ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ কথিত দুর্নীতির মিথ্যা মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে বগুড়া-৬ ও ৭ এবং ফেনী-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে। তবে এই তিন আসনেই বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বিএনপির তিন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এরই মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ এর পাশাপাশি খালেদা জিয়ার বগুড়া-৬ (সদর) আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ মিল্টন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তিনি গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফেনী-১ (পরশুরাম-ফুলগাজী-ছাগলনাইয়া) আসনে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতে দণ্ডিত ৫ বিএনপি নেতা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য হাইকোর্টে আপিল চলমান থাকা অবস্থায় তাদের সাজা স্থগিত করার আবেদন করেছিলেন। সে আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার যে আদেশ দিয়েছে, তাতেই খালেদা জিয়ার ভোটের পথ আটকে যায়।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও ২ বছরের বেশি সাজা হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকায় তিনি ভোটে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়। মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন বুধবার ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে নিজ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
পরে সৈয়দপুরে এসে বগুড়া-৬ আসনের মনোনয়নপত্রে তিনি সই করেন। এরপর বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বগুড়ার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়া ও ফখরুলের মনোনয়নপত্র জমা দেন। মির্জা ফখরুল সৈয়দপুরে সাংবাদিকদের বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের কথা আমরা কখনও ভাবিনি।
আজ এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত হৃদয়বিদারক যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে বাদ দিয়ে একটি জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে। এটা সরকারের অপকৌশল, নির্বাচনের ঠিক পূর্বে এ রায় ঘোষণার অর্থই হচ্ছে দেশনেত্রীকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা। বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে সরকার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে- অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার যতই চেষ্টা করুক, নির্বাচন থেকে আমরা দূরে সরে যাব না। আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব। নির্বাচন ও আন্দোলনে জয়ী হয়ে আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করব।
মির্জা ফখরুল বলেন, পার্টির সিদ্ধান্তে বগুড়া সদরে চেয়ারপারসনের আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। নির্বাচন করব খালেদা জিয়ার নামে। আজ (বুধবার) এই ফরমে সই করতে গিয়ে আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হয়েছি, আমার নেতারাও ভারাক্রান্ত হয়েছেন।
এরপরও পরম করুণাময় আল্লাহতালার কাছে আস্থা রাখছি ভিক্টরি ইজ আওয়ারস। বগুড়া ব্যুরো জানায়, বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বিকালে ওই আসনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়। বিকালে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর নেতৃত্বে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়। একই আসনে গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ মিল্টনও মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মিল্টন জানান, তিনি গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। হাইকমান্ডের নির্দেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া এ আসনে শাজাহানপুর উপজেলার চেয়ারম্যান ও সদর বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদলও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
বেলা ৩টায় তার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন সাবেক এমপি অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন ভিপি, রেহেনা আক্তার রানু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি, ফেনী পৌর বিএনপির সভাপতি আলাল উদ্দিন আলাল, আবু তালেব, আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারীসহ জেলার নেতারা। এ আসনে বিএনপির পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু।
এছাড়া ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুর আহম্মদ মজুমদার মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফেনীর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।