DMCA.com Protection Status
title="৭

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে উভয় দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

গত ৩০ অক্টোবর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটি ‘যথাযথ পরিকল্পনা’ নেয়ার কথা জানায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। এরপরই জাতিসংঘ এর প্রতিবাদ জানায়। এবার তাদের সঙ্গে যোগ দিলো যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এখনও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, চলাফেরার স্বাধীনতা, জীবিকার অধিকারসহ আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানানোও হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর আগে সেখানকার পরিস্থিতি বোঝার জন্য মিয়ানমারে পূর্ণ প্রবেশাধিকার দরকার। বিবৃতিতে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়া স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই করার জন্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া মেনে চলার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে রাখাইন রাজ্যে সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধান করার জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালনের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, অপরিণত এই প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আমরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের কাছে আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আর এই প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক রীতি মেনে চলা, ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ এ মর্যাদাপূর্ণ করার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার জন্য দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।’

জাতিসংঘ অভিযোগ তুলেছে, এই পরিকল্পনায় শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-কে যুক্ত করা হয়নি। তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। এমন সময় ওই প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা সম্পন্ন হয়, যার এক সপ্তাহ আগে জাতিসংঘের অনুসন্ধানে রাখাইনে গণহত্যা চলমান থাকার কথা জানা গেছে। জাতিসংঘের পর যুক্তরাষ্ট্রও বিষয়টি নিয়ে সবাইকে সতর্ক করলো।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পার্সন্স ফ্রম রাখাইন স্টেট’ নামে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। পরে গত ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

তবে এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়ার সুনিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ বলছে, এখন পর্যন্ত কোনও রোহিঙ্গাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার।

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও মিয়ানমারে জাতিসংঘ বিশেষ দূত ইয়াংহি লি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর তড়িঘড়ি পরিকল্পনা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শরণার্থীরা ফিরে আসলে নতুন করে নির্যাতনের শিকার হবে না সেই নিশ্চয়তার অভাব রয়েছে। তাই বিষয়টি উদ্বেগজনক।

জেনেভায় লি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরে আসতে পারবে আর মৌলিক অধিকারসহ নিরাপদে বাস করতে পারবে এমন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার সরকার কোনও নির্দিষ্ট ও দৃশ্যমান উদ্যোগ নিয়েছে- এমন কোনও প্রমাণ আমি পাইনি।’

এর আগে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে কর্মরত ৪২টি এনজিও এক যৌথ চিঠিতে রোহিঙ্গাদের তাড়াহুড়া করে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সতর্ক করেছে। এনজিওগুলোর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি, অক্সফাম ও সেভ দ্য চিলড্রেনও রয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো জবরদস্তিবিরোধী নীতিমালার লঙ্ঘন হবে। কারণ সেখানে তাদের জীবন ও নিরাপত্তার কঠিন ঝুঁকি রয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!