ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দল মনোনীত একজন প্রার্থীর এমপি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে বিএনপি।
আজ রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানিয়েছে, বৈঠকে দলের পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। বিশেষ করে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
একই সঙ্গে জাহিদের বিষয়ে স্পিকার অথবা নির্বাচন কমিশনের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো চিঠি দেয়া হবে কিনা- তাও এই সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিএনপি নীতিনির্ধারকদের ধারণা, আগামী দু-একদিনের মধ্যে বিএনপি দলীয় আরো কয়েকজন প্রার্থী এমপি হিসেবে শপথ নিতে পারেন। তাই বৈঠকে থেকে নীতিনির্ধারকরা নির্বাচিতদের সঙ্গে আবারও কথা বলতে পারেন।
নির্বাচিতদের তরফে নেতিবাচক মনোভাব পাওয়া গেলে তাদের ব্যাপারেও নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজকের বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারেও আলোচনা হবে।
এদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ৬ জন ও গণফোরামের ২ জন এমপি নির্বাচিত হন। তবে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে ফলাফলসহ একাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু দলীয় ও জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথমে এমপি হিসেবে শপথ নেন গণফোরাম মনোনীত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। তারই পথ ধরে শপথ নেন গণফোরামের আরেক প্রার্থী মোকাব্বির খান। সুলতান মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও মোকাব্বিরের ব্যাপারে রহস্যজনকভাবে শোকজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল গণফোরাম।
এদিকে বিএনপির নির্বাচিতরাও শপথ নেবেন বলে গুঞ্জন চলছিল রাজনৈতিক মহলে। বিএনপির নির্বাচিতরা রাজধানীতে একত্রিত হয়ে চা-চক্রের নামে আলোচনাও করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের ডেকে সতর্ক করেছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যের পাশাপাশি মহাসচিবের কাছে তারা শপথ নিতে তাদের ওপর চাপের কথা তুলে ধরেছিলেন। সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে গত সপ্তাহে একটি বৈঠক করে সর্বসম্মতভাবে ঐক্যমত পোষণ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটি। তারপরও বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদে যাওয়ার পক্ষে তাদের তৎপরতা ও গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়া বন্ধ করেনি। মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির একটি অংশকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন ওই জেলা থেকে নির্বাচিত দুই নেতা হারুনুর রশীদ ও আমিনুল ইসলাম। সে বৈঠকে তাদের সংসদে যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এরই মধ্যে শপথ গ্রহণের নির্ধারিত সময়ের শেষপ্রান্তে এসে বৃহস্পতিবার এমপি হিসেবে শপথ নেন জাহিদুর রহমান। রোববার আরও দুইজন এবং পর্যায়ক্রমে মহাসচিব ছাড়া অন্য দুইজনও শপথ নেবেন এমন গুঞ্জন এখন জোরালো। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়া জাহিদুর রহমানও গণমাধ্যমকে বলেছেন, মহাসচিব ছাড়া অন্যরা শপথ নেবেন এবং তারা শপথ নেয়ার পর সবাই একসঙ্গে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবেন। বিষয়টি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে যেমন কিছুটা কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে, তেমনি বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের। এতদিনে ধরে বিএনপির নির্বাচিত নেতারা বারবার বলে এসেছেন তাদের ওপর এলাকাবাসীর চাপ রয়েছে। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছিল তাদের ওপর আসলে চাপ এবং তাদের সামনে টোপ আছে সরকারের। বিষয়টি গতকাল পরিস্কার করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির নির্বাচিতরা যেন শপথ নেন, সেজন্য সরকারের চাপ আছে।’ তিনি সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন- ‘সংসদে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত বিএনপির নেয়া ছিল, সেটাই বহাল আছে। এ বিষয়ে আর কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়। দলের সিদ্ধান্ত যারা ভাঙবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, বিএনপি যে নির্বাচন ও সংসদকে প্রত্যাখ্যান করেছে সে সংসদে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত এক বা কয়েকজনের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে একটি বিব্রতকর বিষয়। সংবিধানে এমপি পদ বাতিলের ব্যাপারে যে বিধি রয়েছে তার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করা কঠিন। দল থেকে পদত্যাগ না করায় এখন দল জাহিদুর রহমানের ব্যাপারে সাংগঠনিক শাস্তির বাইরে সংসদ সদস্যপদ বাতিলে কি উদ্যোগ নিতে পারে তা সংবিধান অনুযায়ী প্রায় অস্পষ্ট।
তার ওপর জাহিদুর রহমানসহ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা সরকারের সহায়তা পাবেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে শপথ নেয়ার সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন মর্মে কিছু যুক্তি দাঁড় করানো যাবে। সংসদ সদস্যপদ বাতিলের আইনগত সুযোগ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে। ওদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হলে দলীয় এবং জোটগত সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়েছে মোকাব্বির খান। গণফোরাম তাকে শোকজও করেছে। অথচ গতকাল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে তিনি কেবল উপস্থিতই ছিলেন না, পুরো কাউন্সিল চলাকালে বসার সুযোগ পেয়েছেন মঞ্চে। বিষয়টি সহজভাবে দেখছে না বিএনপি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনা। এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে মোকাব্বিরের উপস্থিতি নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করব না। কারণ এ নিয়ে এখনও দলীয় ফোরামে কোন আলোচনা হয়নি।