা সরকারি বিধি অনুযায়ী, অর্থাৎ ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। আগে ৮ সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতেন নারী গণমাধ্যমকর্মীরা। গণমাধ্যম কর্মীদের ৩ বছর পরপর পূর্ণ বেতনে শ্রান্তি বিনোদন ছুটি এবং বিধিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।

নতুন আইন হলে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করতে হবে জানিয়ে কেবিনেট সচিব বলেন, নিয়োগের এক বছর পর থেকে ভবিষ্যৎ তহবিলে মাসিক চাঁদা জমা দেয়া যাবে। আগে দুই বছর চাকরি পার হলে ভবিষ্যৎ তহবিলে চাঁদা জমা দেয়া যেত। সর্বনিু ৮ ও সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এ তহবিলে জমা রাখা যাবে। আগে ৭ শতাংশ জমা রাখা যেত। মালিককে সমান হারে প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা রাখতে হবে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রচলতি আইন অনুসরণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করে অভিযোগ নিরসন পদ্ধতি প্রবর্তন করার কথা বলা হচ্ছে খসড়ায়। নতুন আইনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন কাঠামো পর্যালোচনার জন্য সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওয়েজবোর্ড গঠন করবে।

ওয়েজবোর্ডের সিদ্ধান্ত সব গণমাধ্যম মালিককে পালন করতে হবে জানিয়ে শফিউল বলেন, যদি কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে কোনো কর্মীর বকেয়া থাকে তবে তিনি বা তার লিখিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, মৃত গণমাধ্যমকর্মীর ক্ষেত্রে তার পরিবারের কোনো সদস্য বকেয়া পাওনা আদায়ে যথোপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন। এ আইনের বিধি লঙ্ঘন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে, এজন্য সর্বনিু ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। জরিমানা আদায় না হলে আদালত জেল দিতে পারবেন। সরকার এ আইন লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়াসহ যে কোনো পর্যায়ে সরকার প্রদত্ত যে কোনো সুযোগ-সুবিধা স্থগিত বা বন্ধ করে দিতে পারবে।

এ আইন পাস হলে পরিদর্শন কমিটি করা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা পরিদর্শক হিসেবে গণ্য হবেন। পরিদর্শন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চাকরিবিধি থাকবে। কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি, সেটি বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!