ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ শেখ হাসিনার গত এক দশকের দুঃশাসনে বাংলাদেশের সবগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভারতীয়করণ করা মোটামুটি শেষ হয়েছে। এবারে শেষ ধাপে বাকশাল পূর্ণপ্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটা শেষ করতে পারলেই দেশে আর কোনো শক্তি আ’লীগকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। তখন ২০৪১ কেনো, এ শতাব্দিও পার করে দেয়া যাবে।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়কারীদের অন্যতম চালক হলেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিক, যিনি একাধারে ভারতের স্বার্থ এবং শেখ হাসিনার স্বার্থ উভয়ের সমন্বয় সাধন করে সশস্ত্র বাহিনী পরিচালনা করছেন। প্রতিরক্ষা নয়, বরং নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয়েও মূলত তিনিই জয়েন্ট চীফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন!
সেনাবাহিনী নিয়ে তারেক সিদ্দিকীর চিন্তাভাবনা সম্পর্কে লন্ডন প্রবাসী তার এক বিজনেস পার্টনার জানান, গত দশ বছর ধরে দেশে পুরোপুরি বাকশাল কায়েম করতে মোটামুটি সকল বিভাগে বাস্তবায়িত করা হয়েছে। এনিয়ে ভারত সহ বাকশালের পুরোনা নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ চলছে। কেবল সেনাবাহিনীকে পুরোপরি নিরাপদ করা বাকী।
ইতোমধ্যে তাদেরকে পদোন্নতিসহ নানাবিধ আর্থিক সুবিধা, সুযোগাসুবিধা ও লোভ টোপ দিয়ে বশে আনার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নানা ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে, এসব অষুধে কাজ হচ্ছে। সেনা অফিসারদের ভেতরে আগের মত আর এগ্রেসিভ ভাব নাই।
বিশেষ করে মেজর/লেফটেনেন্ট কর্নেল পর্যায়ে ফুল টাইম গাড়ি সহ নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে সেনাবাহিনীর মাঠপর্যায়ের মূল অর্গানকে বিলাসিতায় অভ্যস্ত করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে তারা প্রশিক্ষণ এবং পেশাদারিত্ব ও সমষ্টিগত মর্যাদা রক্ষার চেয়ে ব্যক্তিগত আরাম আয়েশ ও স্বার্থের বিষয়টিই প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
যেমন কয়েকটি টেস্ট কেসে দেখা গেছে, সাভারে কর্মরত মেজরকে পুলিশ পিটানোর পরে, রাজশাহীতে পুলিশের হাতে সেনাসদস্য মার খেলে, ব্রিগেডিয়ার আযমী ও কর্নেল হাসিনের মত ডেকোরেটেড রিটায়ার্ড অফিসারদেরকে অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া বা গুমের পরেও আর্মি সদস্যেদের মাঝে নিজেদের ভাবমুর্তি রক্ষার জন্য উল্লেখযোগ্য ব্যাবস্থা গ্রহণ করার মত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। এসব ঘটনায় সরকারের নীতিনির্ধারকরা উৎসাহিত বোধ করছেন।
শেখ হাসিনার প্লান হচ্ছে, আরেবার ক্ষমতায় গেলেই মূল টার্গেট হবে বাকশাল স্টাইলে আর্মি সাজানো। আর ভারতও চায় এদেশে তাদের অনুগত বাহিনী। এ বিষয়ে জেনারেল তারিক সিদ্দিকের ভাবনা হলো- দেশ রক্ষার পরিবর্তিত নীতিতে ভারতের সাথে যুদ্ধ হওয়ার কোনো সম্ভবনা নাই। ভারত এখন আর আমাদের শত্রু নয়। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এখন আর ভারতকে টার্গেট করে বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করেনা। ভারত এখন পরিপূর্ন মিত্র রাষ্ট্র।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন পুরোপুরি একটি ডিফেন্সিভ ফোর্স। দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ এবং র্যাব সহ অন্যান্য বাহিনী যথেষ্ট সক্ষম। সীমান্ত পাহারা নিয়ে ভারতের সাথে এখন আর তেমন কোনো বিরোধ নাই। শুধু বার্মার সাথে যে বর্ডার আছে, তাতে আমাদের বিজিবি রয়েছে। সেখানে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত আমাদের পূর্ন সহায়তা করবে। তাই এই সেক্টর নিয়েও সেনাবাহিনীর কোনো বড় ইনস্টলেশন আর প্রয়োজন নাই।
মোট কথা, শেখ হাসিনার সরকার আগামীতে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলে, সেনাবাহিনীকে মুলত রক্ষীবাহিনীর ধাচে ব্যবহারের সকল বন্দোবস্ত বা আয়োজন সম্পন্ন করা যাবে। লক্ষণীয়, শেখ হাসিনা এবারে ২০৪১এর শ্লোগান বাদ দিয়ে কেবল আরেকটি বার ক্ষমতা চান সেনাবাহিনীকে বাকশাল ধাচের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে বাধ্য করার জন্য।