ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবশেষে দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য গত ১০ দিনে বহিষ্কার করা হয়েছে দলটির তৃণমূলের ১১০ নেতাকে। এদের অধিকাংশই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী। শুধু তাই নয় বিশৃঙ্খলার দায়ে বিলুপ্ত করা হয়েছে নীলফামারী জেলা কমিটিও।
এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া দলের ৫ প্রার্থীকেও সতর্ক করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয় তাদের বিরুদ্ধে এরা হাইকোর্ট থেকে বৈধতার রায় নিয়ে ভোটে অংশ নেন। ২ জানুয়ারি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের শোকজ করা হয়। জবাব পাওয়ার পর হাইকমান্ড তাদের সতর্ক করে।
৫ প্রার্থী হলেন- মানিকগঞ্জ-১ আসনের খন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু, নাটোর-১-এর কামরুন্নাহার শিরীন, ময়মনসিংহ-১-এর অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান, রাজশাহী-৫-এর অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও নওগাঁ-১-এ মোস্তাফিজুর রহমান।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের দায়ে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত, এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না।
এটা উপেক্ষা করে অনেকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া ৫ প্রার্থীকে শোকজের ব্যাপারে তিনি বলেন, শোকজের জবাব তারা দিয়েছেন। পরে তাদের সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ভোট ‘ডাকাতি’ ও ‘প্রহসনের নির্বাচন দাবি করে আসছে বিএনপি। ২৪ জানুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না।’ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি।
দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের পর এমনিতেই তৃণমূল হতাশার মধ্যে আছে। এর মধ্যে আবার দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অনেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে দলের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। তাতে দল আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সার্বিক বিষয় চিন্তা করেই এ কঠোর অবস্থান নিয়েছে হাইকমান্ড।
এ পর্যন্ত শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও অনেকের নাম কেন্দ্রে জমা পড়েছে। তাদেরও বহিষ্কার করা হবে। জানা গেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি বহিষ্কার করা হয়েছে ৯ জনকে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১০ জন, পহেলা মার্চ ১ জন, ৩ মার্চ ৮২ জন এবং মঙ্গলবার বহিষ্কার করা হয় ৮ নেতাকে। এদের প্রায় সবাই উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিএনপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, দলের সিদ্ধান্তের কথা আগেই সব সাংগঠনিক জেলাকে জানিয়ে দেয়া হয়। নির্দেশনা ছিল- যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের বহিষ্কার করা হবে। সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের নামের তালিকা জেলা কমিটিকে কেন্দ্রের কাছে জমা দিতে বলা হয়। পরে বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত আসে।
তিনি বলেন, কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার আবেদন করলে দলের হাইকমান্ড বিবেচনা করবে।
হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, কয়েকটি উপজেলায় কয়েকজন নেতা পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বহিষ্কারের আগে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা জানান, গত উপজেলা নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা নির্বাচন করেছেন। এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ দুঃসময়ে তুণমূল নেতাদের এতটুকু সুযোগ দেবে না দল? নইলে জনগণের সঙ্গে তাদের দূরত্ব আরও বাড়বে।
এদিকে বহিষ্কৃত ১০১ নেতার মধ্যে কয়েকজনকে অন্য কারণেও বহিষ্কার করা হয়। তাদের মধ্যে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাফি চৌধুরী ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা ইয়াসমিন পপি রয়েছেন।
কাউখালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এইচএম দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় জাতীয় পার্টির (জেপি) এমপিকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন কাফি চৌধুরী ও পপি। পরে তারা জাতীয় পার্টিতে (জেপি) যোগ দেন। এটি কেন্দ্রকে জানালে তাদের বহিষ্কার করা হয়। তারা স্বামী-স্ত্রী।
সদ্য বহিষ্কৃত বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহ আলম বলেন, আমি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। কারও পক্ষে ভোটও চাইতে যাইনি। তারপরও কেন বহিষ্কার করা হল জানি না। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। জিয়া পরিবার ও বিএনপির সঙ্গে সব সময় ছিলাম, থাকব।
এদিকে সাংগঠনিক জেলা শাখা নেতাদের নিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ধারাবাহিক মতবিনিময় সভা করছে বিএনপি হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে শনিবার মতবিনিময় সভায় ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলা নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে স্কাইপিতে মতবিনিময় সভায় নীলফামারী জেলার কোনো প্রতিনিধি অংশ না নেয়ায় ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
যদিও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সাংগঠনিক স্থবিরতা ও বিশৃঙ্খলার কারণে দলটির নীলফামারী জেলা কমিটি বিলুপ্ত করেছে বিএনপি। সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অতি শিগগিরই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। আহ্বায়ক কমিটি গঠিত না হওয়া পর্যন্ত নীলফামারী জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবিব দুলুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।