ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত গত ৯ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার ৬৪৬ জন। এছাড়া গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৬৫ জন, ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন ৫৩ জন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে উদ্যোগে এক মতবিনিময়ে এতথ্য তুলে ধরা হয়। এতে জানান হয় তাদের সংরক্ষিত ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ রিপোর্টটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে জানান হয় মহিলা পরিষদ এ বছর “ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’১৮ (২৫ নভেম্বর- ১০ ডিসেম্বর) পালন করছে। বহুমূখী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জ ‘নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ’ বিষয়ে জাতীয় কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি নারীনেত্রী আয়শা খানম। সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম।
উপস্থাপিত তথ্যে আরো বলা হয় চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১১৫ জনকে, শ্লীলতাহানির শিকার ৫৫ জন, যৌন নির্যাতনের শিকার ১৪১ জন, উত্ত্যক্তকরণের শিকার ১৪০ জন, উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন, এছাড়া বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে মোট ৩৫০২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এতে বলা হয় দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের পাশাপাশি সামাজিক বিকাশ সমভাবে না হওয়ায় নারীর প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সেভাবে হয়নি। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার, নারী ও মানবাধিকার সংগঠন, উন্নয়ন সংস্থা পূর্বের তুলনায় আরও সংগঠিতভাবে বহুমাত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করলেও বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ নারী ও কন্যার প্রতি বর্বর, লোমহর্ষক নির্যাতনের ধরন ও মাত্রা উদ্বেগজনক।
মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহনকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলেন, নারী নির্যাতন বন্ধ হতেই হবে। পরিবার হতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সহিংসতা, নির্যাতনের ঘটনার দ্রুত বিচার হতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি হতে বেরিয়ে আসতে হবে। সুপ্রীম কোর্টের ইতিবাচক রায়গুলো প্রচার করতে হবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাঠ্যসূচিতে নারী অধিকার ও শিশু অধিকারের বিষয় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
উপস্থিত জাতীয় কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিচারপতি নিজামুল হক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, ডা. সামন্ত লাল সেন, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, অ্যাড. জেয়াদ-আল-মালুম, অ্যাড. এস.এম.এ সবুর, অ্যাড. রানা দাশগুপ্ত, সাংবাদিক বাসুদেব ধর, শিশু বিশেষঞ্জ ডা. নাজমুন নাহার, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আনোয়ারা সৈয়দ হক ও ডা. মেখলা সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ডা. শাহানা আক্তার রহমান, আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং, চঞ্চনা চাকমা, প্রযুক্তিবিদ মাহবুব জামান, শিক্ষক অধ্যাপক ফারহানা হেলাল, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের নাসিমুন আরা হক প্রমুখ।