DMCA.com Protection Status
title="৭

লন্ডন ফ্লাইটে মাতাল যাত্রীকে বেধে রাখা হলো দড়ি দিয়ে

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকাগামী (লন্ডন-সিলেট-ঢাকা) ফ্লাইটে ‘মাতাল’ যাত্রীকে সামলাকে তুলকালামকান্ড ঘটে গেলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এক পর্যায়ে যাত্রীকে গরু বাধার দড়ি দিয়ে সিটে বেধে রাখার পরও যখন তার উৎপাত কমেনি, তখন তাকে সিটের মাঝখানে (ফ্লোরে) ফেলে রাখা হয়। এভাবেই ৩৫ হাজার ফিট উচ্চতায় থাকা উড়োজাহাজের ভেতরে সিলেটের বাসিন্দা এক যাত্রীর সাথে কেবিন ক্রুদের রীতিমতো ‘যুদ্ধ’ করতে হয়েছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটি এয়ারক্রাফট অবতরনের পর পরই ওই যাত্রীকে পাইলটের নির্দ্দেশে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটির হাতে সোপর্দ করা হয়।

ঘটনাটি এক যাত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিলে ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ মন্তব্য করেন, ‘৩৫ হাজার ফুট উপরে আকাশসীমায় বিমান বাংলাদেশ, সেখানেই চলছে মারামারি !!! বাংগালি বীরের জাতি।

 

বিমানের বলাকা ভবন সুত্রে জানা গেছে, বিমান বাংলারেদশ এয়ারলাইন্সের ৩০ ডিসেম্বর লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে সিলেট হয়ে ঢাকাগামী (বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর, বিজি-২০২ এলএইচআর-জেডওয়াইএল) ফ্লাইটের ভেতর এ অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে।

শনিবার সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, ওই ফ্লাইটের যাত্রীর নামটি এই মুহুর্তে বলতে পারবো না। তবে (৩০ ডিসেম্বর) সেদিনের ফ্লাইটে এক যাত্রী বিমানে উঠার সময় ব্যাগে পারসোনাল মদ নিয়ে উঠেছিলেন। ওই মদ পান করেই তিনি ড্রাংক হয়ে পড়েন। আপনারা হয়তো জানেন, বিমানের ভেতরে কেবিন ক্রুরা মদ বিক্রি করেন। ওই যাত্রী ড্রাংক অবস্থায় আবারো মদ চাইছিল। তখন কেবিন ক্রু তার কাছে মদ বিক্রি করতে অস্বীকার করেন। এই অবস্থায় যাত্রীদের খাবার দিতে গেলে খাবারটি যাত্রী ছুড়ে ফেলে দেয়। তখন খাবারগুলো অন্য সিটে থাকা একাধিক যাত্রীর গায়ে লাগে। এক পর্যায়ে একজনের মুখে ঘুষি মারে । কাপড় টেনে ছিড়ে ফেলে। খারাপ আচরন করতে থাকে। পুরো ঘটনাটি ঘটে সিলেট এয়ারপোর্টে অবতরন করার প্রায় দুই ঘন্টা আগে উড়ন্ত বিমানে। পরে কেবিন ক্রুরা তাকে সিটের মধ্যে বেধে ফেলেন। মাতাল যাত্রীর লংকাকান্ডের ঘটনাটি আগেই টাওয়ারকে জানানো হয়। এয়ারক্রাফট অবতরন করলে তখন ওই যাত্রীকে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি তাকে স্থানীয় থানায় সোর্পদ করেন। এখন থানায় দেয়ার পর তাকে কি করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি আর কোন কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
গতকাল শনিবার সিলেট বিমানবন্দর থানার ওসি এস এম শাহাদাত হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের কাছে যাত্রীকে দেয়ার পর যাত্রীকে ওয়াশসহ যা যা করা দরকার তা করেই আদালতে চালান দেয়া হয়। তবে তার নাম মনে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তার বাড়ি সম্ভবত গোলাপগঞ্জ। এটি সিলেট শহরের বাইরে।

এরআগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, এক যাত্রী বিমানের ভেতরে চিৎকার করছেন। কেবিন ক্রুরা তাকে শান্ত করতে গেলে যাত্রী তাদের উপর চড়াও হচ্ছেন। তখন এক কেবিন ক্রু তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আই সে সিট ডাউন, ডোন্ট মুভ বলে সিটের পেছনে মুখ ঘুরিয়ে মোটা দড়ি দিয়ে তার দুই হাত কোমর দিয়ে পেচিয়ে বেধে ফেলেন। ওই অবস্থায় যাত্রী কেবিন ক্রুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, তুই আমারে মারছত, সিটে বাধা অবস্থায় মাথা দিয়ে তাকে আঘাত করার চেষ্টা করেন। এসময় পাশের সিটে বসা এক ভদ্র মহিলা অন্য যাত্রী বলতে শোনা যায়, ‘জানি না ব্যাটার কিতা হইছে, বেটা তো ড্রাংক। মত খায়্যা বেট্যা টাল’। এসময় চারপাশ থেকে পুরো ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করতে দেখা যায় অন্যদের। সিটেও যখন তাকে স্থির করা যাচ্ছিল না, তখন কেবিন ক্রুরা তাকে সেখান থেকে টেনে এনে চলাচলের ফ্লোরে ফেলে রাখেন দীর্ঘক্ষণ।

শনিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার শাকিল মেরাজ (জনসংযোগ) এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এধরনের ঘটনায় যে কোন সময় বড় ধরনের দুঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিমানে উঠার আগে প্রত্যেক যাত্রীকে তো আর ডোপ টেষ্ট করানো সম্ভব না। তবে কোনভাবেই যাতে যাত্রীরা বাইরে থেকে মদ নিয়ে না উঠতে পারে সেটির পাশাপাশি উড়োজাহাজের ভেতরে মদ বিক্রি বন্ধ করা যেতে পারে।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!