ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অবৈধ হাসিনা সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন,কথা দিচ্ছি জনগণ আমাকে বা আওয়ামী লীগকে ভোট না দিলেও আমি জোর করে ভোট ছিনতাই করব না। আগামী ৬ মাসের মধ্যে আমার নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্যাস আসবে। কাজের জন্য উন্নয়নের জন্য সবার কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।
রোববার দুপুরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বসুরহাট এএইচসি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি নির্বাচিত হলে কারো ওপর কোনো প্রতিশোধ নেব না। আমাকে ভোট না দিলেও প্রতিশোধ নেব না। জোর করে কারো কাছ থেকে ভোট নেয়া যায় না। মওদুদ আহমদ ২০০১ সালে আমার মা ও আমার স্ত্রীকে ভোট কেন্দ্রে আসতে দেয়নি। অপমান করে ভোট কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। কোথায় কোথায় বৈঠক হচ্ছে সব আমার জানা আছে। এবার ভোট বানচালের চেষ্টা করলে জনগণ ও ভোটারদের নিয়ে তা প্রতিরোধ করা হবে। ওরা নাকি ভোট পাহারা দেবে, আমাদের ভোট রক্ষা করার লোকও আছে। দেশের উন্নয়ন চাইলে নৌকায় ভোট দিন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল না মুক্তিযোদ্ধারা তখন অবহেলিত ছিল। আপনারা কি সে দুঃসময় অন্ধকারে ফিরে যেতে চান? এবার যদি বিকল্প কেউ দেশের ক্ষমতায় আসে তাহলে এ দেশ অন্ধকারে চলে যাবে। এদেশ আগুন সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে। ওরা যদি আসতে পারে একদিনে সারা দেশে রক্তের বন্যা বইয়ে দেবে। একদিনে সারা দেশে লাশের পাহাড় সৃষ্টি করবে। ওরা ক্ষমতায় আসলে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হত্যা করবে। এদেশকে তালেবান রাষ্ট্রে পরিণত করবে।
তিনি মওদুদ আহমদ ও জাতীয় ঐক্যফন্টের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, মওদুদ আহমদ আপনার বেলা শেষ। ২২ বছরে এ এলাকাকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখেছিলেন। আপনাকে ভোট দিয়ে জনগণ আবার অন্ধকার ফিরিয়ে আনতে চায় না। মওদুদ আহমদকে কেউ বিশ্বাস করে না। তার প্রতিশ্রুতিকে মানুষ ভুয়া মনে করে।
কাদের মওদুদ আহমদের উদ্দেশে আরও বলেন, উন্নয়নের নামে মিথ্যাচারে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাচ্ছে। অস্ত্র দিয়ে ভোট ডাকাতি করবেন সেদিন চলে গেছে। আপনি সেই ব্যক্তি যিনি এলাকায় সকাল ১১টার আগেই ভোট শেষ করেছেন। ২২বছর ক্ষমতায় ছিলেন, বিজয় দিবসে চ্যালেঞ্জ করছি একটি কাজ করেছেন মওদুদ তা দেখাতে পারবেন। আমার কাজ গ্রামে গ্রামে, মাকড়শার জালের মত রাস্তা। অনেকের বাড়ির দরজাও পাকা হয়েছে। এখানে আগে বিদ্যুৎ ছিল না, এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। মওদুদ আহমদের আমলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল, তা আপনাদের সবার মনে আছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সে অন্ধকারে আপনারা আবার ফিরে যেতে চান?
সেতুমন্ত্রী বলেন, ড. কামালের জন্য দুঃখ হয়। তিনি জামায়াত, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও হাওয়া ভবনের যুবরাজ তারেক রহমানের নির্দেশে ঐক্যফ্রন্ট করেছেন। আ.স.ম রব, সময়ে রব অসময়ের নিরব। উনিও এখন যেমনি নাচাও তেমনি নাচে, পুতুলের কী দোষ? তিনিও এখন অনেক নাচানাচি করছেন। তাদের ধানের শীষ পেটের বিষ, ধানের শীষ সাপের বিষ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার আমলে ৩৪টি টিভি চ্যানেল হয়েছে। পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীরা টিভিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে বলে, আমাদেরকে বাংলাদেশ বানাও। আমাদেরকে একজন হাসিনা দাও। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আর্থসামজিক সূচকে পাকিস্তান বাংলাদেশের অনেক পেছনে রয়েছে। অনেক কিছুরই সূচকে শুধু পাকিস্তান নয়, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা আমাদের অনেক পেছনে রয়েছে। যদি উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে চান, তাহলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে।
তিনি আবারও বলেন, আমি ১২বছরে যা করেছি মওদুদ কি ২২ বছরে তা করতে পেরেছেন। আমি নির্বাচিত হলে, কোনো নারী কাজ ছাড়া থাকবে না। নারী ও তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। কোনো তরুণ বেকার থাকবে না। তাদেরকে কাজে লাগাব। দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠাব, বেকারত্বকেও জাদুঘরে পাঠাব। দক্ষিণাঞ্চলের মঙ্গা এখন জাদুঘরে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আজ দু’ধারায় বিভক্ত। একদিকে রয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা, দেশরত্ন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জিবিত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি গণতন্ত্রের শুভ শক্তি। আরেক ধারায় রয়েছে, বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যফন্টের সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি, ৭১’র পরাজিত শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ছদ্মবেশি মুক্তিযোদ্ধা, ছদ্মবেশি গণতান্ত্রিক।
তিনি বলেন, যারা আজকে নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার চক্রান্ত করছে। ৭১’এ যাদেরকে আমরা পরাজিত করেছি, সে পরাজিত শক্তিকে আজকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের মুখোশ খসে পড়েছে। তারা মুখে যতই মুক্তিযুদ্ধের করা বলুক, বাস্তবতা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে আর জঙ্গিবাদকে মদদ দিচ্ছে। যুদ্ধাপরাধিদের বিচার বিএনপি সমর্থন করেনি, বিরোধিতা করেছে। আজকে দেশ স্পষ্টভাবে দু’ ধারায় বিভক্ত।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা মুক্তিযোদ্ধা। আগামী নির্বাচনে আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাসের ঠিকানা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অসাম্প্রাদায়িক শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তি। এ নির্বাচনে বিজয়ের কোনও বিকল্প নেয়। বিজয় দিবসে শপথ নিতে হবে, ৩০ ডিসেম্বর সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তিকে আমরা হারিয়ে দেব। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাদের আমরা পরাজিত করব। সারা দেশে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার বইছে। গত কয়েক মাস আমি সারা দেশে ও আমার নিজ এলাকায় সফর করেছি। নৌকার মতো অবিস্মরণীয় গণজোয়ার আর কখনও আমি দেখিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি এখন বুঝতে পেরেছে, নির্বাচনে তারা হেরে যাবে। পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে। মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবন্ধ হোন, এ অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আবু নাছের, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াছিন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যার আরজুমান পারভীন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল, স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের সদস্য ফখরুল ইসলাম রাহাত, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন মুন্না, সরকারি মুজিব কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নুর এ মাওলা রাজু প্রমুখ।