ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আবারও তাইজুল ইসলাম, টেস্টে বাংলাদেশের আরেকটি মনে রাখার মতো জয়। গত জিম্বাবুয়ে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় তাইজুল বল হাতে আবারও ঘূর্ণি বিষ ছড়ালেন। সেই বিষেই নীল হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চট্টগ্রামে বাঁহাতি এই স্পিনারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ক্যারিবীয়রা দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৩৯ রানে।
টার্নিং উইকেট যেন ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছিল। তাইজুল সেই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগালেন। বাংলাদেশও ম্যাচটা জিতল ৬৪ রানের বড় ব্যবধানে। এই জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে স্বাগতিকরা।
উইকেটের টার্নকে কাজে লাগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে প্রথম ধাক্কাটি দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার দুর্দান্ত এক ডেলিভারি এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন কাইরন পাওয়েল, গোল্ডেন ডাকে। এর পর ৩ রান করা হোপকেও ফিরিয়ে দেন সাকিব।
এরপরের সময়টা শুধুই যেন তাইজুলের। এক ওভারেই দুই এলবিডব্লিউ করে দেন বাঁহাতি এই স্পিনার। ওভারের প্রথম বলে তার শিকার ক্রেইগ ব্রেথওয়েট (৮), পঞ্চম বলে শূন্যতে এলবিডব্লিউ রস্টন চেজ।
প্রথম ইনিংসের মতো ভয়ংকর হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন সিমরন হেটমেয়ার। এগিয়ে এসে খেলছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাটিং করা হেটমেয়ারকে সাজঘরের পথ দেখান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৯ বলে ৩ চার আর ১ ছক্কায় ২৭ রান করেন তিনি।
এরপর তাইজুলের বলে আরেকটি এলবিডব্লিউ। এবার শেন ডোরিচ (৫)। ২ রান করা দেবেন্দ্র বিশুকে পরিষ্কার বোল্ড করেন তিনি, টাইগার দলের বাঁহাতি এই স্পিন জাদুকরের পঞ্চম শিকার কেমার রোচ, ১ রান করে তিনিও এলবিডব্লিউ হন।
বাংলাদেশের পক্ষে ৩৩ রান খরচায় ৬টি উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম। দুটি করে উইকেট মেহেদী হাসান মিরাজ আর সাকিব আল হাসানের।
এর আগে ১২৫ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। তবে প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের বড় লিডের সুবাদে ক্যারিবীয়দের সামনে দুইশোর্ধ্ব লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে পেরেছে সাকিব আল হাসানের দল।
৫৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। শুরুতেই ধাক্কা স্বাগতিকদের, মুশফিকুর রহীমের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বসে টাইগাররা।
স্পিনাররা উইকেট থেকে টার্ন পাচ্ছেন। তবে মুশফিক স্পিনে পরাস্ত হননি। ক্যাবিরীয় পেসার শেনন গ্যাব্রিয়েলের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে স্ট্যাম্প উড়ে গেছে তার। ৩৯ বলে ১ বাউন্ডারিতে ১৯ রান করেন তিনি।
এরপর সপ্তম উইকেটে ৩৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ একটি জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মেহেদী মিরাজ। জুটিটি ভাঙেন দেবেন্দ্র বিশু, ১৮ রান করা মিরাজকে টার্নে উইকেটরক্ষক শেন ডোরিচের ক্যাচ বানিয়ে।
অভিষিক্ত নাঈম হাসানকেও ৫ রানে ফিরিয়েছেন বিশু। ক্যারিবীয় লেগস্পিনারের ফ্লাইটেড ডেলিভারিটি বুঝতে না পেরে ব্যাট চালিয়ে দেন নাঈম, স্লিপে দাঁড়িয়ে ক্যাচটি নিতে ভুল করেননি শাই হোপ।
দারুণ খেলছিলেন মাহমুদউল্লাহ, বলতে গেলে একাই দলকে টেনে নিচ্ছিলেন। শেষপর্যন্ত তাকেও থামিয়ে দেন এই বিশু। সুইপ করতে গিয়ে টপএজ হয়ে যান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৪৬ বলে ১টি করে চার ছক্কায় ৩১ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ২৬ রান খরচায় ৪টি উইকেট নিয়েছেন দেবেন্দ্র বিশু। রস্টন চেজ ৩টি আর জোমেল ওয়ারিকেন নেন ২টি উইকেট।