ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে এবং সহযোগিতা করতে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। পরে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যেসব সহযোগিতা দরকার, তার সবই সম্পাদকদের কাছে চাওয়া হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ‘প্রথম আলো’র মতিউর রহমান, ‘মানবজমিন’–এর মতিউর রহমান চৌধুরী, ‘নিউ এজ’–এর নুরুল কবীর, ‘ঢাকা ট্রিবিউন’–এর র জাফর সোবহান, ‘আমাদের নতুন সময়’–এর নাঈমুল ইসলাম খান, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ডটকম–এর তৌফিক ইমরোজ খালিদী, ‘সাপ্তাহিক’ –এর সম্পাদক গোলাম মর্তুজা প্রমুখ।
মতবিনিময় সভার মাঝপথে বেরিয়ে আসেন আমাদের নতুন সময় সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
এ সময় নাঈমুল ইসলাম খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন করেছি, তারা পরে উত্তর দিবেন বলেছেন। আমার আরেকটি জরুরি মিটিং আছে। চলে যাচ্ছি। তবে প্রতিনিধি রেখে গেছি, তার থেকে পরে জেনে নেব।’
কি প্রশ্ন করেছিলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় অথবা বিরোধী দলে গেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামীতে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করবে কি না? সাম্প্রতিক সময়ে ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় সকল ধর্মীয়গ্রন্থ পাঠ করা হয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রশান্তিমূলক আলোচনা হয়েছে— এগুলো তাদের ঐক্যবদ্ধ চিন্তার ফসল কি না? এবং ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট নিয়ে তাদের কোনো ঐক্যবদ্ধ চিন্তা আছে কি না? থাকলে তা নির্বাচনের আগে লিখিতভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন কি না?’
নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘সবগুলো প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা মতবিনিময়ের শেষদিকে জবাব দেবেন বলে জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতেই ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান, আপনারা নিরপেক্ষতার জায়গা থেকে কী করলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে? এরপর আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে বক্তব্য তুলে ধরেছি। তারা সবার বক্তব্য শুনেছেন।’
তৌফিক ইমরোজ খালিদী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, এই বৈঠক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। জাতীয় নির্বাচনের আগে জোট ও দল এটা করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? কিন্তু, এর কোনো উত্তর আমি পাইনি।’
মতবিনিময় শেষে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এটি একটি মূল্যবান সভা ছিল। কেননা তাঁরা (সম্পাদকেরা) বিভিন্ন ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন। আমাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের কাছ থেকে তাঁরা কী আশা করেন, তা জানতে চেয়েছেন।’
গণফোরামের সভাপতি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের যেমন কর্তব্য আছে, আমরা যারা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি আছি, যারা নির্বাচন করতে যাচ্ছি, তাদেরও কর্তব্য আছে। দলগুলোকে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে যেন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়।’ তিনি বলেন, ‘সম্পাদকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে কী কী জিনিস দেখেছেন। সম্পাদকেরা মনে করেন এবার আমাদের (ঐক্যফ্রন্ট) বিরত থাকতে হবে, সবাইকে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করতে হবে যেন জনগণ সত্যিকার অর্থে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. কামাল বলেন, নির্বাচন সত্যিকার অর্থে অবাধ ও নিরপেক্ষ যেন হয় সেটাই তাঁদের লক্ষ্য। এটাকেই তাঁরা সত্যিকার অর্থে মূল্যবান মনে করেন। ঐক্যফ্রন্টের সেই চেষ্টা থাকবে। তিনি বলেন, সরকারের আচরণের বিভিন্ন দিক তাঁরা চিহ্নিত করেছেন। ঐক্যফ্রন্ট আশা করে সংবাদপত্র এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
মতবিনিময় সভায় সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন, দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, আমাদের নতুন সময় সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্ত্তজা, সাপ্তাহিক বুধবার সম্পাদক আমির খসরু, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফর ডটকম সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, দিনকাল সম্পাদক রেজোয়ান সিদ্দিকী, ইনকিলাবের যুগ্ম-সম্পাদক মুন্সি আবদুল মান্নান, এএফপি’র ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম, রয়টার্স’র সিরাজুল ইসলাম কাদির, ডেইলি স্টারের প্লানিং এডিটর সাখাওয়াত লিটন, যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক আবু তাহের, বাংলাদেশের খবরের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন, সমকালের চিফ রিপোর্টার লোটন একরাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।