ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত ২০১৮ সালের মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়,বেগম খালেদা জিয়াকে ঐ নির্বাচনের বাইরে রাখতেই সাজা দিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়!
মানবাধিকার রিপোর্টের শুরুতেই বাংলাদেশের সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের কারচুপির বিষয়টি নিয়ে কড়া সমালোচনা করে বলা হয়, “বাংলাদেশে সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির হলেও ক্ষমতার সিংহভাগও প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে। শেখ হাসিনা গত ডিসেম্বরের প্রশ্নবিদ্ধ এবং একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেছেন। নির্বাচনটি অবাধ ও নিরপেক্ষ ছিলনা। নানাবিধ অনিয়ম, বিশেষ করে আগে থেকেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়, বিরোধী দলের এজেন্ট এবং ভোটারদের ভয়-ভীতির মতো ঘটনা ঘটেছে তাতে। হামলা- মামলার শিকার হয়েছেন বিরোধীদলের প্রার্থী ও সমর্থকরা।।” এতে বলা হয়, “প্রচারণার শুরু থেকে নির্বাচন পর্যন্ত নানান রকম হয়রানি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, বেআইনী গ্রেফতার এবং সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে। আর এ পরিস্থিতিতে স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ এবং প্রচারণা চালাতে পারেননি বিরোধী দলের প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের যেতে বাঁধা দেয়া হয়। ”
বিএনপি চেয়ারপারসন এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলা এবং সাজাকে রাজনৈতিক চক্রান্ত উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির কারণ দেখিয়ে ৫ বছরের সাজা দিয়েছে আদালত। তাঁর এই সাজায় তথ্য-প্রমাণের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতাকে দূরে রাখতে এটাকে রাজনৈতিক নীল-নকশা বলে মনে করেন তারা। বলা হয়, “তাঁকে (খালেদা জিয়াকে) জামিন দেয়ার ক্ষেত্রেও গড়িমসি করছে আদালত। এসমস্ত মামলায় যে কেউই দ্রুত জামিন পেয়ে থাকেন, কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তা একমাসের মতো সময় পিছিয়ে দেয়া হয়। মার্চের ১২ তারিখ যখনি হাইকোর্ট এ মামলায় জামিন দিলো তার পরপরই সুপ্রিম কোর্ট ২ মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়। অভিযুক্ত হবার ঘটনায় জামিন পেলেও অন্য মামলায় সরকার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রেখেছে।”
মিথ্যা অভিযোগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সরকার আটক করছে উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, “রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অপরাধে বাংলাদেশে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার এবং বিচারের মতো ঘটনা ঘটছে। জাতীয় নিরাপত্তার ধোঁয়া তুলে তাদেরকে মিথ্যা অভিযোগে আটক এবং বিচারের মুখোমুখি করা হয়। বছর জুড়ে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির হাজার-হাজার নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।”
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, “বাংলাদেশ সংবিধানে জীবনের নিরাপত্তা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু সরকার এবং তার এজেন্সির হাতে মানুষ বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে তার অসংখ্য নজির রয়েছে।”
রিপোর্টে বলা হয়, “বছর জুড়েই সন্ত্রাস দমনের নামে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তাদের এই অভিযান, আটক সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এসব মৃত্যুকে দুই পক্ষের মধ্যে ক্রসফায়ারের ঘটনা বলে চালিয়ে দিয়েছে। র্যাব, পুলিশ কিংবা অন্য বাহিনীর সংগঠিত এসব ঘটনাকে সরকার বন্দুকযুদ্ধ, ক্রসফায়ার কিংবা পাল্টা হামলা বলে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছে!”
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ২০১৮ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট আজ বুধবার প্রকাশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্ট এর লিংকঃ