DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

আওয়ামী লীগে যোগ দিলে সংসদ সদস্য পদ হারাবেন সুলতান মনসুর!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। বাংলাদেশের সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির ইতিহাসে আলোচিত নাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জয়ী হয়েছেন সুলতান মনসুর। ভোট ডাকাতির অভিযোগে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির সিদ্ধান্ত, তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে না। কিন্তু নিজের পুরনো ঘর আওয়ামী লীগে ফিরতে চান ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর।

তিনি বলেছেন, গণফোরাম শপথের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে। আর নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলেও তিনি শপথ নেয়ার সিদ্ধান্তে তিনি অনঢ় থাকবেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যদি তাকে ডাকে তাহলে তিনি তা চিন্তা করবেন।

এরই মধ্যে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং পুরনো দলে ফিরতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এমনটাই বলেছেন মনসুরের ঘনিষ্ঠজনরা।  এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠেছে, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর যদি আওয়ামী লীগে ফিরে যান, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে কিনা।

সংবিধান অনুযায়ী, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। এ বিষয়ে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়- ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

এই বিষয়ে গণতান্ত্রিক আইন ছাত্র সমিতির কার্যকরী সভাপতি পুলক আশরাফ বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ মতে দল থেকে পদত্যাগ করলে সেই সাংসদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। তবে, সে যদি শপথ নেয় বা দল থেকে তাকে বহিস্কার করা হয় তাহলে কি হবে সে বিষয়ে বিস্তর কোন ব্যাখ্যা নেই। সংবিধানে বলা আছে, দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়ে সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তার আসন শূন্য হয়ে যাবে।

পুলক আশরাফ বলেন, শপথ নেয়া আর ভোট দেয়া এক বিষয় নয়। যদি তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যান এবং দলত্যাগ করেন তবে তার আসন শূন্য হবে কি না তেমন সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই। কিন্তু গণফোরাম তার বিরুদ্ধে গেলে হয়ত তার সদস্যপদ বাতিল হতে পারে। সেক্ষেত্রে তার আসনে পুনঃনির্বাচন করতে হবে। সেখানে তিনি আবারও চাইলে প্রার্থী হতে পারবেন।

এর আগে গত শুক্রবার (২৫ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় গণভবনে গিয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা সুলতান মো. মনসুর আহমেদ। সাক্ষাতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন।পরে খবর চাউর হয়, সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগে ফিরছেন। পুরনো ঘরে ফিরে শিগগিরই রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন তিনি।

এবিষয়ে সুলতান মনসুর বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্যানেল থেকেই আমি ভিপি নির্বাচিত হয়েছি। নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে নেতা বানিয়েছেন। ছাত্রলীগের প্যানেলকে নির্বাচিত করার কোনো দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব এলে তা অবশ্যই গ্রহণ করবো।’

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো আওয়ামী লীগ ছাড়িনি। আওয়ামী লীগ আমাকে বহিস্কারও করেনি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও পাস করে বেরিয়ে এসেছি আমি। আমার এলাকার যারা আমাকে নির্বাচিত করেছে, প্রথম কথা তাদের প্রতি আমার দায়িত্ব আছে। যে কারণে তারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।’

‘শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সেখানে তাদের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা, তাদের দাবি দাওয়া এবং তাদের ভোটাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াটাই হলো আমার প্রথম এবং মৌলিক কাজ। আমার সংসদীয় এলাকার লোকজনের যে চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষা এভাবেই আমার তাদের পক্ষে আমার ভূমিকা পালন করতে হবে।’

আপনি শেষ পর্যন্ত সংসদে যাচ্ছেন তাহলে? এমন প্রশ্নে ডাকসুর সাবেক এ ভিপি বলেন, ‘আমি যাবো না, কোনোদিন তো বলিনি। জনগণ যেহেতু আমাকে ভোট দিয়ে পাঠিয়েছে, আমার প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে আমার সংসদীয় এলাকার মানুষজন কি চায় তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। তারা একশত ভাগই চায় যাতে আমি তাদের দাবি দাওয়া এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করি। এটা হলো প্রাথমিকভাবে আমার সংসদীয় এলাকার মানুষজনের আকাঙ্ক্ষা।’

‘পরবর্তী পর্যায় হলো রাজনীতিক কমিটমেন্ট। সেটা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুদলীয় রাজনীতি ও বহুদলীয় সংসদীয় পদ্ধতিতে বিশ্বাস করতেন। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি বহুদলীয় সংসদ তখনই হবে যখন সংসদে সকল দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এটি আমার রাজনীতিক বিশ্বাসের দ্বিতীয় ধাপ। তৃতীয় হলো আমি এই দেশের মানুষের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার পক্ষে কথা বলতে চাই। কথা বলতে হলে যেখান থেকে কথা বললে মানুষের কাজ হবে বা মানুষ সচেতন হবে সে জায়গাটি হলো জাতীয় সংসদ।’

জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ও গণফোরামের পক্ষ হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। আমি ঐক্যপ্রক্রিয়ার পক্ষ হয়ে কথা বলেছি। ঐক্যপ্রক্রিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আমি। কাজেই আমাকে বাদ দিয়ে তো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত হতে পারে না।’

‘গণফোরামের সঙ্গে যে বিষয়টি আমাকে স্বীকার করতে হবে, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া তো নিবন্ধিত দল না। এটি একটি প্লাটফর্ম। আমার নির্বাচন করতে হলে তো একটি নিবন্ধনকৃত দল লাগবে। কাজেই একজন বঙ্গবন্ধু অনুসারী হিসেবে আমার চিন্তার কাছাকাছি দল হচ্ছে গণফোরাম। সে কারণে গণফোরামের প্রার্থী হতে হয়েছে। এখন কোনো জায়গা থেকে শপথের ব্যাপারে বাধা নেই।’

ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি থেকে নির্বাচিত অন্য সংসদ সদস্যদের শপথের ব্যাপারে জানতে চাইলে সুলতান মনসুর বলেন, ‘তারা সংসদে যাবে কি যাবে না তাদের ব্যাপার। আমি তো আর বিএনপি করি না।’

আপনি কি আওয়ামী লীগে ফিরছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি তো কোনো দলে যোগদান করিনি। আওয়ামী লীগ তো আমাকে বহিস্কারও করেনি। আওয়ামী লীগ ছাড়া তো আমি অন্য দল করিনি কখনো। কাজেই দলে যোগদানেরও প্রশ্ন আসে না। আমি যে দল করতাম সে দল তো আমাকে বহিস্কার করেনি। আমিও অন্য দলে যোগদান করি নাই। আমি কি কথা বুঝাতে পেরেছি?’

শোনা যচ্ছে ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আপনাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে এমন প্রশ্নে সুলতান মনসুর বলেন, ‘এখনো কিছু বলা হয়নি তেমন। বলা হলে আমি দেখবো অবশ্যই। আমি তো আছিই। রাজনীতির মাঠেই আছি। আমি রাজনীতি ছাড়িনি বলেই ১২ বছর পরে হলেও নির্বাচন করেছি, তাই না? যদি কেউ মনে করে আমাকে দিয়ে কোনো কাজ হবে। সেটা যখন আমি জানবো এবং যখন আমাকে অবগত করা হবে তখন আমি বিবেচনা করবো। চিন্তা করবো।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!