ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকট সমাধানে ‘বল এখন সরকারের কোর্টে’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
সরকার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি না মানলে আন্দোলনে যাবো। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জোরালো দাবি করা হয়েছে। আমরা জোর দিয়ে বলেছি যে, তিনি তো আইনগতভাবে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য, জামিন পাওয়ার যোগ্য।
গতকাল বুধবার বিকালে বেইলি রোড়ে ড. কামাল হোসেনের বাসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা তো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি, করছি, করে যাবো যে, দেশে একটা স্থিতিশীল অবস্থা, একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে সব কিছু হোক। দায়িত্ব তো সরকারের। বল এখন সরকারের কোর্টে। দুই দফা সংলাপে বসার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, আজকের সংলাপে আমরা আমাদের ৭ দফা দাবি নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছি।
বলেছি যে, অল্প পরিসরে আরো আলোচনা করার ব্যাপারে আমরা ইচ্ছুক।
তিনি বলেন, সংলাপে সারাদেশে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা ও গায়েবি মামলা করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে আর কোনো গায়েবি ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের হবে না, ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের গ্রেফতার করা হবে না বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন।
সংলাপে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ দফার প্রথম দফাটাই ছিলো বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে অবশ্যই আলোচনা হয়েছে। আমরা জোর দিয়ে বলেছি যে, তিনি তো আইনগতভাবে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য, জামিন পাওয়ার যোগ্য।
বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই ধরনের কোনো প্রস্তাবই আমরা দেইনি। সেই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
বৃহস্পতিবার একাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে ফ্রন্টের অবস্থান কি হবে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, কালকে (আজ) যদি তফসিল ঘোষণা করে আমরা নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করব। আমরা তো আন্দোলনেই আছি। আগামীকাল আমরা রাজশাহী অভিমুখে রোড মার্চ করবো এই ৭ দফা দাবিতে। আমরা রাজশাহীতে জনসভা করবো। বর্তমান সংকট নিরসন সংলাপে সম্ভব কিনা প্রশ্ন করা হলে ফ্রন্টের মুখপাত্র বলেন, আমরা সবসময় সংলাপকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। পার্ট অব আওয়ার মুভমেন্ট। আমরা এখনো বিশ্বাস করি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। সরকার যদি সেই পথে না আসে, সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে একটা জায়গায় পৌঁছাতে না চায় এর দায়-দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে।
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সংলাপ শেষে দেয়া বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা বলেছিলাম যে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দেবার ৯০ দিন পরেই তো নির্বাচন হবে। সংসদ ভেঙে দেয়াটা সংবিধানের অন্তর্গত এবং এখনও এটি সংবিধানে আছে। একই সাথে দুইটি সংসদ থাকবে- এটা তো কোনো নিয়মই হতে পারে না। ওনারা যদি বলেন এটা নেই তাহলে ওনার ভুল বলেছেন। এটি সংবিধানের মধ্যে আছে, সাংবিধানিকভাবেই আমরা প্রস্তাব করেছি। সংসদ ভেঙে দেবার পরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছি। এর মানে নির্বাচন আমরা পেছাতে চাইছি এমনটা নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এ বিষয়ে প্রস্তাব করেছি। তারা(সরকার) বলেছেন যে, আলোচনা হতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে এখনো সরকার তার অবস্থানে অনড়। তাহলে আপনারা কী আশা করছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এখানে আশার কোনো প্রশ্ন নেই। আমরা একটি নির্বাচনকালীন সরকার চাচ্ছি জনগণের দাবি হিসেবে। এটাতে সরকার যদি না মানে তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা তা আদায় করবো।
এই দুই দফা সংলাপে আপনারা কী পেলেন মূল্যায়ন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, পাওয়ার ব্যাপারটা রিলেটিভ ব্যাপার। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের কাছে গেছি। তারা বলেছে যে, ভবিষ্যতে তারা আলোচনা করে দেখতে পারে, সুযোগ আছে। আমরা আমাদের দাবি নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে এই দাবি আদায় করবো।
নির্বাচন পেছানোর দাবি একটা টালবাহানা ওবায়দুল কাদেরের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বলার অর্থই হলো জনগণের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণের দাবির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নেই বলে এমন কথা তারা বলছেন। আজকে নির্বাচন পেছানোর কথা আমরা বলছি এজন্য যে, নির্বাচনকে শুধুমাত্র একটা অর্থবহ করার জন্য।
গণভবনে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে রুদ্ধদার বৈঠক করেন ড. কামাল হোসেন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এই প্রতিনিধি দলের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির আসম আবদুর রব, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মনন্টু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এসএম আকবর, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপ শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বেইলি রোডের বাসায় এসে ফ্রন্টের নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন। এক ঘন্টা বৈঠক শেষে তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসেন।