ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জাতির পিতা নির্বাচনের যে ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন তা চালু থাকলে এখন আর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না। তিনি যে উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছিলেন একদিন মানুষ এটা উপলব্ধি করতে পারবে। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, নারী বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা, কার্যনির্বাহী সদস্য সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আজমত উল্লাহ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আজকে নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা ওঠে। আর আমাদের বিরোধী দল বাকশাল বাকশাল বলে কথা বলে।
তারা কি ভেবেছিলেন, বঙ্গবন্ধু যে যে পদক্ষেপটা নিয়েছিলেন; একটা গণতান্ত্রিক ধারাকে শক্তিশালী করা এবং ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সেটা একান্ত দরকার ছিল।
কারণ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে এর আগে গণতান্ত্রিক ধারা ছিল না। তার পরিবর্তে বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন মানুষ যেন তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে। সে কারণে তিনি জাতীয় ঐক্য এনে নির্বাচনী একটা পদ্ধতি বের করেছিলেন। যেসব প্রার্থীদের পক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার করা হবে। যে ব্যক্তি যত বেশি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, শুধু সেই নির্বাচিত হতে পারবে। এই পদ্ধতিতে দুটি নির্বাচন হয় সেই সময়। একটা কিশোরগঞ্জে সেখানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের ভাই ভোটে দাড়িয়েও ভোট পাননি, একজন সাধারণ স্কুল মাস্টারকে ভোট দিয়েছিল ওখানকার মানুষ। তখন দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন।
তার সেই জাতীয় ঐক্যের ডাক আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক। শেখ হাসিনা বলেন, সমাজ বিপ্লবের পর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচনে যেন অর্থ আর লাঠি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য এই পদ্ধতিটা জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। এটা যে বাংলাদেশের জন্য কতটা উপকারের ছিল, এক সময় মানুষ ধীরে ধীরে এটা উপলব্ধি করতে পারবে। তিনি বলেন, আজকে নির্বাচন নিয়ে এত প্রশ্ন উঠতো না, এই পদ্ধতিটা বাস্তবায়িত হলে। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেয়া হয় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খুনি মোশতাক এসে আইয়ুব খানের পথ অনুসরণ করলো। মোশতাকের পতন ঘটলো আড়াই মাসের মাথায়। আসলো জিয়াউর রহমান।
জিয়া এদেশে ভোটের রাজনীতিটাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করলো। তার হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সেনাপ্রধান আবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়ে সে অবস্থায় নির্বাচন করার অর্থ সেনা রুলস ভঙ্গ করা এবং সংবিধান লঙ্ঘন করা। এই অনিয়মের প্রক্রিয়া চলতে থাকলো বাংলাদেশে।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান একটি দল গঠন করলেন বিএনপি নামে। দেখা গেল সেই দল সৃষ্টির পর থেকে যারা হাটতেও শিখলো না, চলতেও শিখলো না দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি পেয়ে গেলো। কেননা অ্বৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া তার ক্ষমতার বৈধতা পাওয়ার জন্য দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি নিয়েছিলেন। এই পদ্ধতি একের পর এক চলতে থাকলো। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনগণ উপলব্ধি করতে পারলো সরকার জনগণের সেবা করে। দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে কেবল আওয়ামী লীগের আমলে এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। ৮৪ ভাগ ভোট পড়েছিল। বিএনপি মাত্র ২৮টা সিট পায়।
২০১৪-এর নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা হয়েছিল, জনগণ প্রতিরোধ করেছিল। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসে। ২০১৪ থেকে ২০১৮, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সার্ভে রিপোর্ট; জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যত সার্ভে হয়েছিল। সেই রিপোর্টে এসেছে আমাদের এক দশকের উন্নয়ন কর্মসূচির কারণে, মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। এর বিপরীতে আমার যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, সেই যুদ্ধাপরাধীদের নিয়েই বিএনপি নির্বাচনে গেছে। শুধু তাই নয়, স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনে একটা দল নির্বাচিত হলে কে তাদের প্রধানমন্ত্রী হবে এটাও তারা দেখাতে পারেনি। কারণ হত্যাচেষ্টা-দুর্নীতির কারণে তাদের নেতারা হয় জেলে নয় পলাতক। সেই অবস্থায় নির্বাচন হয়েছে। জামায়াত একটা সিটও পায়নি। বিএনপি নামকাওয়াস্তে ভোট পেয়েছে। বক্তব্যের শুরুতে বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, অজপাড়া গায়ে জন্ম নেয়া শিশুটি স্কুলজীবন থেকে সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছে এবং কাজ করেছে।
আমার দাদা দাদী দুজনই সন্তানকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, সে ভালোবাসার তুলনা হয় না। স্কুলজীবন থেকেই সেই ছোট্ট শিশুকাল থেকে তার ভেতরে মানুষের কল্যাণ করার আকাঙ্ক্ষা সেই ছোট্টবেলা থেকেই প্রকাশ পেতো। যেটা আমার দাদীর কাছ থেকে গল্প শুনতাম। তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি আমার মাকে দেখেছি। আমার মা কোনো দিন কোনো অভিযোগ-চাহিদার কথা আমার বাবাকে বলেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তিনি একটি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, অনেক স্বপ্ন ছিল তার। আমাদের দুর্ভাগ্য ভাষা আন্দোলনের তার যে অবদান একসময় সে ইতিহাস হারিয়ে গিয়েছিল। আমাদের জ্ঞানী গুণীরা কখনো স্বীকার করতেন না এটা। ১৯৪৮ সালে তিনিই এটা শুরু করেছিলেন। এমনকি ৪৮-এর আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি বারবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ থেকে ২০২১ সাল মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি আমরা। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নিতে হতে পারে এই জন্মদিন থেকে। এখন থেকেই মুজিববর্ষের উদযাপনের প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের। কারণ তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এটা আমাদের সমুন্নত রেখে বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।