ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ আংশিক) সংসদীয় আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির ডাকসাইটের নেতা এম মোরশেদ খান। তিনি এই আসন থেকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ব্যানারে চারবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।তিনি খালেদা জিয়া সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। বয়োবৃন্ধ এই নেতা এখন অনেকটাই অসুস্থ এবং বয়সের ভারে নুহ্যমান।
এই আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জনাব এরশাদ উল্লাহ। এছাড়াও মনোনয়নপত্র কিনেছেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান। দু’জনই মোরশেদ খানের অনুগত ও শিষ্য হিসেবে পরিচিত। ভোটের আগে গুরু-শিষ্যের মধ্যে চলছে দলীয় মনোনয়নের লড়াই।
মোরশেদ খান ও এরশাদ উল্লাহর মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। সেই সূত্র ধরে দু’জনের মধ্যে চাচা-ভাতিজা ডাকাডাকি ছিলো। তিনি মোরশেদ খানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতি ছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে মোরশেদ খান দেশের বাইরে থাকায় দলীয় মনোনয়ন পান নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। তাঁর মনোনয়ন সহজেভাবে মেনে নিতে পারেননি মোরশেদ খান। সেই থেকে তাদের মধুর সম্পর্ক বিষাদে পরিণত হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিক্ততা গতবছর অনেকটা মিটমাট হলেও আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে জেগে ওঠেছে।
শুধু এরশাদ উল্লাহই নন, দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করে যাচ্ছেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান। তিনিও একসময় মোরশেদ খানের অনুগত ও শিষ্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরমের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
গতকাল (শুক্রবার) তার পক্ষে বোয়ালখালী পৌর মেয়র হাজি আবুল কালাম আবু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। নির্বাচনের আগে বিএনপির প্রবীণ ও ডাকসাইটের নেতা মোরশেদ খানের সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন দুই শিষ্য আবু সুফিয়ান ও এরশাদ উল্লাহ। তিনজনের মধ্যে এনিয়ে এখন স্নায়ুযুদ্ধ চলছে।
বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান এ বিষয়ে বলেন, ‘মোরশেদ খান আমাদের মুরব্বি। দলের শীর্ষ পদ ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এখন নতুনদের সুযোগ দিয়ে তাঁর সরে দাঁড়ানো উচিত।’ দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে দলের সঙ্গে ছিলাম। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। আশা করছি, এসব বিবেচনা করে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। তবে দল অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে দলের স্বার্থে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে তার পক্ষে কাজ করব’।
২০০৮ সালের নির্বাচনে মোরশেদ খানের অনুপস্থিতিতে এরশাদ উল্লাহ দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচনে ১৪-দলীয় প্রার্থী জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদলের কাছে পরাজিত হন তিনি। নির্বাচনে পরাজয়ের পর এরশাদ উল্লাহ’র অভিযোগ ছিল, মোরশেদ খান তার বিপক্ষে কাজ করেছেন।
তার এই অভিযোগের ভিত্তি ছিল মোরশেদ খানের আরেক ঘনিষ্ঠজন চান্দগাঁও ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম দলীয় প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ’র বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন। এনিয়ে দুইজনের মধ্যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়।এই বিরোধের অংশ হিসেবে ২০১২ সালে বোয়ালখালীর গোমদন্ডী ফুলতলীতে দলীয় কর্মসূচিতে সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয় বিএনপির তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত এম কে আনোয়ার ও মোরশেদ খানের গাড়ি বহর।
এই ঘটনার জের ধরে এরশাদ উল্লাহকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে গত বছর মোরশেদ খানের সঙ্গে বিরোধ মিটমাটের পর তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ বলেন, দলের দুঃসময়ে নির্বাচন করেছি। পরাজিত হওয়ার পরও ১০ বছর ধরে মাঠে ছিলাম। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এসব বিবেচনা করলে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। তবে সিনিয়র নেতা বিবেচনা করলে মোরশেদ খানকে মনোনয়ন দেবে। দল যাকে মনোনয়ন দিক না কেন দলের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিলেমিলে কাজ করতে হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান ইতিপূর্বে গনমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘দল নির্বাচন করতে বললে নির্বাচন করব। না হলে করব না’।
এই আসনের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে আলাপ করে জানা যায় বর্তমান সময়ে বয়স,জনগ্রহনযোগ্যতা এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ইত্যাদি বিবেচনা করলে জনাব এরশাদ উল্লাহ হবেন দলের যোগ্য প্রার্থী।