লক্ষ্যটা সহজ ছিলো না বাংলাদেশের জন্য, সিরিজের নিজেদের সর্বোচ্চ ২৮৬ রান করে ফেলেছিল জিম্বাবুয়ে। তার ওপরে রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরে যান লিটন কুমার দাস। যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে যায় সফরকারীরা।
তবে তাদের সুখটা দীর্ঘস্থায়ী হতে দেননি ইমরুল কায়েস এবং সৌম্য সরকার। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এক গাদা রেকর্ড গড়ে দলকে এনে দিয়েছেন সহজ জয়, দুজনই তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। ৪১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের সহজ জয়ে বাংলাদেশ সম্পন্ন করেছে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশন, যা কি-না অনুমেয় ছিলো সিরিজ শুরুর আগেই।
সিরিজে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ১১২ বল খেলে করেন ১১৫ রান। ১০টি চারের পাশাপাশি হাঁকান দুইটি বিশাল ছক্কা। ইমরুলের সমান তালে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় এবং নিজের দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন সৌম্য। মাত্র ৯২ বলে ৯ চার ও ৬টি আকাশছোঁয়া ছক্কায় সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে ১১৭ রান। শেষদিকে মুশফিকুর রহিম ২৮ ও মোহাম্মদ মিঠুন ৭ রান করে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ে শুরুতেই পড়ে দুই পেসার সাইফউদ্দিন আর আবু হায়দার রনির তোপের মুখে। নিজের করা দ্বিতীয় ওভারেই ঝড় তুলে দিলেন রনি। দুজন মিলেন ফিরিয়ে দেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও সেফাস ঝুয়াওকে।
রনি নিজের দ্বিতীয় ওভারে আঘাত হানার আগেই ঝড় তুলেছিলেন আগের ম্যাচের সেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ইনিংসের প্রথম ওভার করেন আবু হায়দার রনি। অন্যপ্রান্ত থেকে পরের ওভার করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই ঝুয়াওকে সরাসরি বোল্ড করেন সাইফ।
কোনো রান না করেই ফিরে যান জুওয়াও। নিজের দ্বিতীয় এবং ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ঝড়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন আবু হায়দার রনি। তিনি বোল্ড করে দেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে। ১০ বলে খেলে ২ রান করেই সাজঘরে ফিরে যান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক।
তিন ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। টানা ২৩ বলে নিতে পারেনি কোনো রান। ম্যাচের সময় গড়াতেই সে চাপ কাটিয়ে ওঠে সফরকারীরা। ব্রেন্ডন টেলর ও শন উইলিয়ামসের শতরানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে জিম্বাবুয়ে।
আগের ম্যাচে দলকে একাই টেনেছিলেন টেলর, এ ম্যাচেও শক্ত ব্যাটে প্রতিহত করেছেন টাইগার পেসারদের আক্রমণ। শুরুতে রয়ে সয়ে খেললেও ধীরে ধীরে খোলস থেকে বেরিয়ে আসেন টেলর। তুলে নেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। উইলিয়ামসকে সাথে নিয়ে শতরানের জুটি গড়ে এগিয়ে নিয়ে যান দলের সংগ্রহকে।
অপর প্রান্তে ফিফটি তুলে নিয়েছেন উইলিয়ামসও। আগের দুই ম্যাচেও ভালো ব্যাটিং করেছেন উইলিয়ামস। প্রথম ম্যাচে ৫০ রান করার পরে দ্বিতীয় ম্যাচেও খেলেন ৭ রানের ইনিংস। সে ধারাবাহিকতায় এ ম্যাচেও অর্ধশত পূরণ করে খেলতে থাকেন উইলিয়ামস।
নিখাঁদ ব্যাটিং উইকেট পেয়ে বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হতে শুরু করেন টেলর। মাত্র ৭১ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কার মারে করে ফেলেন ৭৫ রান। তাকে হয়তো তখন আগের ম্যাচের ৭৫ রানের ভুত তাড়া করতে শুরু করে।
তাই ইনিংসের ২৭তম ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিতে অনেক বাইরের বলে স্লগ সুইপ করতে যান টেলর। বল ব্যাটের উপরের কানায় লেগে উঠে যায় সোজা উপরে। ব্যাটসম্যানের কাছ থেকেই সহজ ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেন মুশফিক। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৫ রানে ফেরেন টেলর। ভেঙে যায় ১৩২ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।
প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়েছিলেন ব্রেন্ডন টেলর এবং শন উইলিয়ামস। টেলর ফিরে গেলেও দুজনের তৃতীয় উইকেট জুটির গড়ে দেয়া ভীত কাজে লাগিয়ে দলকে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে নিতে থাকেন সিরিজে দ্বিতীয় পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলা উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজা।
দলীয় ১৩৮ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন টেলর। তার বিদায়ের পরে রানের চাকা সচল রাখেন পরের দুই ব্যাটসম্যান। ফিফটির আগপর্যন্ত ধীর ব্যাটিং করা উইলিয়ামস হঠাৎ করেই খেলতে শুরু করেন হাত খুলে। অন্যদিকে উইকেটে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন রাজা। খেলতে থাকেন সাবলীলভাবে।
চতুর্থ উইকেটে মাত্র ৫৮ বলেই পঞ্চাশ রানের জুটি গড়ে ফেলেন উইলিয়ামস ও রাজা। ইনিংসের ৩৮তম ওভারেই দলীয় ২০০ পূরণ করে ফেলে জিম্বাবুয়ে। চতুর্থ উইকেট জুটিও এগিয়ে যাচ্ছিলো শতরানের দিকে। তখন আবার আঘাত হানেন বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল। ফুলটস বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লংঅন বাউন্ডারিতে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন রাজা।
আউট হওয়ার আগে ৫১ বল খেলে ২ চার ও ১ ছক্কার মারে ৪০ রান করেন এ অফস্পিনিং অলরাউন্ডার। রাজা ফিরে গেলেও অপর প্রান্তে অবিচল থাকেন উইলিয়ামস। তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১২৪ বলে ৭ চারের মারে নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।
রাজার বিদায়ে উইকেটে আসেন পিটার মুর। নেমেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন তিনি। উইলিয়ামসের সাথে পঞ্চম উইকেট জুটিতে মাত্র ৪৩ বলে ৬২ রান যোগ করেন মুর। ইনিংস শেষ হওয়ার ৪ বল আগে আরিফুলের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি, ২ ছক্কার মারে খেলেন ২১ বলে ২৮ রানের ইনিংস।
তবে শেষপর্যন্ত অপরাজিত থেকে যান সেঞ্চুরিয়ান শন উইলিয়ামস। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ১৪৩ বলে ১০ চার এবং ১ ছক্কার মারে ১২৯ রান করেন এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের পক্ষে নাজমুল ইসলাম অপু ২টি এবং আবু হায়দার রনি ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন নেন ১টি করে উইকেট।