ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয় না তার প্রমাণ এবারের নির্বাচন। নির্বাচনের নামে অর্থহীন এ তামাশার প্রয়োজন ছিল না।‘
রোববার দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে ধানের শীষের প্রার্থীদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, মারধর, ব্যালটে নৌাকা মার্কায় সিল মারাসহ নানা অভিযোগ লিখিতভাবে জমা দেন তিনি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত চিঠি ইসিতে জমা দেয়া শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আলাল।
তিনি বলেন, ‘আমরা যা বলব আর আপনারা কতোটা প্রচার করতে পারতেন তাও বলা মুশকিল। তবুও আপনাদেরই দ্বারস্থ হয়েই বলতে হবে। কারণ এখন সেই বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম আর পাচ্ছি না।’
আলাল বলেন, ‘বহুল প্রত্যাশিত ও প্রতিক্ষিত নির্বাচনের ইতিহাসে একটা ব্যতিক্রম নির্বাচন এটি। এ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হলো, নির্বাচনের দিন সব ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার জন্য। আমরা সেদিনই ভাবছিলাম যে, বোধয় নির্বাচনটা সংঘর্ষের দিকে যাচ্ছে। যেটা কিনা নির্বাচন কমিশন আগেই জানতে পেরে ভয়ে ভোটারদের সতর্ক করেছে। সত্যি সত্যি সেই আশঙ্কাই সত্যি হচ্ছে।’
‘আগেই সিল মারা হবে ব্যালটে নৌকা মার্কায়। গুজব বলে উড়িয়ে দেয়া হলেও এখন সেটাই দেখছি। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে, মেরে তাড়িয়ে, পিটিয়ে দূরে রাখার কথাও উড়িয়ে দেয়া হয়েছে গুজব বলে। কিন্তু সেটাই এখন চলছে,’ অভিযোগ করেন আলাল।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আরও বলেন, ‘এ সবের ম্যধ দিয়ে এটাই প্রমাণিত হলো দলীয় সরকারের অধীনে দাপটের সঙ্গে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পর কোনো সুষ্ঠু ও অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেও তা আজ বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য তাতে দেখা গেছে, একই ধরনের চিত্র সারাদেশে। আমাদের প্রার্থী অবরুদ্ধ, ভোটার ও পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। নারী ভোটারদের বলা হচ্ছে, আমাদের সামনেই নৌকায় সিল মেরে যান। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহিত কিছু সদস্যের সহযোগিতায় এসব হচ্ছে। এবং সাংবাদিক বন্ধুরাই ৩০টি নির্বাচনী এলাকার চিত্র জানিয়েছেন। আপনাদের তথ্য আপনারা নিজেরাই হয়তো প্রচার করতে পারবেন না। কিন্তু মানুষ সেটা বুঝে গেছে। বাংলাদেশের মানুষকে বিস্মিত ও হতাশ করা হয়েছে।’
আক্ষেপ নিয়ে আলাল আরও বলেন, ‘নির্বাচন নামক এ অর্থহীন তামাশার কোনো প্রয়োজন ছিল বলে এখন আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। বরং একটা রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে বা অন্য কোনো কায়দায় একটা বিধান নির্বাচন কমিশন করে নিলেই হতো যে, নৌকা ২৯৯ বা ২শ’ সাড়ে ৯৯ পেয়ে গেছে। এমনটা করলেও অবাক হবার কিছু থাকতো না।’
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, মানুষের বহুল প্রতিক্ষিত ও প্রত্যাশিত নির্বাচনের সঙ্গে যারা তামাশা করছেন, বিদ্রুপ করলেন, রক্তাক্ত করলেন আহত করলেন তারা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করলেন। তাদের একদিনের রাজা হওয়ার স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে বলছি, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে ভুল করা হবে বলে অনেকে বলেছেন। বিএনপির রাজনীতি পিছিয়ে যাবে, দেশ পিছিয়ে যাবে, গণতন্ত্র সুসংহত থাকবে না। কিন্তু আমরা পরিপূর্ণ উদ্যোমের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও দেখালাম যে, দলীয় সরকারের অধীনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, ‘২২১টি অভিযোগ এসেছে। একই চিত্র সবস্থানে। কম আর বেশি। গতকাল থেকে আজ মাঠে যা দেখা গেছে, সেটাই তো প্রমাণ। রাজনীতিবিদরাই পরিবর্তন এনেছেন ৫২ ভাষা আন্দোলনে, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে, ৭০ এর নির্বাচনে, স্বৈরাচারী সরকারকে পতন ঘটাতেই রাজনীতিবিদরা সক্রিয় ছিলেন। সুতরাং রাজনীতিবিদদের ওপর অনাস্থা আনাটা ঠিক হবে না। বরং নষ্ট রাজনীতির শিকড় ঝেটিয়ে বিদায় করে দিতে রাজনীতিবিদদেরই এগিয়ে আসতে হবে।’
শেষ পর্যন্ত আপনারা ভোটে থাকছেন কিনা জানতে চাইলে আলাল বলেন, ‘শেষ তো হয়েই গেছে প্রায়। জাতীয় পর্যায়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নেবে।’