ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ “বঙ্গবন্ধু-১” অবশেষে ব্যর্থ হয়েছে। এটির সাথে কোনো যোগাযোগ নেই ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের। যদিও গত ৫দিন আগে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের কোম্পানী তালিস এলিনিয়া স্পেস এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ কমিউনেকশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটিড (বিসিএসসিএল) কার্যালয়ে ‘ট্রান্সফার অফ টাইটেল’ বা স্বত্ত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে, তবে তা ছিল পেপার ট্রান্সফ্রার মাত্র, বাস্তবে স্যাটেলাইটের সাথে কোনো যোগাযোগ নাই বাংলাদেশের বা থালেসের। খবরের সুত্র বিসিএসসিএল-এর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি জানান, যদিও এবছর ১২ মে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এবং উৎক্ষেপণের পরে তা ৩৩ মিনিটে কক্ষপথে পৌছায় বলে সরকারী মাধ্যমে খবর পরিবেশন করা হয়, কিন্তু বাস্তবে স্যাটেলাইট থেকে কোনো সংকেত অদ্যাবধি বাংলাদেশের ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রে পৌছায়নি। প্রথমে বলা হয়েছিল তিন মাসের মধ্যে উপগ্রহটি বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু গত ৬ মাস পার হলেও এর কোনো আলামত নেই। এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিনা কাজে বেতন নিয়েছেন। এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম প্রজেক্ট। তবে প্রজেক্ট চালু রাখতেই ১ম উপগ্রহের ঘটনা আড়াল করতেই ২য় আরেকটি উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কথা শোনা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ নিয়ে শুরু থেকেই নানাবিধ জাল জালিয়াতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। বিনা টেন্ডারে কাজ দেয়া হয়েছে ফ্রান্সের কেম্পানীকে। এমনকি যে মাপের কমিউনিকেশন উপগ্রহ (অর্থাৎ মিডিয়ার কাজে ব্যবহারযোগ্য), তা নির্মানে ১১০ মিলিয়ন ডলার খরচের স্টান্ডার্ড হিসাব থাকলেও বাংলাদেশ সরকার খরচ করেছে ৩৬২ মিলিয়ন ডলার! অর্থাৎ তিন গুণ খরচ, মানে সাগর চুরি!
২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে (পলিটিক্যাল সাইন্সে ডিগ্রিপ্রাপ্ত) বিজ্ঞানী ঘোষণা করে তাকে প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক প্রযুক্তি উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়, কিন্তু বাস্তবে তার বেতন ছিল মাসে ২ লাখ ডলার বা ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা (সূত্র: সাবেক আইসিটি মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী)! পুত্র জয়ের বুদ্ধিতে মা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপন করে নাম কামানোর উদ্যোগ নেয়, পেছনে অবশ্য ধান্দা ২ হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া। অবশেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গত ১২ মে সারা দেশ জুড়ে আওয়ামী হৈ চৈ করে জাতিকে রাত জাগিয়ে সেই উৎক্ষেপণের খবর ছড়ানো হয়। দেশ থেকে শত শত আওয়ামী স্তাবক আমেরিকায় উড়ে গিয়ে সপ্তাহব্যাপি উৎসব করে আসে রাষ্ট্রীয় টাকায়! তখন বলা হয়েছিল, উন্নত দেশের কাতারে উঠে গেছে বাংলাদেশ। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে সিগনাল রপ্তানী করে আয় হবে কোটি কোটি ডলার। কিন্তু রপ্তানী দূরের কথা বাংলাদেশের কোনো টিভি বা কোনো মিডিয়া গত ৬ মাসেও একটু সিগনাল ব্যবহার করার সুযোগ পায়নি। কারণ, উপগ্রহটি কোনো সিগনাল পাঠায়নি। কোথায় আছে কেউ জানে না। উল্লেখ্য, আকাশে যত উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়, তার ৬০ ভাগ অরবিটে পৌছায় না, আর যা পৌছায় তার ১৫ ভাগ মাত্র কাজ করে! এখন তালিস এলিনিয়াকে এ বিষয়ে কোনো চিঠিও লিখছে না হাসিনা সরকার, কোনো প্রশ্ন করছে না, এই ভয়ে যে, জানাজানি হয়ে গেলে পাবলিকের ধোলাই খেতে হবে! নির্বাচনের বছর, এ জাতীয় খবর বিরাট বড় প্রলয় সৃষ্টি করতে পারে।
এতদিন আওয়ামীরা বলতো, আকাশে নাকি বঙ্গবন্ধুর নাম খোদাই করে রাখা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো বঙ্গবন্ধুর মতই উপগ্রহটিও বিলীন হয়ে গেছে কোথায়, কেউ তা জানে না। জনগনের ২৯০২ কোটি টাকা এবং তৎপরবর্তী কয়েক’শ কোটি টাকা লোপাট করে বাংলাদেশের একটি স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটলো।
Post Views: 2,262