DMCA.com Protection Status
title="৭

হালুয়া-রুটির আশ্বাসে শেখ হাসিনার উপর বেজায় খুশী বি-দোজা ও শমশেররা।

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মাত্র একদিন আগে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংলাপে কোনও ‘সমাধান না পেলেও’ বিকল্প ধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের নেতারা ইভিএম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পেয়েছেন কয়েকটি আশ্বাস। শুক্রবার (২ নভেম্বর) গণভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে যুক্তফ্রন্টের নেতাদের প্রায় সবার মুখেই ছিল অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা।

নেতাদের কারও কণ্ঠে- ‘শেখ হাসিনা থ্রি ইন ওয়ান’, আবার কেউ বলেছেন, ‘তার শ্রেষ্ঠটা তিনি এখনও দেননি।’ পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যুক্তফ্রন্টের কয়েকজনের বিষয়ে ইতিবাচক স্মৃতিচারণ করেন।


শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটা থেকে গণভবনে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা। এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংলাপ শেষ হলে যুক্তফ্রন্টের নেতারা সরাসরি যান বারিধারায় যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায়।


বি. চৌধুরীর প্রেস সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আলম জানান, বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে বারিধারা থেকে গণভবনে উদ্দেশ্যে যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারার প্রতিনিধিরা রওনা দেন। ৭টা ২৪ মিনিটে প্রতিনিধি দল গণভবনে পৌঁছেন। সংলাপ শেষে রাত ১১টায় বি. চৌধুরী বারিধারার বাসায় এসে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
সংলাপ শেষে বেরিয়ে এসে যুক্তফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বর্ণনা দেন সংলাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে।
সংলাপে অংশ নিতে গণভবনে প্রথমে প্রবেশ করে যুক্তফ্রন্টের দুই নিবন্ধিত দলের একটি বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া ও এনডিপির বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা। এই দুটি দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ছিল। গত ১৬ অক্টোবর তারা জোট ছেড়ে আসে। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে তারা গণভবনের বৈঠককক্ষে প্রবেশ করেন।

এরপর কিছু সময় পর প্রবেশ করেন বিকল্প ধারার সভাপতি ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর অব. মান্নান, বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরীসহ অনেকে।
গণভবনের সংলাপ টেবিলে তখন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। এরপর বি. চৌধুরী প্রবেশ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠককক্ষে আসেন। বি. চৌধুরী ও আবদুল মান্নান, শমসের মবিন ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
যুক্তফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আসন গ্রহণ করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেন। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারপর বিকল্প ধারার মহাসচিব সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্য দেন। পরিচয় করিয়ে দেন প্রতিনিধি দলের সদস্যদের। পরিচয় পর্বের পর বি. চৌধুরী তার জোটের সাতদফা পড়ে শোনান।
বি. চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি তো থ্রি ইন ওয়ান। আপনি দেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা।’
বি. চৌধুরীর পর সংযুক্তিমূলক বক্তব্য দেন শমসের মবিন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ছাড়া নিজ উদ্যোগে সংলাপের আহ্বান করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে জোরদার করেছেন, তাই স্বাগত জানাচ্ছি। এবার বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়নি। আমরা বিশ্বাস করতে চাই আপনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতেই সংলাপ ডেকেছেন। এজন্যই আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’
সংলাপে বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের অভিনন্দন জানান। তাদের উদ্দেশ্যে জেবেল রহমান বলেন, ‘আপনারা প্রত্যেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের নানা ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত, ইতিহাসের অংশ। আর এই প্রজন্মের একজন রাজনৈতিকর্মী হিসেবে এই সংলাপে সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ।’
সংলাপে জেবেল রহমান গাণি এও বলেন, ‘গণতন্ত্রকে এক দিন নয়, কার্যকর অর্থবহ সংসদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রকে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্রের একটি বিষয় আছে। আমি সংঘাতের রাজনীতি ছেড়ে এসেছি এই আশা নিয়ে। আমি সংঘাত বিশ্বাস করি না। নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশকে উন্নত চিন্তায় নিয়ে যেতে চায়। আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনা তার শ্রেষ্ঠটা দেননি। তার শ্রেষ্ঠ কিছু আগামী দিনে দেবেন।’
এই বলে জেবেল রহমান গাণি বক্তব্য শেষ করেন। গাণি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বিতর্কিত নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সূত্র জানায়,  জেবেল রহমান গাণির বাবা শফিকুল গানি স্বপনকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখতেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই শেখ কামালের সঙ্গে স্বপনের বন্ধুত্ব ছিল।’
সংলাপ সূত্র আরও জানায়, যুক্তফ্রন্টের ২১ প্রতিনিধি দলের সবাই বক্তব্য দিয়েছেন। যুক্তফ্রন্টের নেতাদের বক্তব্যের শেষে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, ১৪ দলের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল বক্তব্য দেন।
বৈঠক সূত্রের দাবি, তাদের প্রত্যেকের কণ্ঠেই প্রায় একই বিষয় প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তাদের ভাষ্য, যুক্তফ্রন্টের দাবির উপস্থাপনের ভঙ্গিমা দেখেই মনে হয়েছে, আপনারা (যুক্তফ্রন্ট) গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত রাখার জন্যই এসেছেন। আপনাদের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে তা উঠে এসেছে।
সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল যুক্তফ্রন্টের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অবস্থানই এক জায়গা নিয়ে আসে। বিরোধিতা করলেও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আপস করে পথচলা যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী ও আমির হোসেন আমুর কণ্ঠে প্রতিশ্রুতি ছিল অনেকটা এরকম, ‘আমরা নির্বাচনে সবাইকে চাই। নির্বাচনে আসুন, পরীক্ষা করে দেখুন। যে কথাগুলো বলছি, সেগুলোর মিল পান কি না।’
সংলাপ শেষে জেবেল রহমান গাণি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংলাপ ভালো হয়েছে। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মরা দেশের পরিবর্তন চায়। সংলাপে তার প্রতিধ্বনি ছিল। প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন সংসদের প্রয়োজন আছে, কার্যকর সংসদের প্রয়োজন আছে।’
বৈঠক সূত্র জানায়, বি. চৌধুরী ইভিএম ও আর্মি মোতায়েনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী দুটো বিষয়ে জবাব দেন। বি. চৌধুরীকে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনেক প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত নেই। আনঅফিসিয়ালি বলছি, ইভিএম চাইলে তো পাশ করাতে পারতাম না। আমি রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে এটা দেখবো।’

 

 

শুক্রবার রাতে সংবাদ সম্মেলনেও বি. চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা নেই। সেই জন্য আমরা এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সঠিক হবে না বলে মনে করি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে অধ্যাদেশ হয়ে গেছে। তবুও তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলবেন। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে আটকদের মুক্তি দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ ব্যাপারে আমরা আগেই রাজি হয়েছি। এটা বাস্তব দাবি।’

তবে ধীরে-ধীরে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। বি. চৌধুরীর প্রস্তাবে আর্মি মোতায়েনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন যে, সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীনে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়। এছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচন ছাড়া কোনও নির্বাচনেই আর্মিকে ম্যাজেস্ট্রিস ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।’

সংলাপ কেমন ছিল, শুক্রবার রাতে এ প্রশ্ন ছিল বিকল্প ধারার সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার উমর ফারুকের কাছে। তিনি বলেন, ‘খুব ভালো, আমরা আন্তরিকভাবে আমাদের দাবি প্লেস করেছি। তারা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। বি. চৌধুরী প্রাঞ্জল ভাষায় প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তাদের সবাই প্রশংসা করেছেন।প্রধানমন্ত্রীকে বি. চৌধুরী বলেছেন, ভালো নির্বাচন দিয়ে গ্রেট প্রাইম মিনিস্টার হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেছেন, প্রস্তাব বিবেচনা করবেন।’
ব্যারিস্টার উমর ফারুক জানান, সংলাপ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে একটি ফুলের তোড়া দিয়ে বলেন, ‘তোমার ওয়াইফকে দিও।’
যুক্তফ্রন্ট সূত্র জানায়, শুক্রবার সংলাপের বিষয়ে শনিবার (৩ নভেম্বর) জোটের বৈঠক হবে। ওই বৈঠকেই সংলাপের ফলোআপ করা হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!