DMCA.com Protection Status
title="৭

তালিকা হচ্ছে শত কোটি টাকার ঋণখেলাপিদের

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  শত কোটি টাকার ঋণখেলাপিদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ঋণ কারা নিয়েছেন, ঋণখেলাপি হওয়ার কারণ এবং তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের বিষয়ে তদারকি করা হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যাংকগুলোর জন্য চিঠি পাঠানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরে ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন নতুন অর্থমন্ত্রী।

একই সাথে তিনি ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় জোরালো পদক্ষেপ নেয়া, ঋণের সুদের হার কমাতে কম সুদে আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্র তৈরি এবং বেসরকারি খাতে ঋণের জোগান বাড়ানোর জন্য বিকল্প তহবিল সৃষ্টি করার পথ খোঁজার নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডেকে এসব নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

তার এই নির্দেশনা পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তারা খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর কী পরিমাণ তহবিল আটকে আছে, সেগুলো কিভাবে অবমুক্ত করে সচল করা যায় এই বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখছে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর বৈঠক হয়। বৈঠকে শত কোটি টাকার ঋণখেলাপিদের তালিকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, খেলাপি ঋণ কমানোর নানা দিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। চূড়ান্ত কৌশল এখনো প্রণয়ন করা হয়নি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ধাপে ধাপে সম্ভাব্য সব কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।

এরই অংশ হিসেবে শত কোটি টাকার ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ জন্য প্রতিটি ব্যাংককে চিঠি দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে শত কোটি টাকার ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করা হবে। ওই সব ঋণের সাথে কারা জড়িত তাদের বের করা হবে। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণ চিহ্নিত করা হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য এক ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর প্রকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে পৃথক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে উভয় ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র জানায়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম ভূমিকা রাখেন শত কোটি টাকার উপরের ঋণখেলাপিরা। এক একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের নামে শত শত কোটি টাকার খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করাকেই নিয়ম বানিয়ে ফেলছেন এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের নতুন কৌশল অবলম্বন করা হবে।

এর বাইরেও খেলাপি ঋণ কমানোর নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন অর্থমন্ত্রীর এক টাকাও খেলাপি ঋণ না বাড়ার ঘোষণা বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া বেশির ভাগ বড় বড় ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করছেন না। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংক থেকে যারা ঋণ নিয়েছেন, বেশির ভাগেরই একই অবস্থা।

ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপি ঋণ কমানো যাবে না। যদি আবারো ঋণ পুনর্গঠনের বড় ধরনের সুযোগ দেয়া হয় তাহলে হয়তো সাময়িকভাবে খেলাপি ঋণ কিছু কমবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যেমনটি হয়েছিল ২০১৫ সালে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে ঋণ পুনর্গঠনের নামে ব্যবসায়ীদের আবারো ছাড় দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মন্দ ঋণ বেসরকারি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলো ব্যাংকের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অর্ধেক বা এর চেয়ে কম মূল্যে কিনে নেয়। এতে ব্যাংকের খাতায় খেলাপি ঋণ কমে যায়। আর বেসরকারি কোম্পানি ঋণখেলাপির জামানতকৃত সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আদায় করে। বিদেশের আদলে দেশের মন্দ ঋণ বেসরকারি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হতে পারে।

বর্তমানে কাগজ-কলমে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ রয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই মন্দ ঋণ বা আদায় অযোগ্য ঋণ। এসব ঋণ বেসরকারি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে যাবে। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে সময় সাপেক্ষ। এটা করা হলে খেলাপি ঋণ কমানোর স্থায়ী সমাধান হবে।

এককালীন ডাউন পেমেন্ট বাড়ানোর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাধারণত ঋণখেলাপিরা খেলাপির ওপর উচ্চ আদালত থেকে রিট করেন। অর্থাৎ ঋণখেলাপিকে সাময়িক সময়ের জন্য ঋণখেলাপি বলা যাবে না। উচ্চ আদালত থেকে খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে ব্যাংক থেকে আবারো নতুন করে ঋণ বের করে নিচ্ছেন। আবার নতুন করে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন।

এভাবে এক একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় ঋণখেলাপিরা যেন সুযোগ না পান সে জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। যেমন যারাই উচ্চ আদালতে রিট করবেন তাদের আগে খেলাপি ঋণের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। এভাবে আইন সংশোধন করলে ঋণখেলাপিরা আর সচরাচর উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন না।

প্রসঙ্গত গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকাই মন্দ। অর্থাৎ মোট খেলাপি ঋণের ৮৪ শতাংশই মন্দ। এর মধ্যে সরকারি ছয় ব্যাংক অর্থাৎ সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের রয়েছে ৪০ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। সরকারি এ ছয় ব্যাংকের মন্দ ঋণের হার তাদের মোট ৪৮ হাজার ৮০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৫ ভাগ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!