DMCA.com Protection Status
title="৭

ওবায়দুল কাদেররা এখন আমাদের উপদেশ দেন, অথচ তাদের জন্মের আগে আমাদের রাজনীতি: মেনন

 ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনও কলঙ্ক লেগে থাকলে তা সব দল ও সবার গায়ে লেগেছে বলে মনে করেন ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটভুক্ত এই নেতা বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনী ইতিহাসে অনেক ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের কলঙ্ক যদি লেগে থাকে, তাহলে তা সব রাজনৈতিক দল বা সবার গায়ে লেগেছে।

সমসাময়িক রাজনীতি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৪ দলীয় জোট এবং মন্ত্রিত্ব পাওয়া, না-পাওয়া নিয়ে

একান্ত সাক্ষাৎকারে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন।

বিএনপি,জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং সরকারবিরোধী দলগুলো থেকে একাদশ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে….

রাশেদ খান মেনন: প্রত্যেকটি নির্বাচনেই এসব অভিযোগ ওঠে। যারা অভিযোগ করছে, তাদের একটি কথা বলতে চাই, ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়।

তারা ২০০৬ সালে ইট মেরে ছিল, সেটা কি ভুলে গেছে? কীভাবে আজিজ কমিশনকে দিয়ে ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল?

এবার তার একটা পাল্টা জবাব পেয়েছে। এখন এটা নিয়ে চিৎকার করে লাভ কী! গণতন্ত্রের কথা বলে লাভ নেই! তাদের মুখে গণন্ত্রের কথা শোভা পায় না!

আর অন্য যারা গণতন্ত্রের কথা বলছে, তারাও সুযোগ পেলে একই কাজ করতো। সেই ’৮৬ সালে বামরা, আমাদের কমিউনিস্ট পার্টিগুলো শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলে নির্বাচন করে নাই? সেই নির্বাচনে কী হয়েছিল, তা সবার জানা আছে।

এরশাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে কে কয়টা সিট পাবে, সবই তো ঠিক ছিল সেই সময়। সুতরাং বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে অনেক ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের কলঙ্ক যদি লেগে থাকে, তাহলে সব রাজনৈতিক দল বা সবার গায়ে কলঙ্ক লেগেছে।

 

বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা আওয়ামী লীগে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা নৌকা ছাড়া নির্বাচন করলে জয়লাভ করতে পারবে না।

রাশেদ খান মেনন: এগুলো মাতব্বরদের কথা!

বানরের হাতে মশাল দিলে সে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। এদের হাতে এখন মশাল পড়ছে, গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থা করছে। এই জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেব প্রতিদিন আমাদের উপদেশ দিচ্ছেন।

তাদের রাজনীতির জন্মের আগে আমাদের রাজনীতি। উনি এখন প্রতিদিন আমাদের উপদেশ দিচ্ছেন কী করতে হবে। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমাদের দল তো ১০ বছরের নয়।

এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে এই ঐতিহ্যের দল। পরবর্তীকালে এই দলে প্রচুর বিভক্তি হয়েছে। এই দলের প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি ছিল। পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে দলকে পুনর্গঠিত করি।

 

যেটা ১৯৮০ সালে এসে ‘ওয়ার্কাস পার্টি’ নাম দিয়েছি। তার আগে ১৯৭২ সালে ‘কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিন)’ নামে দলকে পুনর্গঠিত করেছি। তারপর থেকে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করছি।

সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই, ’আপনারা ৭৯ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেন নাই, তখন আমি পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়েছিলাম। আবার ’৯১ সালে আমি ‘কাস্তে-হাতুড়ি’ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি।

সুতারাং আমি আওয়ামী লীগের নৌকার বদৌলতে নির্বাচিত এমপি— এই কথা যদি কেউ ভেবে থাকেন, তাহলে ভুল। তবে ঢাকায় এসে, যেহেতু তিনি (শেখ হাসিনা) চেয়েছেন আমি ঢাকা থেকে নির্বাচন করি, আমি তার অনুরোধ রেখে নির্বাচন করেছি।

তখন ‘হাতুড়ি’ বা ‘নৌকা’ নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি।শেষমেষ  আমি ‘নৌকা’ নিয়ে নির্বাচন করেছি। তাছাড়া আমাদের দলের অনেকেই দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছে।

 

সুতারাং আমরা কোনও ভূঁইফোড় দল নই। কেউ কেউ বলছেন, আমরা আওয়ামী লীগে বিলীন হয়ে যাচ্ছি। আমরা মোটেও বিলীন হচ্ছি না, বরং আমাদের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দশম সংসদে ‘নৌকা’র পাশাপাশি ‘কাস্তে-হাতুড়ি’ নিয়ে আমাদের দলের ২ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। এবারও তারা (আওয়ামী লীগ) যদি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা না করতো, পীরগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে তারা প্রার্থী না দাঁড় করাতো আমরা জয়লাভ করতাম।

আগামী জুলাইয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির কংগ্রেস হবে জানিয়ে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, তখন আপনারা দেখবেন কত অঞ্চলে আমাদের সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটেছে!

এবারও আমরা আলাদাভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। যদিও আমরা জানি, এই নির্বাচনে কী হবে! তারপরও আমরা নির্বাচন করবো।

আপনি এখন ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাম নেতা হিসেবে বামপন্থী রাজনীতির দূরবস্থার কারণ কী মনে করেন?

রাশেদ খান মেনন: বাংলাদেশে বাম রাজনীতির দূরবস্থার বড় কারণ হচ্ছে, একটা হলো ’৬০ দশকে বিভক্তি; দ্বিতীয় হলো ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বামদের একটি অংশ পুরোপুরিভাবে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে।

যার ফলে সেই সময় আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, তাদেরও যে অর্জন সেটাও ম্লান হয়ে গেছে। এর পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিকভাবে বামপন্থী রাজনীতির চরম বিপর্যয় ঘটেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্যে দিয়ে।

১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মন্ত্রিত্ব না দেওয়ার কারণ কী মনে করেন?

রাশেদ খান মেনন: একটা কথা হলো, প্রথম থেকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগ সঠিকভাবে জোট চর্চা করেনি বা করতে চায়নি।

আমরা যেটা বারবার গত ১০ বছরে জোর দিয়ে বলেছি, আপনারা জোট চর্চা করুন। এই জোট চর্চার অপব্যবহারের কারণে একটি কেন্দ্রীভূত জায়গায় এসেছে,এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেই সমস্ত ক্ষমতা।

 

শুধু আমরা নই, আওয়ামী লীগের লোকজনও জানে না, কেন তাদের মন্ত্রিত্ব নেই? আমরা তো জানি না, কেন আমাদের মন্ত্রিত্ব নেই?

আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতাকে জিজ্ঞাসা করলাম ‘চিফ হুইফ’ কে হচ্ছে? বললো, ভাই, জানি না। সুতরাং এটা হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশে রাজনীতির পরিণতি, যেখানে ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।

সেই জায়গা থেকে প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন, আমাদের মন্ত্রিসভায় রাখার প্রয়োজন নেই। তাই রাখেননি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কে হবেন বা হচ্ছে তা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। এতে ভালো হয়েছে। এখন অনেক ফ্রি-ভাবে কথা বলতে পারবো সংসদে। ১৪ দলীয় জোটের ভবিষ্যত কী?

রাশেদ খান মেনন: আমি মনে করি, এখনও জোটের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রায়ই ১৪ দলীয় জোটের বিপরীতে কথা আসছে।

১৪ দলকে বিরোধী দলের যাওয়ার জন্য উপদেশ দিচ্ছেন তারা। আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রী সেটা অনুধাবন করবেন এবং জোটকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন। আর সেটা না হলে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। তবে এখন সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। দেখি কী হয়!

তাহলে ১৪ দলীয় জোট কি বিরোধী দলে যাবে?

রাশেদ খান মেনন: শুনুন, আমি নির্বাচন ও বক্তব্য দিয়েছি উন্নয়নের পক্ষে। আমি বক্তৃতা করেছি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পক্ষে। তাহলে এখন কীভাবে পাল্টা বক্তব্য দেবো?

আমি তো জাতীয় পার্টি না! আমাকে যদি এরশাদের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে ভুল করবেন। সকালে এক কথা বললো, বিকালে আরেক কথা বললো।

আমি ভোটের আগে উন্নয়নের কথা বললাম, এখন এর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলে তার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে?

আবার মন্ত্রিত্ব দিলে নেবেন কিনা?

রাশেদ খান মেনন: একসময় আমাকে মন্ত্রিত্বের জন্য ডাকা হয়েছিল, আমি যাইনি।

 

আবার সময়ের প্রয়োজনে মন্ত্রীও হয়েছি। এখন ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা পার্টির নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!