>> দেশের ৬০ লাখ গাড়ি ফিটনেসবিহীন
>> সড়ক দুর্ঘটনায় দিনে নিহত ১৫ জন
>> দিনে গড়ে ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনা
ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশে ফিটনেসবিহীন ৬০ লাখ গাড়ি চলছে। এসব গাড়ির চালকের মাধ্যমেই যত্রতত্র পরিবহন দুর্ঘটনা ঘটছে। গত বছর সারাদেশে ৩৩৪৯টি দুর্ঘটনায় ১৩ হাজার ৫৫৩ জন হতাহত হয়েছেন। এ তথ্য দিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত প্রশিক্ষিত চালকদের মাঝে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুল রহমান।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা নিরসন করতে হলে প্রথমে সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি আসে। দুর্ঘটনার জন্য জেল-জরিমানাতে সমাধান নয়; সমাধান এর কারণ উৎঘাটন করে তা লাঘব করা।’
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ, ত্রুটি সংশোধন ও চালককে দক্ষ করে গড়ে তুলতে ইনস্টিটিউশনের বিকল্প নেই।’
সড়ক দুর্ঘটনারোধে ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘সকল আইনে শুধু শাস্তির বিধান থাকে না, সংশোধনেরও একটা উদ্যোগ থাকে। এমন কিছু অপরাধ আছে যা সংশোধনের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। এমনিতেই আমাদের দেশে চালকের সংকট রয়েছে, সেক্ষেত্রে শুধু শাস্তি দিলেই সকল সমাধান হবে না। সংশোধনের মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ দিতে হবে।’
তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় শাস্তির মেয়াদ দশ বছর করা, অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং লাইসেন্সবিহীন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালে এবং তাতে কারও মৃত্যু হলে ৩০২ ধারায় মামলা করা প্রয়োজন বলে মত দেন।
‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ আইন প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এই আইনে সকল বিষয় উঠে আসেনি। সেখানে শুধু শাস্তির বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ ছিল তুলনামূলক কম। এ বছর সারাদেশে ২৬২৬টি দুর্ঘটনায় ৫০০৩ জন নিহত ও ৬১৯৭ জন আহত হন। ২০১৬ সালে আরও কমে ২৩১৬টি দুর্ঘটনায় ৪১৪৪ জন নিহত ও ৫২২৫ জন আহত হন। ২০১৭ সালে এটি নাটকীয়ভাবে বেড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩৪৯টিতে (প্রতিদিন গড়ে ৯টি)। এতে ৭৯০৮ জন আহত ও ৫৬৪৫ জন (প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন) নিহত হয়েছেন।’
এসব দুর্ঘটনায় নিহত ২৭ ভাগই মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন উল্লেখ করে নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘দুর্ঘটনা কমাতে চালকদের সচেতন করে তুলতে আমরা এসএসসি পাস চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলছি। এ ছাড়াও শিক্ষার্থী-শিক্ষকদেরও নিরাপদ সড়ক বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।’
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে বর্তমান সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলোকে প্রসারিত করা হচ্ছে। যানজট কমাতে নতুন নতুন ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে। নতুন করে সড়ক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সবার আগে গাড়িচালক ও যাত্রীদের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য ট্রাফিক পুলিশকে আরও বেশি দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। পথচারীদের ওভারব্রিজ ব্যবহারে আগ্রহী হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সকল কিছু আইন করে বাধ্য করা সম্ভব হয় না, প্রয়োজন জনসচেতনতা।’
অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত ৩৫ জন প্রশিক্ষিত চালককে দক্ষতার সনদ তুলে দেয়া হয়। এ ছাড়াও নতুন করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেয়া দেন ইলিয়াস কাঞ্চন।