DMCA.com Protection Status
title=""

জনগনের পক্ষে থাকলে সংসদের বাইরেও বিরোধী দল হয়ঃ খালেদা জিয়া।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সংসদের ভেতরেই শুধু বিরোধী দল হয় না। সংসদের বাইরেও বিরোধী দল হয়। জনগণের পক্ষে কথা বললে, জনগণের পক্ষে নামলেই বিরোধী দল হয়।’ রোববার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর স্থাপিত ঢাকার নয় নম্বর বিশেষ জজ আদালতে নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানির সময় তিনি এসব কথা বলেন।

 

এদিন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ অপর আসামিদের চার্জ (অভিযোগ) শুনানি অব্যাহত থাকায় আদালত-পরবর্তী শুনানির জন্য ২১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। একই সঙ্গে মামলায় জব্দকৃত কিছু ডকুমেন্ট চেয়ে মওদুদ আহমদের আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান শুনানির ওই দিন ধার্য করেন।

দুপুর ১২টা ২২ মিনিটের দিকে কারাগারের ভেতর থেকে খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। এর দু’মিনিট পরই বিচারক এজলাসে এলে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।

প্রথমেই অসমাপ্ত চার্জ শুনানি শুরু করেন মওদুদ আহমদ। মামলার এজাহার ও চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) কিছু অংশ পড়ে শুনিয়ে তিনি বলেন, একবার বলা হচ্ছে আমি (মওদুদ আহমদ) নাইকোর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে মতামত দিয়েছি। আবার বলা হচ্ছে আমি মন্ত্রী হিসেবে মতামত দিয়েছি। তাই দয়া করে আমাকে সেই ডকুমেন্টগুলো দেখার সুযোগ দিন।

এরপর বিচারক মওদুদের উদ্দেশে বলেন, মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আপনাকে গত ধার্য তারিখে (৩ জানুয়ারি) আবেদন করার কথা বলা হয়েছে। আপনি করেননি। এর আগে গত বছরের ১৩ মে এক আবেদন করেছেন। ওই আবেদনের ওপর ওই বছরের ২ জুলাই শুনানি হয়েছে। এরপর আপনি হাইকোর্টেও গিয়েছেন। কিন্তু কোনো আদেশ আনতে পারেননি। মওদুদ আহমদ বলেন, সার্টিফায়েড কপি পেতে অনেক দেরি লাগবে। তাই ফটোকপি করে সার্টিফায়েড কপি দেয়ার অনুমোদন দেন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এফআইআর ও চার্জশিটের বিভিন্ন আলামত তিনি (মওদুদ) চাচ্ছেন। চাহিদা মোতাবেক ডকুমেন্ট সরবরাহ করা কঠিন। আমরা যে ডকুমেন্ট ব্যবহার করব, তা চার্জশিটে উল্লেখ আছে। আদালতে আমরা সেগুলো দিয়েছি। ১২ বছর ধরে সেগুলো আপনাদের কাছে আছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন বলেন, জব্দ তালিকায় যেসব আলামতের কথা বলা হয়েছে, তার সব আমাদের কাছে সরবরাহ করা হোক। এতে প্রমাণ হবে অভিযোগ সত্য না মিথ্যা। মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এগুলো চেয়ে এখন মামলার চার্জ শুনানি বিলম্বিত করতে চাইছেন। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তারা কিছু নেননি! এরপর বিচারক আবেদনের ওপর শুনানি হবে জানিয়ে চার্জ শুনানি চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন। মওদুদ আহমদ ফের চার্জশিটের কিছু অংশ পাঠ করেন।

একপর্যায়ে তিনি বলেন, বলতে কষ্ট লাগে, আজ আমরা বিরোধী দলে বলে এখন…। এ সময় তার দলীয় এক আইনজীবী বলেন, এখন তো বিরোধী দলেও নেই। এরপর মওদুদ আহমদ বলেন, ও তাই তো। আমরা তো বিরোধী দলেও নেই। এ পর্যায়ে খালেদা জিয়া বলেন, সংসদের ভেতরেই শুধু বিরোধী দল হয় না। সংসদের বাইরেও বিরোধী দল হয়।

জনগণের পক্ষে কথা বললে, জনগণের পক্ষে নামলেই বিরোধী দল হয়। এরপর কিছুক্ষণ শুনানি করে মওদুদ আহমদ দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে সময় চেয়ে আবেদন করেন। আবেদন গ্রহণ করে বিচারক অপর আসামিদের চার্জ শুনানি শুরুর আদেশ দেন।

মওদুদের পর আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী জাহিদুল ইসলাম কোয়েল বলেন, মামলার এজাহারে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের নাম ছিল না। দীর্ঘদিন পর তাকে আসামি করা হয়। শুধু সেলিম ভূঁইয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য তাকে আসামি করা হয়েছে। তাকে ২০০৭ সালে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেফতার করা হয়। তিনি নির্দোষ।

এরপর আসামি সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সিএম ইউছুফ হোসাইন নিজের পক্ষে নিজেই শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি দাবি করেন, তার কর্মকালে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়নি। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ ছাড়া তিনি কিছু করেননি। তার ওপর আরোপিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

আসামি সাবেক প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে সময় আবেদন করেন আইনজীবী এইউজে প্রিন্স। এরপর আসামি ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়ার পক্ষে তার আইনজীবী বলেন, সেলিম ভূঁইয়া সরকারি কর্মকর্তা নন। তিনি নাইকোর কোনো কর্মকর্তাও নন। মামলায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাকে অব্যাহতি দেয়া হোক।

এরপর গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে তাকে লক্ষ্মীপুর কারাগর থেকে আশপাশের কারাগারে স্থানান্তরের আবেদন করেন তার আইনজীবী।

শুনানির শেষের দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আমাদের অপর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার কাছে সব মামলার কাগজপত্র রয়েছে। এজন্য সময় প্রয়োজন। বিচারক বলেন, তিনি এখন বাসায় রয়েছেন।

এরপর মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আপনি (বিচারক) কি আমার কথা বুঝছেন না? বিচারক বলেন, কেন বুঝব না? আপনি স্পষ্ট বাংলায় বলছেন। আপনি তো হিন্দি কিংবা উর্দু ভাষায় বলছেন না। কেন বুঝব না! এরপর মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, তাহলে কেন বুঝছেন না? এরপর বিচারক তাকে সংযত হয়ে কথা বলতে বলেন। দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শেষ হয়।

এদিন আদালতে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে চিকিৎসার জন্য তাকে ৬ অক্টোবর বিএসএমএমইউ’তে নেয়া হয়। তিনি হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অপর মামলায়ও সাজাপ্রাপ্ত হন। সেখান থেকে ৮ নভেম্বর তাকে সরাসরি আদালতে হাজির করা হয়। চিকিৎসা শেষে বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!