ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তি করায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ঢাকা ও নেত্রকোনায় তার বিরুদ্ধে এই নতুন আইনে দুটি মামলা হয়।
এ ছাড়া রাজবাড়ীতে তার বিরুদ্ধে আরও একটি মানহানির মামলা হয়েছে। এ নিয়ে মইনুলের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা হল। এদিকে চুয়াডাঙ্গা, গাইবান্ধা ও বরিশালে তার বিচার দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এ সময় তার ফাঁসিও দাবি করা হয়।
বুধবার ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য, শিক্ষানবিস আইনজীবী সুমনা আক্তার লিলি বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি গুলশান থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে গণ্য করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) শামীম আল মামুন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে দেয়া জবানবন্দিতে সুমনা আক্তার লিলি বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ১৬ অক্টোবর ৭১ টেলিভিশনের লাইভ টেলিকনফারেন্সে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির এক প্রশ্নের জবাবে তাকে ‘চরিত্রহীন’ বলেন। এরপর তিনি ১৮ অক্টোবর ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলেছেন- শুধু তিনিই চরিত্রহীন বলছেন না, আরও অনেকেই তাকে চরিত্রহীন বলছেন।
সর্বশেষ তিনি সাংবাদিক রব মজুমদারের সঙ্গে টেলিফোনে ওই নারী সাংবাদিক সম্পর্কে একাধিকবার ‘বাজে মেয়ে’ বলে সম্বোধন করেন। তার ওই সমস্ত বক্তব্য দেশের সমস্ত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ও পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার (ব্যারিস্টার মইনুল) ওই বক্তব্যে শুধু সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিরই মানহানি হয়নি।
সমগ্র নারী জাতিকে অপমান করায় মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আমি একজন নারী হিসেবে মামলাটি দায়ের করছি। ট্রাইব্যুনালে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী মো. নজিবউল্ল্যা হিরু বাদীপক্ষে শুনানি করেন।
নেত্রকোনা : মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কামরুন্নেছা আশরাফ দীনা বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে নেত্রকোনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে-১ এই মামলা করেন। বিজ্ঞ বিচারক শরিফুল হক মামলাটি আমলে নিলেও বুধবার বিকাল পর্যন্ত কোনো আদেশ দেননি।
রাজবাড়ী : সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে কোটি টাকার মানহানি মামলা হয়েছে। বুধবার সকালে মামলাটি করেন জেলার কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোছা. সালেহা বেগম। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লাবণী আক্তার মামলাটি আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার বাদী সালেহা বেগম বলেন, মাসুদা ভাট্টিকে প্রকাশ্যে চরিত্রহীন বলায় নারী জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন ও সমগ্র নারী জাতির মানহানি করা হয়েছে। তাই একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
বরিশাল : মাসুদা ভাট্টির প্রতি মানহানিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে বরিশালে মানববন্ধন হয়েছে। বুধবার দুপুরে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।
জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) : বুধবার বেলা ১১টার দিকে জীবননগর বাসস্ট্যান্ড চত্বরে মইনুল হোসেনের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। উপজেলা মহিলা লীগ, নারী সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে।
গাইবান্ধা : মইনুল হোসেনের ফাঁসির দাবিতে বুধবার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আসিফ সরকারের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কারাগারে সাধারণ বন্দিরের সঙ্গে মইনুল : ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের করতোয়া সেলে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে আছেন। তার সঙ্গে আরও ৩০-৩৪ জন বন্দি আছেন। আদালতের নির্দেশে বুধবার কারাগারে যাওয়ার পর তাকে তিনটি কম্বল দেয়া হয়।
একটি কম্বল ফ্লোরে বিছিয়েছেন। অন্যটি ব্যবহার করছেন বালিশ হিসেবে। অপরটি গায়ে দিয়ে তিনি রাত্রী যাপন করছেন। ব্যারিস্টার মইনুলকে যে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে সেখানে কোনো খাট বা চেয়ারের ব্যবস্থা নেই। কারাগারের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শেরপুর : মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে বুধবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা নালিশি দরখাস্ত সংশ্লিষ্ট আইনে আমলে গ্রহণের সুযোগ নেই মর্মে ফেরত দিয়েছেন সিআর আমলি আদালত। জানা যায়, শেরপুর শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানিক দত্ত বাদী হয়ে বুধবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯(১) ধারায় নালিশি দরখাস্তটি করেন। আদালতের বিচারক আদেশে বলেন, সংশ্লিষ্ট আইনটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই আইনে বর্ণিত অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণের ক্ষমতা ধারা ৪৯ এ বর্ণিত রয়েছে।