ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি চলাকালীন ১ম দিনে (২৮ অক্টোবর) সিলেট অঞ্চলে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় নবজাতক শিশুর মৃত্যু এবং শিক্ষার্থী, কর্মজীবীসহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, চলমান ঘটনায় আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
তিনি গত ২৮ অক্টোবর লন্ডনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে অপ্রীতিকর নানা ঘটনা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি পাঠিয়েছেন।
একটি শিশুর অমানবিক মৃত্যুর ঘটনায় ব্যথিত হৃদয়ে প্রশ্ন করেন এ মৃত্যুর দায় নেবে কে? কতটা অমানবিক এ ঘটনা তা ভাষায় ব্যক্তহীন। তিনি সকলের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কি মানবিক চরিত্র হারিয়ে ফেলছি? চলমান পরিস্থিতিতে জনভোগান্তি নিরসনে তিনি সরকারের প্রতি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
সোমবার (২৯ অক্টোবর) নিসচার প্রচার সম্পাদক এ কে এম ওবায়দুর রহমান স্বাক্ষরিত এ বিবৃতি পাঠানো হয়। বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে সড়কে নৈরাজ্য বন্ধ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়কে মানবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ধর্মঘট কিংবা কর্মবিরতির অধিকার শ্রমিকদের আছে।
তবে না মানার অধিকারও একজন মানুষের আছে। তিনি বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের গাড়ি চালাতে বাধা প্রদান, তাদের শরীরে মবিল মেখে দেয়া, কান ধরে ওঠবস, শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহনে বাধা দেয়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করেন, মৌলভীবাজারে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা দেয়ায় হাসপাতালে নিতে না পারায় সাতদিন বয়সী নবজাতক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় এ মৃত্যুর দায় কার? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের বার্ষিক পরীক্ষা এবং জেএসসি পরীক্ষার আগে এ ধর্মঘটে তাদের যাতায়াত বিঘ্নিত হচ্ছে।
পরিবহন ধর্মঘটে জনভোগান্তিতে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি অনতিবিলম্বে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জনগণকে প্রতিপক্ষ করে তারা কি চাইছেন? তাদের দাবির যৌক্তিকতা যদি থাকে তাহলে তারা জনগণের কাছে যান, দাবি তুলে ধরে জনমত তৈরি করেন- সেটাই হবে প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চা।
জোর করে বাধ্য করে কোনকিছু আদায় করার নামে প্রতিপক্ষ তৈরি করা নয় কি? তারা কি জনগণকে প্রতিপক্ষ বানাতে চাইছেন বা প্রতিপক্ষ বানিয়ে কোনও ইস্যু তৈরি করতে চাচ্ছেন? এসব অপ্রীতিকর ঘটনায় তারা কি আবার সাধারণ জনগণকে মাঠে নামাতে চাইছেন? আমি তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো এসব অপ্রীতিকর ঘটনা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি পালন করুন।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। ফলে কেউ আমাকে প্রতিপক্ষ মনে করলেও আমি কাউকে প্রতিপক্ষ মনে করি না। সবাইকে মিত্র ভাবি, বন্ধু ভাবি। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে সড়ককে নিরাপদ করা সম্ভব। কোথাও কোন সমস্যা দেখা দিলে তা আলোচনা করে সমাধান করা সম্ভব, জোর করে বা প্রতিহিংসা দিয়ে নয়।