ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মিথ্যা মামলায় অন্যায় ভাবে কারাবন্দী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন পেলে বিবেচনা করবে হাসিনা সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের এমন বক্তব্যকে বিএনপির প্রতি সরকারের তরফে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক মহল।
যদিও এতদিন দলটির নেতারা চেয়ারপারসনের মুক্তি চেয়েছেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জামিনে। তবে সরকারের তরফে এমন বক্তব্য আসার পর এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল সন্ধ্যায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন কথা বলিনি। আমরা যেটা বলেছি- সেটা হচ্ছে যে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য। আমরা জামিন পাওয়ার যোগ্য। কারণ যে মামলায় সাজা দিয়েছে সেখানে আমরা আইনগতভাবে জামিন পেতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘প্যারোলের ব্যাপারটা তো আমরা বলিনি।
এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সেটা দেখবো; আমাদের মধ্যে আলোচনা করবো।
তবে আমরা এখনও কোন সিদ্ধান্ত নিইনি।’ এদিকে প্রথম থেকেই বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দাবি করে আসছে বিএনপি। আর সরকারের তরফে সে দাবি অগ্রাহ্য করা হয়েছে বারবার। কারাগারে খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়লে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ মেনে কয়েকদিন আগে তাকে ভর্তি করা হয়েছে পিজি হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের কেবিন ব্লকে চিকিৎসাধীন। কিন্তু বিএনপির তরফে এ হাসপাতালে তার চিকিৎসা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বারবার।
গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে কমরেড মনি সিং মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চতুর্থ জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি বলেন- ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ সরকার নিয়ন্ত্রিত হাসপাতাল। সরকার যেভাবে চাইবে সেভাবেই হাসপাতালকে কাজ করতে হবে।
এ ধরণের একটি হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুষ্ঠু ও সঠিক চিকিৎসা হতে পারে বলে আমরা মনে করি না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অনুরোধ করলেও সরকার সেটা অগ্রাহ্য করেছে। তারা তাদের পছন্দমতো বিএসএমএমইউ হাসপাতালেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য নিয়েছেন। বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসা না দিয়ে মানবাধিকার বিবর্জিত কাজ করছে সরকার।’
দলীয় চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এমন পর্যায়ে গেছে যে, এখন তিনি হাঁটতে পারেন না, কোনো কিছু খেতে পারছেন না।’ ওদিকে জামালপুরে বাহাদুরাবাদ ঘাট নৌ থানার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন- ‘প্যারোল পেতে হলে তাকে একটি সুনির্দিষ্ট কারণ দর্শিয়ে আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। তিনি আবেদন করলে আমরা তখন চিন্তা করব।’ এ সময় খালেদার জিয়ার জন্য প্যারোলে মুক্তির কোনো আবেদন এখন পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পায়নি বলেও জানান তিনি। এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের পর ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
পরে সে মামলায় সাজার পরিমান বাড়িয়েছে উচ্চ আদালত। ইতিমধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায়েও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজা ঘোষনা করেছে নিম্ন আদালত। এছাড়া অন্য ৩৪টি মামলার মধ্যে তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চলছে দুই মামলায়। দলটির নীতিনির্ধারক ফোরামের কয়েকজন সদস্য বেশ কিছুদিন ধরে প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে বলে আসছেন আইনি লড়াই চালিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির আশা নেই। রাজনৈতিকভাবেই তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত প্যারোলে মুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলটির তরফেও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কেউ কোন কথা বলেনি।
তবে আইনী প্রক্রিয়ায় তার জামিনে মুক্তির অনিশ্চয়তা ও তার শারীরিক অবস্থার অব্যাহত অবনতির প্রেক্ষাপটে নতুন করে ভাবতে পারে বিএনপি। এমন গুঞ্জন চলছে রাজনৈতিক মহলে। সার্বিক পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যকে সরাসরি অস্বীকার করেননি বিএনপি নেতারা।