ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশের ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী সংকট মোকাবেলা করছে। ব্যাংকগুলোর আমানত কমে গেলেও ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। এ কারণে কোনো কোনো ব্যাংকে অর্থ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই যখন অবস্থা তখন সরকার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নিচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৩ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা নতুন ঋণ নিয়েছে সরকার। অথচ গত অর্থবছরে একই সময়ে ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি তারা। শুধু তাই নয়, সরকার তখন আগের নেয়া ঋণের ৫ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছিল।
ব্যাংক হচ্ছে অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এ খাতে সংকট বাড়লে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়ে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে খুবই নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে ব্যাংকিং খাতে। দুর্নীতি, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা- এসব কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের সক্ষমতা কমছে।
ব্যাংকগুলোর অর্থ সংকটের জন্য মূলত বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ এবং তা আদায়ে ব্যর্থতাই দায়ী। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়টি অনেকদিন ধরেই আলোচিত হচ্ছে। কাজেই এ খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এটা এক বড় প্রশ্ন।
সরকার বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে। জানা যায়, সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাবদ সরকার ইতিমধ্যেই বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। এখন নিচ্ছে ব্যাংক ঋণ। নির্বাচনী বছরে সরকারের ব্যয় বেশি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
তবে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণের ফলে এ খাতের দুর্দশা যে বাড়তে পারে এটিও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। কারণ ব্যাংক দুর্দশায় পড়লে এর সার্বিক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।
ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি ও অনিময় দূর করার লক্ষ্যে এ খাতের সংস্কারে একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি বহুদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু কমিশন গঠনের বিষয়ে এখনও কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোর সার্বিক সক্ষমতা কিভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব, সরকারকে তা ভাবতে হবে। ব্যাংকিং খাত জনগণের পূর্ণ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম না হলে এ খাতের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানাবিধ সংকট দেখা দিতে পারে।