ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেছেন, ‘কেউ ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটায় না। দুর্ঘটনায় সবার মৃত্যু কিংবা পঙ্গুত্বের ঝুঁকি রয়েছে। এরপরও বিরানহীন গাড়ি চালাই। ফাঁসির দড়ি-জরিমানা নিয়ে গাড়ি চালানো যায় না। কেউ পারবেন না। আমাদের দাবি নতুন আইন বাতিল নয়, সংশোধন।’
শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ৮ দফা দাবিতে পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
পূর্বনির্ধারিত এ সমাবেশে যোগ দিতে বিকেল ৩টার পর থেকে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেন দেশের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশ সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় শেষ হওয়ার পর রাস্তায় ফের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অনুষ্ঠানে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘আমরা ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। সরকারের বিভিন্নপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের দাবি আপনারা মানেননি। আমাদের দাবি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি চলবে।’
তিনি বলেন, ‘একটা শ্রমিককে জরিমানার বিধান করেছেন ৫ লাখ টাকা। শ্রমিকের যদি ৫ লাখ টাকাই থাকতো তবে সে গাড়ি চালাতো না। গাড়ির মালিক হয়ে যেতো।’
ওসমান আলী আরও বলেন, ‘দেশের এমপি হতে সার্টিফিকেট লাগে না। প্রধানমন্ত্রী হতে এসএসসি পাস লাগে না। অথচ গাড়ির চালক হতে নাকি এসএসসি পাস লাগবে। আমরা এমন আইন মানি না। পরিবহন শ্রমিকরা কলাগাছ না। ধাক্কাধাক্কি করবেন না। আমাদের দেয়ালে ঠেকিয়ে দিলে আমরাও পিঠের চামড়া কারও রাখব না।’
‘আমাদের কাল থেকে শুরুর আন্দোলনে পিকেটিং থাকবে না। কিন্তু থার্ডপার্টি, পুলিশ কিংবা অন্য কোনো পক্ষ যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে তবে তা রুখে দেয়া হবে’ বলেন এ পরিবহন শ্রমিক নেতা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি এবং ঢাকা বিভাগীয় অঞ্চল ও ঢাকা আন্তঃজেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সাদিকুর রহমান হিরু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি ২০১৩ ও ২০১৪ সালে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, আমরা সহযোগিতা করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলো আমাদের ভুলে গেলেন। এখন আমাদের ওপর শাস্তির বোঝা চাপিয়ে দেন কী করে?’
নৌপরিবহনমন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘তিনি মেহনতি মানুষের পক্ষে আছেন। তার বিরুদ্ধে অনেকে কথা বলেন। কিন্তু তিনি অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন। নিরাপদ সড়কের কথা বলেন, কিন্তু সড়ক নিরাপদ করতে পারেন না। লরি চলে, ট্রাক চলে দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। কোথায় বিশ্রামের জায়গা নাই, পানি পানেরও ব্যবস্থা নাই। সড়কের নিরাপত্তা নাই। শুধু সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য শ্রমিকদের ফাঁসির দড়ি ঝোলানোর কথা বলা হচ্ছে।’
সাদিকুর রহমান হিরু আরও বলেন, ‘কোনো অবস্থাতে হাইওয়েতে ছোট যান চলবে না। কিন্তু চলছে। ঢাকায় আমাদের শ্রমিকরা গাড়িতে বসেই ঘুমান, কোনো ব্যবস্থা আপনারা করেন নাই। দুর্ঘটনা ঘটলেই সব দোষ চালক-হেলপারের নয়। ইচ্ছে করে মানুষ কেউ মারতে চায় না।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন-ঢাকা পরিবহন শ্রমিক নেতা কায়সার আহমেদ পলাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান প্রমুখ।
ফেডারেশনের ৮ দফা দাবিগুলো হলো : সড়ক দুর্ঘটনায় সব মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে; শ্রমিকদের অর্থদণ্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না; সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে; ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে; ওয়েস্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করতে হবে; সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে; গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে; সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে এবং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘট পালন করেন।