ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ প্রবল ভোটযুদ্ধে ব্যস্ত ভারতের রাজনীতিবিদরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। রাজ্যে রাজ্যে সংঘর্ষ, গুলি, ইভিএম ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ভারতের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ।
এ ভোটের লড়াই গিয়ে থামবে ২৩ মে। ভারত দখলে মোদি ও রাহুলের এ ভোটযুদ্ধকে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে মিল খুঁজে পেয়েছেন দেশটির রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজার। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে ক্ষমতা চলমান রেখেছে।
সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে বেশকিছু মিল দেখতে পেয়েছেন ভারতীয় পর্যবেক্ষকরা।
মূলত তারা বলছেন, ভোটে জয়লাভ করতে শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি কৌশল অনুসরণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
সেসব মিল নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেছে ভারতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে ‘হাসিনা: আ ডটারস টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের দুঃখ-বিষাদের কথা ফুটে ওঠে ছবিটিতে।
সিনেমাটির পরিচালক পিপলু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ ছবিতে আন্তরিক ভঙ্গিতে চিত্রায়ণ করেছেন বিভিন্ন ভূমিকায়। কখনও বঙ্গবন্ধুর মেয়ে কিংবা কারও বোন, কখনও একজন নেতা কিংবা সারা দেশের ‘আপা’ হিসেবে এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে তার ব্যক্তিসত্তাকে।
বিশ্লেষকরা সে সময় বলেছিলেন, ছবিটির লক্ষ্য ছিল ভোটের আগে বাংলাদেশিদের আরও বেশি শেখ হাসিনার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া।
একই প্রক্রিয়ায় ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে ভারতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র ‘পিএম নরেন্দ্র মোদি’।
ছবিটি আগামী ১২ এপ্রিল মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। ভারতে সাত দফা ভোটে মোদির এই বায়োগ্রাফি ভোটারদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে সে আলোচনায় ব্যস্ত ভারতের গণমাধ্যম ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
চলচ্চিত্র তারকাদের দলে ভেড়ানো
চলচ্চিত্র দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের পর চলচ্চিত্র তারকাদের দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো ছিল আওয়ামী লীগের আরেকটি কৌশল। সে কৌশলটিও লুফে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে রিয়াজ, ফেরদৌসের মতো রুপালি পর্দার অনেক তারকাই আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন। দলের মনোনয়নপত্র কিনতে ভিড় জমিয়েছিলেন শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, আকবর পাঠান ফারুকের মতো জননন্দিত তারকারা। তাদের স্বাগত জানিয়ে প্রচারণায় কাজেও লাগিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এসব নন্দিত তারকাদের কথায় সাড়াও দিয়েছেন ভক্ত-অনুরাগীরা।
একই কৌশল নিলেন নরেন্দ্র মোদি। ভোটব্যাংক বাড়াতে ভারতের জনপ্রিয় তারকাকে পুঁজি করেছেন মোদি। সম্প্রতি একঝাঁক বলিউড তারকার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মোদি।
বলি পরিচালক করণ জোহর ও রোহিত শেটি, অভিনেতা রণবীর সিং, রণবীর কাপুর, বরুণ ধাওয়ান ও অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গেছে মোদিকে। সে ছবি রীতিমতো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
ক্রিকেটারদের যোগদান
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ দেশের সেরা ক্রিকেট তারকা মাশরাফিকে আওয়ামী লীগে যুক্ত করেন শেখ হাসিনা। সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও যুক্ত হবেন বলে খবর রটে।
নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন মাশরাফি।
এদিকে ভারতের নির্বাচনে ভারতীয় ক্রিকেট তারকা গৌতম গম্ভীরকে নিজের শিবিরে যুক্ত করলেন নরেন্দ্র মোদি।
মোদির এমন সিদ্ধান্তকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার অনুকরণ বলেই মন্তব্য করছেন ভারতীয় রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
বিরোধী দলগুলো ‘ঐক্য’
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। এককভাবে আওয়ামী লীগকে ভোটে পরাজিত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল মিলে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গড়ে।
একই চিত্র দেখা গেছে এবারের ভারতের লোকসভা নির্বাচনে। নরেন্দ্র মোদিকে সরাতে ভারতের রাজনীতিতেও বিরোধীরা ঐক্য গড়ে তুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখে বারংবারই উচ্চারিত হয়েছিল শেখ হাসিনা দেশের ‘অতন্দ্র প্রহরী’। নির্বাচনী জনসভার বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেছেন, শেখ হাসিনা যা হারানোর ৭৫ সালেই হারিয়েছেন। নতুন করে হারানোর কিছু নেই তার। তিনি অকুতোভয়। তিনি দেশের ‘অতন্দ্র প্রহরী’।
একই রকম প্রচারে নেমেছেন নরেন্দ্র মোদি। ‘আমি চৌকিদার’ ঘোষণা দিয়ে যেন শেখ হাসিনার ‘অতন্দ্র প্রহরী’ ঘোষণাকে প্রতিধ্বনিত করলেন তিনি। ভোটের মাঠে দেশ রক্ষায় ‘চৌকিদার’ স্লোগানে মাতোয়ারা এবার বিজেপি।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা