ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গণভবনে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের ভিপি নুরুলহক নুরু সহ নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের এ অনুষ্ঠান মঞ্চে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরু মঞ্চে ছিলেন । অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নব নির্বাচিতদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, কে ভোট দিল কে দিল না এটা বড় কথা নয়। যে নির্বাচিত হয়েছে, সে সব শিক্ষার্থীর জন্যই কাজ করবে। কে হলো কে হলো না সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।
ডাকসুর ভিপি পদে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের পরাজয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভিপি পদে আমাদের শোভন জয়লাভ করেনি। আমার কাছে আসলে আমি বলেছি যে জিতেছে তাকে অভিনন্দন জানাতে। ধন্যবাদ জানাই শোভনকে।
আমি তাদের পরিবারের সবাইকে চিনি। এটাই হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতিতে হারজিত তো থাকবেই। ডাকসু ও হল সংসদের নবনির্বাচিত নেতাদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে হাসিনা বলেন, ‘সাহস থাকা ভালো। তবে আন্দোলনে সুযোগসন্ধানীরা থাকে। তাদের ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে ছাত্রনেতাদের। তিনি বলেন, আমরা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব খুঁজি। আর ছাত্রজীবন থেকেই তা গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য স্কুল পর্যায়ে ক্যাবিনেট চালু হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আগে রাজনীতির পরিবেশ এত সুষ্ঠু ছিল না। এখন সুন্দর পরিবেশ ফিরে এসেছে। নেতৃত্ব তুলে আনতে এই ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডাকসু ও হল সংসদের নব নির্বাচিত নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, নুরুল হক নুরু, গোলাম রাব্বানী প্রমুখ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কোটা আন্দোলন করছে, যুক্তি দিয়ে আন্দোলনের বিষয়টি বলতে হবে। কিন্তু ভিসির বাড়িতে আক্রমণ, তার বেডরুম পর্যন্তু যাওয়া, ভিসির গাড়িতে আগুন দেয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। কোটা আন্দোলনের নামে এগুলো কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের সময়েও ভিসির বাড়ির সামনে অবস্থান-ধর্মঘট করা হতো। খুব বেশি কিছু হলে ভিসির বাড়ির ফুলের টবই ভাঙা হতো। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাবির ছাত্রী হলগুলোতে অস্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতে ঘুমোতে পারিনি।
যখন জেনেছি ছাত্রীরা নিরাপদে হলে ফিরে গেছে, তখন বিশ্রামে গিয়েছি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ডাকসু নির্বাচনে সংঘাতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপির আমল থেকে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল। ডাকসু নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের জন্য। আমরা সেটা করতে পেরেছি।
হাসিনা বলেন, এক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। গুলি-বোমা ছিল প্রতিদিনকার ব্যাপার। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে এক দলের নেতাকর্মীরা অন্য দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করতো। খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট। আমি ছাত্রলীগের হাতে কলম তুলে দিয়ে জবাব দিয়েছিলাম, অসির থেকে মসির জোর বেশি। সেটাই আমাদের প্রমাণ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে চিন্তা করলাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অস্ত্রের প্রতিযোগিতা কেন থাকবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো লেখাপড়ার জায়গা। তবে এখন এটা স্বস্তির যে, গত ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই। ২০০৮ থেকে ২০১৮ এই দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অস্ত্রের ঝনঝনানি হয়নি।’
এর আগে ডাকসুর নব নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে নিজের মায়ের ছায়া দেখতে পান বলে জানান। তিনি বলেন, আমি আড়াই বছর বয়সে মাকে হারাই। ছোটবেলায় আমার একজন স্কুল শিক্ষিকার মাঝে মায়ের ছায়া দেখতে পেয়েছি। এখন আরেকজনের মধ্যে আমি মাতৃত্বকে খুঁজে পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর মাঝে আমি মাতৃত্বের ছায়া খুঁজে পেয়েছি। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময়ের শুরুতে নুর প্রধানমন্ত্রীকে পা ছুয়ে সালাম করেন। প্রধানমন্ত্রীও তার মাথায়-কাঁধে হাত রেখে দোয়া করেন। বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্ব ও উন্নয়নকাজ বিশ্বে তাকে প্রশংসনীয় অবস্থানে নিয়েছে উল্লেখ করে ডাকসু কার্যকরে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন নুর।
অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ছাত্রলীগ সমর্থিত বিজয়ীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে গণভবনে যান। অন্যদিকে নুরুল হক নুর তার প্যানেলের অন্য বিজয়ী আখতার হোসেন একটি ভাড়া গাড়িতে গণভবনে যান। হল ও কেন্দ্রীয় সংসদের প্রায় আড়াই শতাধিক নির্বাচিত প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।