ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট- ২০১৮ প্রত্যাখ্যান করে অবৈধ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, এ নিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছে।
সোমবার বিকালে এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন এই অবৈধ মন্ত্রী। বলেন, দুটি বিষয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলন। প্রথমত নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার আপডেট। দ্বিতীয়ত: মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানানো। সংবাদ সম্মেলনে দ্বিতীয়াংশে মন্ত্রী ওই রিপোর্টের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, রিপোর্টটি বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার বরাতে তৈরি হয়েছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব কোনো অনুসন্ধান বা ফাইন্ডিংস ছিল না।
তিনি এক বাক্যে ওই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে বলেন, পুরো রিপোর্টটি আমি পড়েছি।
সেটি অনেক বড় রিপোর্ট। কিন্তু সেখানে এমন সব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে যার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পৃক্ততাই নেই। তাই আমি বলবো এটা বাংলাদেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই বেশি প্রযোজ্য। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টে নির্বাচন নিয়ে যা বলা হয়েছে, তা সত্য নয়। আমি নিউ ইয়র্কে ছিলাম, সেখানে দেখেছি নির্বাচনে ৭ পারসেন্ট ভোট পড়ে। আমাদের দেশে ৮০ ভাগ ভোট পড়ে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম না-কী সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে বিনা পয়সায় সরকারের প্রচারণা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন ছাপতে নাকি বাধ্য করা হয়। এটা কতটা সত্য আপনারাই (গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা) বিচার করেন। মন্ত্রী বলেন, আমরা বিজ্ঞাপনের ফি’র ভয়ে অনেক কিছু প্রচার করতে পারি না। মার্কিন রিপোর্টে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশির সমালোচনা করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এক স্টেট থেকে অন্য স্টেটে যেতে শুধু তল্লাশিই হয় না, গাছ এবং অন্যান্য অনেক কিছু তারা আটকে দেয়। তা ছাড়া আচমকা তল্লাশি চৌকি বসিয়ে জনমানুষ এবং যানবাহন চেক হয়। বাংলাদেশে তাদের মতো হয় না, তবে এখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এবং মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি হয়। এটা দোষের কিছু নয়। মন্ত্রী বলেন, মার্কিন রিপোর্টে বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে। গুয়ান্তানামো বে’তে কারা কীভাবে বন্দিদের ওপর নির্যাতন করেছে সেটা সারা দুনিয়া জানে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে আমরা বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। তাই, যে কেউ চাইলেই একটি রিপোর্ট তৈরি করতে পারেন কিন্তু রিপোর্টটি অবশ্যই ‘অবজেকটিভ’ হতে হবে। আমরা যেকোনো রিপোর্টকেই স্বাগত জানাবো যদি তা বাস্তবভিত্তিক ও নিজস্ব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে তৈরি হয়ে থাকে। মন্ত্রী বলেন, মার্কিন রিপোর্ট মূলত বিভিন্ন গণমাধ্যম ও এনজিও থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এসব তথ্যের বাস্তবতা পরখ করে দেখেনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, এটা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি রুটিন জব। তাই এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। মার্কিন রিপোর্টে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘জঙ্গি’ হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করার সমালোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, নানা কারণে শিক্ষকদের সঙ্গে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীদের এবং অন্যদের নানা ঘটনা ঘটে। সেদিনও যুক্তরাষ্ট্রে আমার একজন সাবেক সহকর্মীর সঙ্গে অনাকাঙিক্ষত এমন আচরণ হয়েছে। কিন্তু রিপোর্টে যেভাবে ড. জাফর ইকবালের ঘটনাটি উঠে এসেছে তা যথাযথ নয়।
আমরা মনে করি, ঘটনার পরপর সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিপোর্টটির বিভিন্ন ‘অসঙ্গতি’ তুলে ধরে বারবার বলেন, আমরা তথ্যনির্ভর, বস্তুনিষ্ঠ যেকোনো রিপোর্টকে স্বাগত জানাই। কিন্তু মার্কিন রিপোর্টে সে রকম কিছু নেই। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেন ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন ‘খুবই ভালো’ হয়েছে এবং ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই’ হয়েছে। গত ১৩ই মার্চ বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ওই রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বিশ্বের ২০০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করা হয়, যার মধ্যে বাংলাদেশ বিষয়ক স্বতন্ত্র অধ্যায়ও ছিল। প্রায় ৫০ পৃষ্ঠার বাংলাদেশ বিষয়ক ওই অধ্যায়ে নানা বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে মোটাদাগে ৩০শে ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে ‘বিবেচনার অযোগ্য’ বলে অভিহিত করা হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র উপস্থাপন করা ওই রিপোর্টে সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে বলা হয়, হয়রানি, ভয়ভীতি, নির্বিচার গ্রেপ্তার এবং সহিংসতার কারণে বিরোধী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণা চালানো বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রিপোর্টে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসন নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পেরেছে। কিন্তু একইসঙ্গে তাদের দেয়া হয়েছে ব্যাপক মাত্রার ‘দায়মুক্তি’। রিপোর্টে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও তাদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকার খুব কম ক্ষেত্রেই পদক্ষেপ গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, আগামী মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে যেতে পারেন।