ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশের মানুষ গত ১০ বছর ভোটাধিকার বঞ্চিত। এর মধ্যে নতুন ও তরুণ ভোটার রয়েছেন অনেক। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোট প্রদানের নিশ্চয়তা না থাকলে ভোট ছাড়াই জাতির একটি যৌবনকাল চলে যাবে। তাই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শক্ত অবস্থান নিয়ে সঠিক সময়ে সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে দি ঢাকা ফোরাম আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব মন্তব্য করেন বক্তারা।
তারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য ৯০ দিন সময় প্রয়োজন। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে সময় আছে মাত্র ৪৫ দিন। ইসি চাইলে এ সময়ের মধ্যেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে। এ জন্য ইসির পাশাপাশি সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা ও সংশয় রয়েছে। আর ইসি এটি করতে ব্যর্থ হলে জাতির একটি ভোটবিহীন যৌবনকাল চলে যাবে। কারণ গত ১০ বছর যাবত তরুণরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত আছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে আসন্ন সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো অবস্থা দেখছি না। যদিও বিভিন্ন ঐক্য তৈরি হয়েছে। এতে একটা ভালো বিরোধী পক্ষ তৈরি হবে। যা এতদিন ছিল না।
তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এখনও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। এজন্য ইসির শক্ত অবস্থান দরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ এখন ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশ কোন সমাজের দিকে যাচ্ছে বলা কঠিন। দেশে টেকশই ও সমতা ভিত্তিক অর্থনীতি গড়তে একটি নির্বাচন ও গণতন্ত্রের প্রয়োজন। আগে নির্বাচন মানে ছিল উৎসব, আজ নির্বাচন মানেই ভীতি। কেউ ভোট দিতে পারেন, কেউ ভোটের সুযোগ হারান।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কমেনি। তাহলে এ উন্নতির মানে কি? তাই দেশের সমতার ভিত্তিতে উন্নয়ন করতে হবে। এজন্য সুশাসন প্রয়োজন। আর সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যার জন্য দরকার সবার অংশ গ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, গত ১০ বছর ধরে তরুণরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আসন্ন নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার না থাকলে ভোট ছাড়া জাতির একটি যৌবনকাল চলে যাবে।
তিনি বলেন, এখন অনেকেরই ফোনালাপ ফাঁস হচ্ছে। যখন স্বর্ণ বালা হয়ে যায়, রিজার্ভ চুরি হয়ে যায় তখনও মন্ত্রী-এমপিরা কথা বলেন। কিন্তু তাদের ফোনালাপ ফাঁস হয় না। নির্বাচনের আগেই গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধীদের ব্যস্ত রাখা হচ্ছে। খেলার আগেই প্রাকটিস বন্ধ করা হচ্ছে, রেফারি নিজের মতো নেয়া হচ্ছে। এতেই বোঝা যায় খেলা কেমন হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, দেশে কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। নাসিক মেয়র আইভি সম্পর্কে শামীম ওসমান খারাপ মন্তব্য করলে তখন কিছু হয় না। কিন্তু মইনুল একটা কথা বললো অথচ তার জামিনযোগ্য মামলায় জামিন দেয়া হচ্ছে না। জাফরুল্লাহকে মাছ চুরি, খাবার চুরির মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এর কারণ তারা গণতন্ত্র উদ্ধারে কাজ করছেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম, এফ এ শামিম আহমেদ, ইখতেখার করিম, মাসুদ আজিজ, সংসদ সদস্য ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।