মৌসুমের শুরুতেই জানা হয়ে গিয়েছিল, প্রতিটা এল ক্ল্যাসিকোর ভেতরেও যে ক্ল্যাসিক লড়াই হতো দুই ফুটবলারের মধ্যে, সেটা এবার থেকে আর হচ্ছে না। কারণ, রিয়ার মাদ্রিদ ছেড়ে যে ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো! মেসি-রোনালদো লড়াই সে কারণেই আপাতত আর দেখার সম্ভাবনা নেই।
কিন্তু এল ক্ল্যাসিকোর কি যে দুর্ভাগ্য, এই প্রথম ফুটবলের জমজমাট লড়াইটি মাঠে গড়াবে শুধু রোনালদোকে ছাড়াই নয়, লিওনেল মেসিকে ছাড়াও। হাতের ইনজুরির কারণে এই ম্যাচে স্রেফ দর্শক হয়ে থাকতে হবে বার্সার আর্জেন্টাইন কিংবদন্তীকে।
সুতরাং, একজন থাকছেন গ্যালারিতে। ডান হাত থাকবে স্লিং দিয়ে ঝোলানো। হয়তো বা ছেলেরা বসে থাকবে পাশে। এবং অন্যজন পুরোপুরি অন্য দেশে। হয়তো বা বসে থাকবেন তুরিনে নিজের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। টিভিতে চোখ রাখবেন কি না জানা নেই!
গত ৯টি বছর ধরে মেসি বনাম রোনাল্দো নামেই উত্তাপ চড়ত এই এল ক্ল্যাসিকো। ৯ বছরে এই প্রথম দুই তারকার কেউ নেই মহা জমজমাট ম্যাচে। এই কেউ না থাকা ঘিরেই অঙ্ক কষা চলছে দুই কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে এবং হুলেন লোপেতেগুইর। বার্সা কোচ ভালভার্দে দুই তারকার না থাকাকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তার মন্তব্য, ‘মেসি-রোনাল্দো আসার আগেও এল ক্লাসিকো খেলা হত। সেখানে যথেষ্ট টেনশনও থাকত। শুয়োরের মাথাও মাঠে ফেলা হয়েছিল, এই ম্যাচে।’
দুই তারকা না খেললেও এখনও এই ম্যাচের আকর্ষণ যে বিশাল তা বোঝা যাচ্ছে অন্য ক্লাবের ফুটবলারের কথাতেই। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের আন্তোনিও গ্রিজম্যান যেমন। ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে থাকা ফরাসি তারকা সরাসরি এগিয়ে রেখেছেন বার্সেলোনাকেই। তার কথায়, ‘প্রতিটা এল ক্লাসিকোর মতো এটাও সুন্দর ম্যাচ হতে চলেছে। এটা খুব খারাপ যে মেসি খেলতে পারছে না। বার্সেলোনার সে রকম ফুটবলার আছে, যারা এই ম্যাচ জেতাতে পারে। উল্টো দিকে, মাদ্রিদের কিন্তু জয় খুব দরকার।’
মেসি-রোনালদোর না থাকাটা যে ভক্ত-সমর্থকরা মিস করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এল ক্ল্যাসিকো মানেই মেসি-রোনালদোর দ্বৈরথ, এটাতে তো অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে ভক্ত-সমর্থকরা। সেই অভ্যস্ততা থেকে হুট করে কিভাবে তারা বেরিয়ে আসবে, সেটাই অনেকটা ভাবার বিষয়।
ম্যাচটা যেহেতু ন্যু ক্যাম্পে। স্বাভাবিকভাবেই বার্সা সমর্থকই থাকবে বেশি। তারা মিস করবে মেসির গোল, ড্রিবলিং, অন্যকিছুর চেয়েও তার উপস্থিতি- সব কিছুই। ভক্তদের কছে এল ক্ল্যাসিকোকে পুরো শূন্যই মনে হতে পারে মেসির অনুপস্থিতিটা। কারণ, ইনজুরির কারণে তিন থেকে চার সপ্তাহ মাঠের বাইরে বার্সার সেরা তারকা।
২০০৭ সালের পর থেকে এই প্রথম মেসি এবং রোনালদোর দু’জনকে ছাড়াই প্রথম এল ক্ল্যাসিকো। ২০০৯ সাল থেকে রোনালদো যোগ হয়েছিলেন। তার আগের দুই বছর ছিলেন মেসি। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ মেসি এবং রোনালদোছাড়া এল ক্ল্যাসিকো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেবার হুলিয়ান ব্যাপ্তিস্তার গোলে ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ।
এরপর থেকে মোট ৩৫টি এল ক্ল্যাসিকো অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় সবগুলো ম্যাচই খেলেছেন মেসি। তার আগেই এল ক্ল্যাসিকোয় হ্যাটট্রিক করে ফেলেছিলেন মেসি। দুটি ফ্রি কিক থেকে। অন্য গোলটি করেছিলেন রিয়ালের ৫জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে। যার মধ্যে দু’বারই ছিলেন সার্জিও রামোস।
১৯০২ সালে এল ক্ল্যাসিকো লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে মেসিকে ছাড়া মাঠে গড়িয়েছে মোট ১৯৯টি ম্যাচ। এ গুলো কিংবা মেসি অবসর নেয়ার পরেও অনেক এল ক্ল্যাসিকো অনুষ্ঠিত হবে। তবে, বর্তমান সময়ে মেসিকেছাড়া এল ক্ল্যাসিকো অনুষ্ঠিত হওয়া মানেই দর্শক-সমর্থকদের জন্য বিশাল এক শূন্যতা। রোনালদো নেই, যে কারণে দ্বৈরথ জমবে না। সেখানে ইনজুরির কারণে মেসিও নেই। এল ক্ল্যাসিকো কতটা জমে ওঠে, সেটাই এখন দেখার পালা।